নিউমোনিয়া মানে ফুসফুসের প্রদাহ। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাক—যেকোনো ধরনের জীবাণুর মাধ্যমে নিউমোনিয়া হতে পারে। শিশুদের যেমন নিউমোনিয়া বেশি হয়, তেমনি বয়স্ক ব্যক্তিদের এটা গুরুতর রোগ। প্রায়ই দেখা যায়, পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটি হঠাৎ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আবার এমন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন যে হাসপাতালের আইসিইউ পর্যন্ত নিতে হয়েছে।
ডায়াবেটিস, হাঁপানি বা ক্রনিক ব্রংকাইটিসে আক্রান্ত রোগী, যাঁরা কেমোথেরাপি নিয়েছেন বা ইমিউন মডুলেটিং ওষুধ খান, যাঁরা হাঁটা–চলা করতে পারেন না বা শয্যাশায়ী ব্যক্তিদের নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা বেশি। পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীরা খাবার ও পানি ঠিকমতো গিলতে পারেন না। এতে হঠাৎ খাবার পানি ফুসফুসে চলে গিয়ে বিপদ হয়। একে বলে এসপিরেশন নিউমোনিয়া। অনেক সময় শয্যাশায়ী বৃদ্ধ ব্যক্তির নিজের লালা ও কফ ফেলতে পারার অক্ষমতা থেকে তা শ্বাসনালিতে ঢুকে যায়, এ থেকেও নিউমোনিয়া হয়।
বাড়ির বয়স্ক মানুষটির যত্ন–আত্তির সময় নিউমোনিয়া প্রতিরোধের বিষয়টি বিশেষভাবে খেয়াল করতে হবে।
* তাড়াহুড়ো করে খাওয়াবেন না। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে খেতে বলুন। কখনোই শোয়া বা আধশোয়া অবস্থায় খাওয়া যাবে না। বসে বা পিঠে বালিশ দিয়ে উঁচু করে একটু একটু করে খাওয়ান। যদি খাবার গিলতে খুব সমস্যা হয় তবে জোর করে খাওয়ানোর চেয়ে বরং নাকে নল ব্যবহার করা যায় কি না চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। স্ট্রোকের রোগীদের ক্ষেত্রে এটা বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
* ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কি না খেয়াল করুন। সুগার বেড়ে গেলে সংক্রমণ বেশি হয়। বয়স্ক ব্যক্তিরা খেতে পারেন না বলে অপুষ্টির শিকার হন। সুষম সঠিক ক্যালরিযুক্ত খাবার পরিকল্পনা করুন। অনেক সময় রক্তে হিমোগ্লোবিন, আমিষ ও ভিটামিন কমে গেলে তা পূরণ করা সম্ভব।
* অসুস্থ ও বৃদ্ধ ব্যক্তির ঘরে হাঁচি–কাশি না দেওয়া, বাইরের লোকজনের বেশি প্রবেশ নিষেধ। হাত পরিষ্কার করে তাঁর সেবাযত্ন করতে হবে।
* বয়স্ক, দুর্বল ও অসুস্থ ব্যক্তিদের নিউমোকক্কাল ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা দিয়ে নেওয়া ভালো। এতে ঝুঁকি অনেকটাই কমে।
* জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, হঠাৎ চেতনা কমে যেতে থাকা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সামান্য সর্দি, কাশি, জ্বরও বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে।