প্রতিদিনের খাবারে জিংক

প্রতীকী ছবি

জিংক শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় এক খনিজ উপাদান। শারীরবৃত্তীয় অনেক কার্যক্রম পরিচালনায় জিংকের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। এটি রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা জোরদার করে। জিংকের ঘাটতি তৈরি হলে নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। এটি ক্ষত নিরাময়েও সাহায্য করে। শিশুর শারীরিক বৃদ্ধিতেও রয়েছে জিংকের বিশেষ ভূমিকা। এ ছাড়া এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে শরীরের জন্য ক্ষতিকর মুক্ত মৌলের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ফলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। জিংক শরীরের প্রায় ৩০০ ধরনের উৎসেচকের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। এসব উৎসেচক শরীরের বিপাক, হজম, স্নায়বিক কার্যক্রমসহ অসংখ্য কার্য সম্পাদন করে। আমাদের স্বাদ ও ঘ্রাণের অনুভূতির জন্যও জিংক দরকারি একটি উপাদান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শিশুর ডায়রিয়ায় জিংক গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে। এটি সাধারণ সর্দি–জ্বরের সময়কালও কমায়। জিংকের অভাবে হাড়ক্ষয় আর স্নায়ুবৈকল্য হতে পারে। এ সমস্যাকে বলে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি। জিংক পুরুষদের যৌন স্বাস্থ্যের জন্যও প্রয়োজনীয় এক উপাদান। কিন্তু শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় এই উপাদান শরীরে তৈরি হয় না। আবার তা শরীরে সঞ্চিতও থাকে না। কাজেই প্রতিদিনের খাবারে জিংকের সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি।

একজন পুরুষ ও নারীর দৈনিক যথাক্রমে ১১ ও ৮ মিলিগ্রাম জিংক প্রয়োজন। অন্তঃসত্ত্বা এবং সন্তানকে বুকের দুধ দেওয়া মায়েদের জিংকের চাহিদা আরও বেশি।

জিংকের উৎস

জিংকের অন্যতম উৎস হলো সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য খাবার যেমন কাঁকড়া, ঝিনুক, চিংড়ি, মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, বাদাম, শিম, মাশরুম ইত্যাদি। শাক–সবজিতে বিদ্যমান জিংক শরীর সহজে হজম করতে পারে না। সে জন্য নিরামিষভোজীদের অতিরিক্ত জিংক সরবরাহ করা প্রয়োজন। একজন পুরুষ ও নারীর দৈনিক যথাক্রমে ১১ ও ৮ মিলিগ্রাম জিংক প্রয়োজন। অন্তঃসত্ত্বা এবং সন্তানকে বুকের দুধ দেওয়া মায়েদের জিংকের চাহিদা আরও বেশি।

জিংকের ঘাটতির লক্ষণ

খাবারে পর্যাপ্ত জিংকের উপস্থিতি থাকলেও কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। যাঁদের অন্ত্রনালির রোগ যেমন ক্রোনস রোগ রয়েছে, যাঁরা নিরামিষভোজী, অন্তঃসত্ত্বা ও বুকের দুধ দেওয়া মা, শুধু বুকের দুধের ওপর নির্ভরশীল ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশু, ক্রনিক কিডনি কিংবা লিভারের রোগী, সিকল সেল অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত রোগী, অ্যালকোহলসেবী আর অপুষ্টিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জিংকের ঘাটতির ঝুঁকি বেশি।

জিংকের ঘাটতি দেখা দিলে শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। এগুলো হলো—

  • স্বাদ ও ঘ্রাণের অনুভূতি কমে যাওয়া

  • ক্ষুধামান্দ্য বা অরুচি

  • হতাশা ভাব

  • ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া

  • ডায়রিয়া

  • চুল পড়া ইত্যাদি।

তাই বলে চাহিদার অতিরিক্ত জিংক গ্রহণ করা যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। জিংকের আধিক্য কপার শোষণে বাধা দেয়। ফলে অ্যানিমিয়া হতে পারে। এ ছাড়া বমি ভাব, বমি, অরুচি, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, পাতলা পায়খানা দেখা দিতে পারে। আবার অনেকের ক্ষেত্রেই খাদ্যে প্রাপ্ত জিংকের পাশাপাশি অতিরিক্ত সরবরাহের প্রয়োজন পড়ে কখনো কখনো। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে জিংক ট্যাবলেট, সিরাপ অথবা লজেন্স দেওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, জিংকের ঘাটতি যেমন ক্ষতিকর, অতিরিক্ত গ্রহণও তেমন ক্ষতিকর।