কেন বাসা বাড়ির লক সিস্টেম ডিজিটালের দিকে যাচ্ছে?
বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা সবচেয়ে জরুরি? নিঃসন্দেহে নিরাপত্তা। জীবনের নিরাপত্তা, সম্পদের নিরাপত্তা, প্রাইভেসির নিরাপত্তা। আর নিরাপত্তার একটি বড় অংশ দেখভাল করে দরজার তালা বা লক সিস্টেম। বাড়ির মূল প্রবেশপথের দরজার তালাটি এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বাসার নিরাপত্তার জন্য তিন ধরনের তালার ব্যবস্থা আছে। একটি হলো সনাতনী ছিটকিনি আর টিপ তালা। এফ আহমেদ আর্কিটেক্টস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রধান স্থপতি এইচ এম ফাহিম ফয়সাল আহমেদ জানান, ডিজিটালের এই যুগেও ছিটকিনির প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আস্থা সবচেয়ে বেশি। কেননা এটা ভেতর থেকে লক করা থাকে। বাইরে থেকে খোলা কঠিন। আগামী এক দশকে লক সিস্টেম যত আধুনিকই হোক না কেন, বাংলাদেশের বাসাবাড়িতে ভেতর থেকে ছিটকিনির ব্যবস্থাটা থেকেই যাবে, মনে করেন এই স্থপতি।
এ ছাড়া এখন বাজারে যে ধরনের টিপ তালা, লিভার লক (দুই পাশ থেকেই লক করা যায়) বা ডাবল–ত্রিপল লকের হ্যান্ডেল লক (দুবার বা তিনবার ঘুরে দুই বা তিনটা লক হয়) আছে, এগুলোই সাধারণত ব্যবহার করা হয় বেশি। তবে এই তালাগুলোর একটা বড় অসুবিধা হলো, চাবি থেকে সহজেই চাবি বানানো যায়। চাবির মাপজোখ স্ক্যান করে মেকারে কাটিং করে হুবহু চাবি বের করে ফেলা যায়।
তবে এর ভেতর কিছু তালা আছে, যেগুলো কপি করে নকল করা কঠিন। কিন্তু বিক্রেতারা সব সময়ই ‘এই তালার এই চারটা চাবিই পৃথিবীতে আছে। এগুলো কোনোভাবেই কপি করা সম্ভব নয়’ বলে বিক্রি করেন। ঢাকার কারওয়ান বাজারে তালার বাজার ঘুরেও এ রকম কথাই শোনা গেল। তবে এই লক সিস্টেমের সঙ্গে মূল ফটকে একটা মাস্টারলকও থাকে। গোল যে তালাটা আমরা সবাই চিনি। বর্তমানে গোল লক আর হ্যান্ডেল লক মিলেই মূল দরজা তথা বাসার নিরাপত্তাব্যবস্থার দেখভাল করছে।
লক সিস্টেমের ভবিষ্যৎ বলা হচ্ছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক, ফেস লক, নাম্বার লক প্রভৃতি। এই লকগুলো বাংলাদেশের বাজারে আছে। তবে এখনো খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায়নি। কেন? স্থপতি ফাহিম ফয়সাল বলেন, ‘একেবারে কেউ কিনছেন না, তা নয়। খুচরা ক্রেতারা কেনেন। প্রযুক্তি নিয়ে এখনো আমাদের ভেতর একধরনের ভীতি কাজ করে। যদি ফিঙ্গার লক বা ফেস লক কাজ না করে, তখন কী হবে? আবার নষ্ট হয়ে গেলে কোথায় যাবেন, কীভাবে ঠিক করাবেন, সেটাও একটা চিন্তার বিষয়। তবে তরুণদের প্রযুক্তিতে আগ্রহ আছে। তাঁরা যখন ভবিষ্যতে বাড়ির মালিক হবেন, তখন সেখানে এই ধরনের লক সিস্টেম বেশি থাকবে বলে মনে করি।’
কোন তালার কেমন দাম
গতানুগতিক লক: ছিটকিনি আর টিপ তালা। দাম ২০০ টাকা থেকে শুরু।
আধুনিক লক: লিভার লক, হ্যান্ডেল লক, গোল লক। দেড় হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজারে কেনা যাবে।
ডিজিটাল বা স্মার্ট লক সিস্টেম: ফিঙ্গারপ্রিন্টের লক, ফেস লক, নাম্বার লক। দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে শুরু।
বাংলাদেশের বাজারে যেসব তালা পাওয়া যায়, সেগুলো জিংক, পিতল, অ্যালুমিনিয়াম বা মিশ্র মেটাল। এগুলো সাধারণত চীনে তৈরি। অনেক সময় কোরিয়া বা ভারত হয়ে ইমপোর্টেড হয় তালা। টিপ তালাগুলোর দাম ২০০ টাকা থেকে শুরু হলেও একটু ভালো মানের কিনতে চাইলে হাজার টাকার মধ্যেই মিলবে।
অন্যদিকে স্মার্ট লুকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফেস লক বা নাম্বার লকের দাম সাড়ে তিন হাজার থেকে শুরু। তরুণ স্থপতি কৌশিক কুমার মজুমদার জানান, দেশে ক্রমে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ফিঙ্গার লক সিস্টেম। আগামী ১০ বছরের মধ্যে শহরের অনেক বাসাবাড়ির লক সিস্টেম ডিজিটালে চলে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ডিজিটাল লক সিস্টেমের ঝুঁকি খুবই কম। নাম্বার লকে আছে চার ডিজিটের পিন কোড, ফলে হাজারের বেশি কম্বিনেশনে আপনি লক করতে পারেন। ভালো মানের একটা স্মার্ট লক সিস্টেম লাগাতে আপনার খরচ হবে হাজার দশেক টাকা। এসব স্মার্ট লক সিস্টেম ব্লুটুথ, ওয়াই–ফাই বা জেড ওয়েভের মাধ্যমে বাড়ির ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। ফলে যেকোনো জায়গা থেকেই আপনি দরজা খুলতে বা লাগাতে পারবেন।