যেমন রান্নাঘর এ সময় চাই
বাড়ির সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো রান্নাঘর। অথচ, সব সময়ই এই রান্নাঘরের প্রতি একটা উপেক্ষা দেখা যায়। একটা সময় তেল-কালি মাখা ওই ঘরে দিনের বেশির ভাগ সময়টাই কাটাতেন মা, চাচিরা। কিন্তু দিন বদলেছে। ব্যস্ত ছোট্ট সংসারে এখন রান্নার সময় যেমন কম, তেমনই পরিসর কমতে কমতে এখন খাবার-বসার ঘরের পাশে একফালি জায়গায় এসে ঠেকেছে রান্নাঘরের স্থান। এই ছোট জায়গাতেই এখন স্বামী-স্ত্রী মিলেই সেরে ফেলেন প্রতিদিনের রান্নাবান্না।
ঘরের সবচেয়ে জরুরি এই জায়গাটিকে সুন্দরভাবে ডিজাইন এবং সাজানোর জন্য সবাই এখন সচেতন বলে জানান স্থাপত্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান মেটামরফিক-এর স্থপতি ফারাহ মৌমিতা। একটি আদর্শ এবং আধুনিক রান্নাঘরের পাঁচটি অংশ থাকে-
প্যানট্রি
এখানে রেফ্রিজারেটরসহ অন্যান্য বয়াম, কৌটা, বক্স ইত্যাদি থাকে খাবারদাবার সংরক্ষণের জন্য।
স্টোরেজ
এখানে থালাবাসন এবং রান্নার অন্যান্য সরঞ্জাম থাকে।
বেসিন
এখানে সবজি, বাসনকোসন ইত্যাদি ধোয়া হয়।
প্রস্তুতি
এখানে শাকসবজি, মাছ-মাংস ইত্যাদি কাটা এবং প্রসেস করা হয়। সাধারণত একটা বড়সড় কাউন্টার অথবা অন্তত টেবিল থাকে এই অংশে।
রান্না
এখানে চুলা এবং ওভেন রাখা হয় রান্নাবান্নার কাজে।
রান্নাঘরের কেবিনেট কাঠ, মিডিয়াম-ডেনসিটি ফাইবারবোর্ড, হাইপ্রেশার লেমিনেট, অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর মতো বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। এই ক্যাবিনেট বা মডিউলে সাজানো রান্নাঘর মানসম্মত, টেকসই ও কার্যকরী।
রান্নাঘরের নকশায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আকৃতি ও আয়তন। যদি তুলনামূলক ছোট রান্নাঘর হয় যেখানে জায়গা কম, তাহলে সমান্তরাল নকশা করা উচিত। এতে কেবিনেটগুলো যেকোনো একপাশে বা উভয়পাশে থাকতে পারে, মাঝে অবশ্যই হাঁটাচলা ও প্রয়োজনে বসতে পারার মতো জায়গা থাকতে হবে। এমন রান্নাঘরে যদি অতিরিক্ত শেলফ বা প্ল্যাটফর্ম যুক্ত করা হয় অথবা খুব বেশি উঁচু করে কেবিনেট তৈরি করা হয়, তাহলে ঘিঞ্জি বা দমবন্ধ পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। তুলনামূলক বড় রান্নাঘরে ইংরেজি ইউ (U) বা এল (L) আকৃতির নকশা কাজে লাগানো যায়, যা বেশি সুবিধাজনক। যেকোনো নকশার শুরুতেই রান্নাঘরে থাকা বৈদ্যুতিক সুইচবোর্ডগুলো এবং প্লাম্বিং পয়েন্টগুলোর অবস্থান মাথায় রাখতে হবে। এসবের ওপর কেবিনেটের কোনো অংশ যেন সরাসরি না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত, এতে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, যেমন-ব্লেন্ডার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, টোস্টার প্রভৃতি ব্যবহারে সুবিধা হবে।
কিচেনের নকশায় যে দিকটির কথাও আমাদের অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে তা হলো ব্যবহারকারীর উচ্চতা। এদিকে যত্নবান হলে এর নিয়মিত ব্যবহারকারী কাজকর্মেও এক অন্যরকম স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবেন। এ জন্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন চুলা, কিচেন হুড, সিংকসহ পুরো রান্নাঘরেই ব্যবহারকারীর উচ্চতা ও তার ব্যবহার্য জিনিসপত্রের মাঝে সামঞ্জস্য থাকে।
বর্তমানে পাশ্চাত্যধারার সঙ্গে মিল রেখে অনেক বাসাবাড়িতে কিচেন আইল্যান্ড তৈরি করা হয়। এটি মূলত একটি গ্রানাইট বা মার্বেল পাথরের টেবিলাকৃতি অংশ যার আশপাশে টুল বা ছোট চেয়ার দিয়ে বসা যায়। ড্রাই কিচেন বা ওপেন কিচেনে এই টেবিল ব্যবহার করা যায়। অধিক স্থায়িত্বের জন্য গ্রানাইট ও মার্বেল পাথর দিয়ে কিচেন কেবিনেটের কাউন্টার-টপও তৈরি করা যায়।
রান্নাঘরের নকশা যেমনই হোক না কেন, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসার জন্য যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা থাকতে হবে। কেবিনেটের একদিকে এক্সজস্ট ফ্যান অথবা চুলার ওপরে কিচেন হুড লাগানো উচিত। এতে রান্নাঘরের গরম বাতাস বা ধোঁয়া দ্রুত বের হয়ে যেতে পারে, এতে চিটচিটে ভাবটাও বেশ খানিকটা কমে যায়। খোলামেলা রান্নাঘরের জন্য তুলনামূলক বড় আকারের জানালা রাখা যায়। এতে রান্নাঘরের পরিবেশ যেমন আলো বাতাস থাকবে, তেমনই এর সাজে নান্দনিক ভাবও আসবে।