শোবার ঘরে কেন প্রশান্তি আনা প্রয়োজন

শোবার ঘরের অন্দরের জন্য হালকা রং ভালো
ছবি: কবির হোসেন

সারা দিনের খাটাখাটনি শেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহমনের চাই বিশ্রাম আর ঘুম। প্রশান্তিদায়ক পরিবেশে ঘুম হয় ঠিকঠাক। প্রশান্তির আয়োজনে কিন্তু বাহুল্যের প্রয়োজন নেই। অন্দরের রঙের বিন্যাস এবং আসবাব ও অনুষঙ্গ বাছাইয়ের সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে অন্দরের পরিবেশ এনে দিতে পারে মানসিক প্রশান্তি।

অন্দরে প্রশান্তি আনার নানা উপায় জানালেন রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের প্রধান ও অন্দর সজ্জাবিদ গুলসান নাসরীন চৌধুরী।

শোবার ঘর নবদম্পতিদের জন্য একান্তই ব্যক্তিগত জায়গা
ছবি: কবির হোসেন

যেমন রঙের বিন্যাস

শোবার ঘরের অন্দরের জন্য হালকা রং ভালো। তাতে পরিবেশ হয় আরামদায়ক। ধরা যাক, সমুদ্রের নীল রংটাই বেছে নিলেন। তাহলে দেয়ালে ব্যবহার করুন এর হালকা শেড। বেড কভারের জন্য বেছে নিন এরই একটু গাঢ় শেড। বেড কভারটিতে থাকতে পারে এই গাঢ় শেড আর শুভ্রসাদা রঙের সমন্বয়ে হালকা কারুকাজ। অ্যাপ্লিক, হ্যান্ড পেইন্ট, প্রিন্ট, ব্লক বা স্ক্রিনপ্রিন্ট—নানাভাবেই বেড কভারে ফুটিয়ে তুলতে পারেন নকশা।

তবে বিছানার চাদর আর বালিশের জন্য সাদার শুভ্রতাই বেছে নিন। পর্দার জন্য আবার সমুদ্রের নীলেই ফিরে যান। হালকা ধরনের শেড বেছে নিন। দুটি পর্দার মধ্যে দিন শুভ্রসাদা রঙের পর্দা। এভাবে মোট পাঁচখানা পর্দা এক সারিতে সাজিয়ে দেখুন। অন্দরের রূপ বদলে যাবে। ঘরের ছাদ আর মেঝে সাদাই হোক।

একটি অনুষঙ্গ হোক আলাদা

ঘরের কোনো একটি অনুষঙ্গ হোক একেবারে ভিন্ন কোনো রঙা; হতে পারে সেটি একটি ল্যাম্পশেড কিংবা বাথরুমের সামনের পাপোশ। চাইলে ঘরের এক কোণে ছোট–বড় তিনখানা মোম রাখতে পারেন। হলুদ, কমলা আর লালের মতো উজ্জ্বল রঙের মোম বেছে নেওয়া যেতে পারে। এগুলো আবার সুগন্ধি মোমও হতে পারে। তাতে অন্দর যেমন হবে দৃষ্টিনন্দন, তেমনি সুবাসিতও থাকবে।

ঘরে কেবল প্রয়োজনের আসবাবগুলোই রাখুন
ছবি: অধুনা

প্রকৃতিতেই প্রশান্তি

প্রকৃতির খানিকটা ছোঁয়াও অন্দরে থাক। তাজা ও সাদা ফুল রাখুন, সঙ্গে সবুজ পাতার সজীবতা। রজনীগন্ধা কিংবা দোলনচাঁপায় প্রাকৃতিকভাবেই সুবাসিত করতে পারেন ঘর। সাদা বা গোলাপি কারনেশনও রাখতে পারেন। অন্দরের উপযোগী গাছ রাখতে পারেন। খোলা বারান্দা থাকলে সেখানেও গাছ লাগাতে পারেন। বারান্দায় হাসনাহেনার গাছ লাগালেও অন্দর হবে সুমিষ্ট ঘ্রাণে ভরপুর। মিষ্টি ঘ্রাণের অন্য কোনো ফুলের গাছও লাগাতে পারেন।

বাহুল্য আসবাবে নয়

শোবার ঘরে কেবল প্রয়োজনের আসবাবগুলোই রাখুন। তবে আরামের জন্য ডিভান কিংবা দুজন বসার উপযোগী একখানা আরামদায়ক সোফা রাখতে পারেন। আসবাবের ধারগুলো চোখা না হলেই ভালো। মসৃণ ও ঢেউখেলানো ধার রয়েছে, এমন আসবাব বেছে নিন।

শব্দে শান্তির খোঁজ

সাউন্ড সিস্টেমের সাহায্যে মিষ্টি শব্দরাশিতে ভরিয়ে তুলতে পারেন আপনার অন্দর। ধরা যাক, প্রাকৃতিক স্রোতোধারার হালকা একটা শব্দ আপনার ভালো লাগে। এমন শব্দ দিয়েই ঘরে সৃষ্টি করা যায় এক মায়াময় আবেশ। তবে এই শব্দ যাতে ঘণ্টা দু-একের ভেতর আপনা–আপনি বন্ধ হয়ে যায়, সেই ব্যবস্থাও রাখুন। এটুকুর বাইরে শোবার ঘরে ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। এমনকি টেলিভিশনও রাখবেন না।

ভালো ঘুমের জন্য প্রয়োজন সঠিক বিছানা–বালিশ
ছবি: প্রথম আলো

আলোকসজ্জা যেমন

বই পড়ার জন্য বিছানার পাশের টেবিলে একটা ল্যাম্পশেড রাখতে পারেন। চাইলে এমন ল্যাম্পশেডের ব্যবস্থাও করতে পারেন, যা ছাদ থেকে সুবিধামতো টেনে নামিয়ে নেওয়া যাবে বই পড়ার সময়, আবার রিমোট কন্ট্রোলারের মাধ্যমে উজ্জ্বলতা কমানো-বাড়ানো যাবে।

ড্রেসিং টেবিলের আয়নার কাছেও থাকতে পারে আলাদা আলোর উৎস। এমন ধরনের আলোক বিন্যাসে অন্দরের পুরো জায়গাটা সব সময় আলোকিত করার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অন্দরের প্রশান্তি বজায় থাকে।

তবে কখনো কখনো পুরো ঘরেও আলোর প্রয়োজন হতে পারে। তাই সুন্দর একটি টিউবলাইটও প্রয়োজন। ফলস সিলিং থাকলে সেখানেই হতে পারে আলোর ব্যবস্থা। ডিম লাইটের ব্যবস্থা করতে পারেন ঘরের এক কোণের নিচের অংশে, সেই কোণটায় রাখতে পারেন কিছু ‘ডেকোরেশন পিস’। অদ্ভুত আলোছায়ার মায়া সৃষ্টি করা যায় এভাবে।