ভিনদেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেব কীভাবে
তরুণদের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সুযোগ এখন অনেক। বৃত্তি বা ফেলোশিপের অধীনেও অনেকে নানা দেশে যাচ্ছেন। একটু খোঁজখবর রাখলে এ ধরনের সম্মেলন বা সামিটে যোগ দেওয়া সহজ হয়। এসবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শুধু যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়, তা–ই নয়, বরং ব্যক্তিগত দক্ষতা উন্নয়ন ও পেশাগত নেটওয়ার্ক তৈরিতেও কাজে লাগে। ইউনাইটেড নেশন ইয়ুথ অ্যাসেম্বলি, ওয়ান ইয়াং ওয়ার্ল্ড সামিট, জলবায়ু সম্মেলনসহ বিভিন্ন আয়োজন তরুণদের সামনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার পথ তৈরি করে। প্রশ্ন হলো, কীভাবে খোঁজ রাখব? কেমন করেই–বা অংশ নেব?
সম্মেলনের খোঁজ
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই ইউসুফ মুন্না বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। এখন নিজের সামাজিক উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন। বলছিলেন, ‘সামিটে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে সহশিক্ষা কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা থাকাটা খুব জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাব থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে এই অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। একই সঙ্গে যোগাযোগ ও নিজেকে প্রকাশের দক্ষতা আয়ত্ত করতে হবে। আমি মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সামিটে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। দুবাইতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৮-এও অংশ নিয়েছিলাম। এসব সম্মেলনের খোঁজখবর রাখতে ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে চোখ রাখতে পারেন। বড় সম্মেলনগুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকে। সারা বছরই এসব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য জানার সুযোগ হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্ম যেমন ফেসবুক, লিংকডইন থেকে বিভিন্ন সম্মেলনের আপডেট পাওয়া যায়। পরিচিত যাঁরা এ ধরনের সম্মেলনে আগে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকেও খোঁজ পাবেন।’
সম্মেলনের খোঁজ রাখার বেশ কাজের একটি ওয়েবসাইট—www.youthop.com। চাইলে ইয়ুথঅপ-এর অ্যাপও মুঠোফোনে ইনস্টল করে নিতে পারেন। বিভিন্ন সম্মেলনের খোঁজ রাখতে চাইলে গুগলের মাধ্যমে ‘গুগল অ্যালার্ট’ সেবাও চালু করে নিতে পারেন। নতুন কোনো সম্মেলনে সুযোগ তৈরি হলেই সে ক্ষেত্রে নিয়মিত ই–মেইল চলে যাবে আপনার কাছে।
সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি
একেক সম্মেলনে অংশ নেওয়ার নিয়ম একেক রকম। কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়, এ প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সাফায়েত জামিলের সঙ্গে। সম্প্রতি তিনি জাতিসংঘের সামিট অব দ্য ফিউচারে অংশ নিয়েছিলেন। জামিল বলেন, আবেদন জমা দেওয়ার কাজটা খুব মনোযোগ দিয়ে করতে হয়। আবেদনপত্রে পেশাগত দক্ষতা, স্বেচ্ছাসেবী কাজের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি আপনি কেন সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী, তা-ও তুলে ধরতে হবে। এখন অনেক সামিটে আবেদনের সময় নিজের আগ্রহের কথা ভিডিও করে জমা দিতে হয়। তাই যোগাযোগের দক্ষতা, ইংরেজি ভাষায় সাবলীলভাবে নিজেকে প্রকাশের দক্ষতা—এগুলো জরুরি। আরেকটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্মেলনের অভিজ্ঞতা আপনি কীভাবে কাজে লাগাবেন, সেটা স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে। সব সম্মেলনে কিন্তু আবেদন করলেই অংশ নেওয়া যায় না। অনেক সামিটের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ থাকে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন। আবার নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোনীত হয়েও অনেক সামিটে অংশ নেওয়া যায়।
আগ্রহের সঙ্গে মিল
এমন সম্মেলনেই আপনার যোগ দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত, যার সঙ্গে আপনার পড়ালেখা, অভিজ্ঞতা কিংবা আগ্রহের যোগসূত্র আছে। যে বিষয় সম্পর্কে আপনার খুব একটা জানাশোনা নেই বা ভবিষ্যতেও কাজ করার ইচ্ছা নেই, সেই বিষয়ক সম্মেলনগুলোতে আবেদন করলে নেতিবাচক জবাব পাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। যেমন ধরা যাক, আপনি পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। নিজের ক্যাম্পাসে পরিবেশসংক্রান্ত কোনো সংগঠনে যুক্ত আছেন কিংবা পরিবেশসংক্রান্ত কোনো গবেষণা দলের সঙ্গে কাজ করেছেন। সে ক্ষেত্রে আপনি পরিবেশবিষয়ক বিভিন্ন সম্মেলনে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। আপনার আগ্রহের বিষয় যেকোনো কিছু হতে পারে। হোক সেটা প্রকৌশল, ব্যবসা, গবেষণা, এমনকি কার্টুন! আগ্রহের সঙ্গে মিলিয়ে কোনো না কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনের খোঁজ আপনি পেয়েই যাবেন। সম্মেলনের ওয়েবসাইটে অংশগ্রহণকারীর ‘এলিজিবিলিটি’ বা ‘যোগ্যতা’ অংশটি ভালো করে পড়ে দেখুন, আপনার সঙ্গে মেলে কি না। না মিললে একাধিক জায়গায় আবেদন করেও আপনি হতাশ হতে পারেন।
আরও যা যা প্রস্তুতি
অনেক সময় সম্মেলন থেকে আমন্ত্রণ পেয়েও কারিগরি কারণে অনেকে আটকে যান। তাই আগে থেকেই পাসপোর্ট, জাতীয়তার পরিচয়পত্রসহ ভ্রমণসংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি রাখুন। একটা খসড়া সিভি বানিয়ে রাখুন। বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বৃত্তি বা ফেলোশিপ থাকে। সম্মেলনের ওয়েবসাইট থেকে বা কর্তৃপক্ষকে ই–মেইল পাঠিয়ে বৃত্তির সুযোগ সম্পর্কে জানতে পারবেন। লিংকডইন বা ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজের অনলাইন পোর্টফলিও ধীরে ধীরে তৈরি করুন। আবেদন করার সময় এ ধরনের পোর্টফলিও আপনাকে আলাদাভাবে তুলে ধরবে।