আপনার গড়া বাগান প্রতিবেশীর বিরক্তির কারণ হচ্ছে না তো

ছাদবাগান পরিষ্কার রাখতে হবে
ছবি: সুমন ইউসুফ

ইটপাথরের এই শহরে কমবেশি সবারই চাওয়া নিজের চারপাশটা সবুজে ঘিরে থাকুক। হোক সে ছাদবাগান কিংবা বারান্দার বাগান। তাতে নির্মল প্রকৃতির ছোঁয়া যেমন পাবেন, পাবেন অক্সিজেন-সমৃদ্ধ ফুরফুরে বাতাস। বাড়তি হিসেবে মিলবে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর মতো পুষ্টিকর ফল-ফসল উৎপাদনেরও সুযোগ। কিন্তু কথা হচ্ছে, বাগান করায় আপনার প্রতিবেশীর কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো? নানা কারণে বাগান করা সবার জন্য সহজসাধ্য হয়ে ওঠে না। এ ব্যাপারে পরামর্শ দিলেন ছাদবাগান ও নগর কৃষি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান গ্রিন সেভার্সের উপদেষ্টা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক মাহফুজ হোসেন।

আরও পড়ুন

১. একই ভবনে যখন অংশীদারত্বের ভিত্তিতে অনেকের বসবাস, তখন একজনের বাগান করা অন্য কারও ভালো না-ও লাগতে পারে। গাছের প্রাণ যে মাটিতে, বাগান করার জন্য সে মাটি তুলতে হয় ছাদে। সেই মাটির ভার বহন করার সক্ষমতা ছাদের আছে কি না, সে প্রশ্ন ওঠা জরুরি।

পরিমিত পানি দেওয়া উচিত, যাতে ছাদের মেঝের অতিরিক্ত পানি সহজে শুকিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়
ছবি: প্রথম আলো

২. মাটি তোলা শেষে গাছ রোপণ হলে চলে পানি দেওয়ার পালা। গাছ তো আর পানি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সব পানি শোষণ করার ক্ষমতা রাখে না। অতিরিক্ত পানি টবের ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে যায়। ফলে ছাদের মেঝেতে নামা সেই কাদাপানি অন্যের অপছন্দের কারণ হতে পারে। ফলে পরিমিত পানি দেওয়া উচিত, যাতে ছাদের মেঝের অতিরিক্ত পানি সহজে শুকিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। চাইলে প্রতিটি টবের নিচে ট্রে রাখতে পারেন, ফলে অতিরিক্ত পানি মেঝেতে না ছড়িয়ে ট্রেতে জমা থাকল।

আরও পড়ুন

৩. আবার কখনো কখনো স্প্রে করে পানি দেওয়ার সময় চারপাশে ছিটকে পড়ে। নিচের কোনো বারান্দায় কেউ কাপড় শুকাতে দিয়ে থাকলে ছাদে স্প্রে করা পানি সেই কাপড় ভিজিয়ে দিতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

গাছে পানির অভাব মনে হলে পর্যাপ্ত পানি দিন
ছবি: পেক্সেলস

৪. বাগান করার ফলে ছাদের খালি অংশ স্বাভাবিকভাবেই কমে আসে। অনেকে সকাল-বিকেল ছাদে হাঁটাহাঁটি করেন, কোনো এক কোণে বসার আয়োজন করেন। তাতে বাধা পড়লে কিছুটা অসন্তোষ কাজ করতে পারে।

৫. ছাদে কাপড় শুকান অনেকেই। কেউ আবার আচার শুকান, কেউবা কুমড়ার বড়িসহ নানা কিছু শুকাতে দেন। ছাদে বাগান করলে এসব কাজ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে, এ কারণেও অসন্তোষ দেখা দেয়। ফলে এসব বিবেচনা করে ছাদের কিছুটা খোলা অংশ ছেড়ে দিয়ে বাকি অংশের সর্বোত্তম ব্যবহার করে বাগান করুন।

আরও পড়ুন

৬. ছাদে ডালপালা মেলে ছড়িয়ে থাকা গাছের শুকনা পাতা অনবরত ঝরে পড়তে থাকলে প্রতিবেশীর বিরক্তির কারণ হতে পারে। ‘এসো বাগান করি’ গ্রুপের মডারেটর, উত্তরা সেক্টর ১০-এর বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলছিলেন একই কথা, ‘আমার প্রতিবেশীর ছাদের গাছ নিয়ে তেমন অভিযোগ নেই। যদিও আশপাশের সবাইকে দিয়েই ফল-ফসল খাই, তবুও তাঁদের অভিযোগ, বাসার সীমানায় থাকা আতাগাছের পাতা ঝরা নিয়ে। এ কারণে প্রতিবছর গাছের পাতা ঝরার আগমুহূর্তেই ডাল কেটে দিতে হয়।’

বাগান মানেই মশার বিস্তার নয়
মডেল: ইভা, ছবি: সুমন ইউসুফ

৭. অনেকের ধারণা, ছাদে বাগান করলে মশা হয়। ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে চোখ পড়ে বাগানের দিকেও। বাগান মানেই মশার বিস্তার নয়। মশা যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখলেই হয়। বাগানে পরিমিত পানি দিন। অতিরিক্ত পানি যাতে খুব বেশি সময় কোথাও জমে না থাকে, সেদিকে সব সময় খেয়াল রাখুন। বাগানে কোনো জলজ গাছ না রাখাই ভালো। একান্তই যদি কেউ পছন্দের শাপলা কিংবা পদ্ম রাখেন পানির পাত্রে, সে ক্ষেত্রে পানিতে যোগ করতে পারেন গাপ্পি মাছ। এই মাছেরাই মশার সব লার্ভা খেয়ে ফেলবে, মশার উপদ্রব হবে না।

আরও পড়ুন

৮. আবার হিংসা কিংবা অবুঝ শিশুর কর্মকাণ্ডের কথাও মাথায় রাখতে হয়। একই ছাদ চোখের সামনে থেকে ফল-ফসল উৎপাদন করতে দেখে কিছুটা হিংসাও কাজ করতে পারে কারও কারও। এ ক্ষেত্রে সহজ সমাধান হলো প্রতিবেশীদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে ফল-ফসল ভাগ করে খাওয়া। তাতে বাগানের প্রতি আলাদা ভালোবাসা কাজ করবে সবার মধ্যে। শুধু তা-ই নয়, বাগানে জন্মানো অতিরিক্ত চারা, গাছ ও ডালপালা দিয়ে প্রতিবেশীকেও বাগান করায় উৎসাহ দিতে পারেন। উৎসাহ পাক, বাগান বাড়ুক, সবুজে সবুজে ঢাকা পড়ুক এ শহরের প্রতিটি বাড়ির ছাদ।

আরও পড়ুন