বাড়ির ভেতরটা স্যাঁতসেঁতে থাকলে আসবাব, পোশাক, ত্বক সবকিছুরই ক্ষতি
স্যাঁতসেঁতে ঘরে থাকা আসবাবপত্রে একপ্রকার শেওলা জন্মে আসবাবের ক্ষতি করে, কমিয়ে দেয় স্থায়িত্ব। এ ছাড়া ঘুণ বা বিভিন্ন রকমের পোকামাকড়ের উদ্ভব হয় স্যাঁতসেঁতে ঘরে, যা কাঠের আসবাবের আয়ুও কমিয়ে আনে।
একনাগাড়ে বৃষ্টি হলে দেয়াল, মেঝে, সিলিং কিছুই শুকানোর সময় পায় না। ভিজে থাকা দেয়াল, মেঝে ও ছাদের ভেতরে জমে যায় জলীয় বাষ্প। এই জলীয় বাষ্প বা ভেজাভাব শুধু দেয়াল বা ছাদ নয়, নষ্ট করে ঘরের আসবাবপত্রও। সেই সঙ্গে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ, জানান আকিজ কলেজ অব হোম ইকোনমিকসের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমাইয়া হোসেন। স্যাঁতসেঁতে ঘরে জন্ম নিতে পারে বিভিন্ন পোকামাকড় যেমন ছারপোকা, উইপোকা, তেলাপোকা ইত্যাদি।
ত্বকের সমস্যা
বর্ষাকালে রোদের অভাবে কাপড়চোপড় ভালোভাবে শুকানো যায় না। স্যাঁতসেঁতে বা ড্যাম্প ঘরে রাখা কাপড়ে সৃষ্টি হতে পারে বিভিন্ন রকমের ছত্রাক। ত্বকেও পড়ে যার প্রভাব। শেওলা জন্মানো কাপড় থেকে হতে পারে বিভিন্ন রকমের চর্মরোগ, জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজের চর্মরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আফসানা নাহিদ। তিনি জানান, যখন গরম পড়ে, তখন এই স্যাঁতসেঁতে দেয়াল থেকে ফাঙ্গাসগুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এই ফাঙ্গাসগুলো দাদ বা একজিমার মতো চর্ম রোগ ছড়ায়। আর আগে থেকেই যাদের চুলকানি–জাতীয় সমস্যা রয়েছে, তাদের সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
আসবাব দ্রুত নষ্ট হওয়া
স্যাঁতসেঁতে ঘরে থাকা আসবাবপত্রে একপ্রকার শেওলা জন্মে আসবাবের ক্ষতি করে, কমিয়ে দেয় স্থায়িত্ব। এ ছাড়া ঘুণ বা বিভিন্ন রকমের পোকামাকড়ের উদ্ভব হয় স্যাঁতসেঁতে ঘরে, যা কাঠের আসবাবের আয়ুও কমিয়ে আনে। আসবাবের পায়াতে রাবার ব্যবহার করা যেতে পারে। সোফার কুশন সব সময় শুকনা রাখার চেষ্টা করতে হবে। কাঠের আসবাবে সম্ভব হলে মোমের প্রলেপ, বার্নিশ বা অন্যান্য সুরক্ষামূলক আস্তর দিয়ে দেন। অন্যদিকে বোর্ডের আসবাবের ভেতর ও বাইরে নিয়মিত শুকনা কাপড় দিয়ে মুছতে হবে।
সম্ভব হলে আলমারির দরজা দিনের কিছু সময় খুলে রাখুন। এতে আলমারি ও কাপড় দুটিই ভালো থাকবে। আসবাবের বিভিন্ন ফাঁকা স্থানে কিংবা ফাটল ধরা জায়গাগুলো বর্ষার আগেই পুডিং দিয়ে ভরাট করে নিতে পারেন।
যাদের ঘরে চামড়ার সোফা আছে, তাদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। এই ধরনের সোফা প্রতিদিন মুছতে হবে। কারণ, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় চামড়ায় জন্ম নিতে পারে ফাঙ্গাস, ধীরে ধীরে নষ্ট করে ফেলতে পারে সোফা।
অনেক সময় দীর্ঘদিন দেয়ালের কোনো অংশজুড়ে ক্রমাগত পানি চুইয়ে পড়লে সে অংশ থেকেই ড্যাম্প ছড়াতে থাকে। এ জন্য ঘরের দেয়ালে পানি চুইয়ে পড়ার কারণ খুঁজে বের করে সেই সমস্যার সমাধান করুন। পানির পাইপে ফোটা বা ছিদ্র থাকলে সারিয়ে নেন। অনেক সময় দীর্ঘদিন কোনো আসবাব দেয়ালে ঝোলানো থাকলে সেখানেও স্যাঁতসেঁতে–ভাব তৈরি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কিছুদিন পরপর আসবাবের জায়গা পাল্টে ফেলুন। ড্যাম্পযুক্ত দেয়ালে কাঠের আসবাব না রাখাই ভালো।
চেষ্টা করুন ঘর যাতে দিনের বেশির ভাগ সময় খোলামেলা থাকে। বদ্ধ ঘরে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প বা আর্দ্রতা জমে দেয়ালে ড্যাম্প পড়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া বাজারে ‘মোল্ড রেজিস্ট’ রং পাওয়া যায়। এগুলো ঘরের দেয়ালকে ড্যাম্প পড়ার হাত থেকে দীর্ঘদিন রক্ষা করে।
অন্দরসজ্জায় ব্যবহার করা গাছগুলো বারান্দা বা ছাদে পাঠিয়ে দেওয়াই ভালো। এতে ঘরের স্যাঁতসেঁতে–ভাব অনেকটাই কমে আসবে। কারণ, গাছ অনেক জলীয় বাষ্প তৈরি করে, যা ফাঙ্গাস ও ফাঙ্গাসজনিত রোগ বাড়াতে পারে।
অনেক দিন আলমারিতে পড়ে থাকা পোশাক চট করে পরে ফেলবেন না। খুব ভালো হয় একবার রোদে শুকিয়ে নিতে পারলে। সম্ভব না হলে ইস্তিরি করে নেন। এতে ফাঙ্গাস চলে যায়, গন্ধটাও কাটে। আলমারিতে কাপড়ের ফাঁকে রাখুন কর্পূর। এতে আপনার কাপড় ঠিক থাকবে। বর্ষায় গাঢ় রঙের কাপড় বের করে মাঝেমধ্যে বাতাসে দিতে পারলে খুব ভালো হয়।