‘একটা কথা বলবি না, কথা বললেই মেরে ফেলব’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় কিছু ছবি ঘুরেফিরে এসেছে বারবার। মোবাইলে, দেয়ালে এসব ছবিই হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের ভাষা, প্রতিরোধের প্রতীক, জুগিয়েছে আন্দোলনের ইন্ধন। পড়ুন এমন একটি ছবির পেছনের গল্প।

নাহিদুলের এই ছবিটিই ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেছবি: ইত্তেফাক

শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ঢাকার নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম। বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। ৩১ জুলাই ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে রাস্তায় নামলে হয়রানির শিকার হন তিনি। নাহিদুল জানালেন, সেদিন শতাধিক মানুষের র‍্যালি নিয়ে এগোচ্ছিলেন তাঁরা। হাইকোর্টের ঈদগাহ গেটের সামনে এলে পুলিশ তাঁদের পথরোধ করে। কয়েকজনকে আটকও করা হয়। শিক্ষার্থীদের ধীরে ধীরে মৎস্য ভবনের কাছে নিয়ে আসে পুলিশ। তখনো স্লোগান দিচ্ছিলেন নাহিদুল। এ সময় দুজন পুলিশ সদস্য নাহিদুলকে টেনে নিয়ে যেতে থাকেন, গালাগাল করতে থাকেন। একজন পুলিশ নাহিদুলের মুখও চেপে ধরেন। মুখ চেপে ধরা ছবিটিই পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, হয়ে ওঠে প্রতিবাদের ভাষা।

নাহিদুল বলেন, ‘আমি তাঁকে “স্যার” সম্বোধন করে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তিনি কোনো কথাই শুনছিলেন না। বলছিলেন, “তোমাদের ব্রেইন ওয়াশ হয়ে গেছে। তোমাদের ওপর জামায়াতের প্রেতাত্মা ভর করেছে।” আমি বলেছি, “কোনো প্রমাণ ছাড়া আপনি আমাকে ব্লেইম দিতে পারেন না।” একপর্যায়ে তিনি ভীষণ রেগে যান। বলেন, “একটা কথা বলবি না, কথা বললেই মেরে ফেলব।” তখনই আমার মুখ চেপে ধরেন।’

নাহিদুল অভিযোগ করেন, ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে তাঁকে কিল, ঘুষি, লাথি মারা হয়। পরে আইনজীবী মাহবুব উদ্দিনসহ কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী শিক্ষার্থীদের আটকের প্রতিবাদ জানালে চাপের মুখে নাহিদুল ও অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পুলিশের হেফাজতে ছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন

তবে মুক্তি পেলেও রেহাই মেলেনি। পরের ঝড় তাঁর পরিবারকে সহ্য করতে হয়েছে। নাহিদুল বলেন, ‘এলাকার স্থানীয় নেতারা আমার বাবাকে, ভাইদেরকে হুমকি দিতে শুরু করে। বলে, “ছেলেকে ঢাকায় পড়াশোনার নামে মাস্তানি করতে পাঠাইছিস।” তুইতোকারি করে কথা বলতে থাকে। আমার জন্য বাবাকে কখনো গালি শুনতে হয়নি। যেটা ২০২৪-এ এসে আমার পরিবারের সঙ্গে হলো। তাও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলার অপরাধে।’

নাহিদুলে ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই এই ছবি দেখে অনুপ্রাণিত হন। নাহিদ বলেন, ‘একজন স্বৈরাচারী শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে কাউকে না কাউকে সামনে এগিয়ে আসতে হয়। শহীদ আবু সাঈদ ভাইকেই দেখেন। আমিও তাঁর মতো হতে চেয়েছি। স্বৈরাচার তো ক্ষমতার অপব্যবহার করবেই। কিন্তু আমরা ঠিকই প্রতিবাদ করব—এমন ইচ্ছাশক্তি নিয়েই মাঠে নেমেছিলাম।’