যে ঘরে অতিথি আপ্যায়ন ও পারিবারিক আড্ডা দুটোই চলবে
অতিথিকে আপ্যায়িত করার জন্য বসার ঘরের বিকল্প নেই। অনেক বাড়িতেই দুটি বসার ঘর থাকে। একটি পারিবারিক, অন্যটি বাইরের অতিথিদের বসার জন্য। পারিবারিক বসার ঘরে পরিবারের সবাই অবসরে বসে টিভি দেখে, বই পড়ে, গান শোনে বা বিশ্রামের জন্য কিছুটা সময় কাটায়। কিন্তু সব বাসায় এমনটা সম্ভব না–ও হতে পারে। এখনকার শহুরে বাসাগুলোয় জায়গা ভীষণ কম। বাড়িতে একটি বসার ঘর থাকলে সেটা কীভাবে সাজাবেন, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন স্থাপত্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ডেপথ ওয়ার্কসের প্রধান স্থপতি ও ডিজাইনার রওনক উল জিসান।
বাড়ির বসার ঘরটি এমন একটি স্থান, যা আপনার ব্যক্তিত্ব, জীবনধারা, আরাম শৈলী ও রুচিকে প্রতিফলিত করে। আগেই বলেছি, বাসাবাড়িতে এখন জায়গা খুব কম। ফলে মনমতো ঘর সাজানোর সুযোগ থাকেই না, প্রয়োজনীয় আসবাবের জায়গা করাটাই মুশকিল হয়ে পড়ে। বসার ঘরটি যদি একটু বড় হয়, তাহলে দুপাশে দুই ধরনের বসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক পাশে কম উচ্চতার সোফা, এক কোণে টিভি। চাইলে কার্পেট, শতরঞ্জি বা শীতলপাটি দিয়ে মেঝেতে বসার ব্যবস্থাও করতে পারেন। এর ওপর ছোট-বড় কয়েকটি রঙিন কুশন দিন। জায়গা থাকলে ঘরের এক জায়গায় দোলনা ঝুলিয়ে তাতে কিছু বালিশ দিয়ে আরামদায়ক করে তুলুন। তাহলে জায়গাটিই হয়ে উঠবে আপনার ঘরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। আজকাল বাজারে নানা ধরনের, নানা উপাদানের দোলনা পাওয়া যায়।
অন্য পাশে স্বাভাবিক উচ্চতার সোফা রাখা যেতে পারে। সামনে সেন্টার টেবিল দিয়ে অংশটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সাজাতে পারেন। দুই অংশের সোফার কুশন ও আনুষঙ্গিক জিনিস একই রঙের না রেখে একই রঙের ধারায় রাখুন। তাহলে দেখতে আলাদা মনে হলেও বেমানান লাগবে না।
বসার ঘরের অনেকটা জায়গাই দখল করে নেয় সোফা। ফলে ঘরটাকে আর অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের উপায় থাকে না। এ সমস্যা এড়াতে বসার ঘরে নিয়ে আসতে পারেন নানা কাজের স্মার্ট সোফা। অতিথি আপ্যায়নের পাশাপাশি এসব সোফা কখনো শোবার জায়গা, আবার কখনো চা–পানের জায়গা হিসেবে কাজ করবে। ঘরটি একটু বড় হলে দেয়ালজুড়ে একটা বইয়ের তাক বানাতে পারেন। তাহলে টিভি দেখার পাশাপাশি এটি হয়ে উঠবে অবসরে বইপড়ার চমৎকার জায়গা।
ঘরে ছোট সদস্য থাকলে একটি কোনা তার জন্য রাখতে পারেন। ছোট আকারে তৈরি করুন একটি খেলাঘর, সেখানে রাখুন পুতুল, গাড়ি, ছোট একটি টেবিল, ছবি আঁকার সরঞ্জাম ইত্যাদি। পেইন্টিং, প্রাকৃতিক দৃশ্য বা ফুলেল ফ্রেম দিয়ে সাজাতে পারেন দেয়াল। থাকতে পারে বাংলার চিত্রশিল্প, দেশি লেখা বা চিত্রসমৃদ্ধ কোনো শিল্পকর্ম। নকশিকাঁথা বা নকশিকাঁথা থেকে অনুপ্রাণিত কোনো শিল্পকর্ম লাগিয়েও এই ছোঁয়া আনতে পারেন।
আপনার বাড়ির যেকোনো স্থানের পরিবেশকে বদলে দিতে পারে আলো। বসার ঘরটিকে সুন্দর দেখানোর জন্য একাধিক আলোর ব্যবস্থা করতে পারেন। থাকতে পারে পেন্ডেন্ট লাইট, ফ্লোর ল্যাম্প, টেবিল ল্যাম্প এবং ওয়াল স্কান্স। একটুখানি সবুজও বদলে দিতে পারে পুরো বসার ঘরের আবহ। পাথোস, লাকি ব্যাম্বু ধরনের গাছগুলো খুব কম যত্নে বেড়ে ওঠে। ঈদের আগে কিছু তাজা ফুল ফুলদানিতে সাজিয়ে যোগ করতে পারেন বাড়তি স্নিগ্ধতা। যে জিনিস দিয়েই সাজানো হোক না কেন, পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখলেই দেখতে ভালো লাগবে।