প্রাক্তনকে অপমান করার জন্য কথাটা বলিনি
রাস্তায় কোনো কুকুর দেখলেই আমার প্রাক্তনের কথা মনে পড়ে। কেউ আবার ভাববেন না যে তাকে অপমান করার জন্য কথাটা বলছি।
বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে আমরা শহরের অলিগলিতে হেঁটেছি। কখনো প্রখর রোদ, উদাস বসন্তে; কখনোবা ঝুম বৃষ্টি, কুয়াশামোড়া শীতার্ত বিকেলে। এই সময় পথে প্রাণীটিকে দেখলেই কেমন যেন মিইয়ে যেত সে। শঙ্কা আর উদ্বেগে কেমন যেন পাংশু হয়ে যেত তার শান্ত স্নিগ্ধ মুখ। সামান্য একটা কুকুর দেখে এত ভয় পাওয়ার কি আছে, বুঝতে পারতাম না। তখন বিরক্ত লাগত। আবার একটু পরেই তার এই বাচ্চামো দেখে ভালোও লাগত। ওই মুহূর্তে আমিই যেন তার ত্রাণকর্তা। তাড়ানোর কাজটা আমার জন্য অত্যন্ত সহজ, হাত উঁচিয়ে ‘হেই’‘হেই’ বললেই চলে যেত। এই নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ তার প্রতি আমার দায়িত্ববোধ আরও বাড়িয়ে দিত। মনে হতো, এই শিশু স্বভাব, কুকুরভীত মেয়েটি একান্তই আমার। তার সব দুঃখ, শোক, আনন্দ, বেদনার ভাগীদার শুধু আমি একা।
আমি তখন মজা করে বলতাম, আমার তো কুকুর পোষার খুব শখ। জব পেলেই বাসা নেব। তারপর বাঘের মতো গর্জে ওঠে, এমন কুকুর কিনব! বিয়ের পর তাহলে কী হবে! এরপর যা হওয়ার তা-ই হতো, নিরীহ এই প্রাণীই হয়ে উঠত আমাদের তর্কবিতর্কের বিষয়। এ নিয়ে তখন বাগ্বিতণ্ডা চলত অনেকটা সময়।
সেসব আজ অনেক দিনের কথা। এই মাঝ বয়সে এসে সেসব দিনের কথা ভাবলে অবাক লাগে। কী অদ্ভুত পাগলামিতেই না কেটেছে দিনগুলো। আজও মাঝেমধ্যে হাঁটতে বের হই, একা। অধিকাংশ সময় প্রয়োজনেই হাঁটি। কখনো কাজের জন্য, কখনো ব্যায়াম। মাঝেমধ্যে সময় পেলে যাই প্রিয় ক্যাম্পাসে, বসি স্মৃতিময় প্রিয় জায়গায়। এখনো রাস্তায় কুকুর চোখে পড়ে, কিন্তু এখন আর কেউ আমার পাশে দাঁড়িয়ে আঁতকে ওঠে না। ভয়ার্ত করুণ সুরে কেউ বলে না, ‘কুকুরটাকে তাড়াও, তাড়াও প্লিজ!’
মগবাজার, ঢাকা