কিছু ভালো না লাগার সমাধান

মানসিক স্বাস্থ্য মূলত মানসিক অবস্থা। মানসিক সুস্থতা বলতে বোঝায় ভালো আচরণগত অবস্থা। যেকোনো ধরনের উদ্বেগ থেকে মুক্ত থাকাও মানসিক সুস্বাস্থ্যের একটা বড় লক্ষণ। ঠিকভাবে চিন্তা করতে পারা জরুরি। এ ছাড়া উৎপাদনশীল সম্পর্কের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের যোগ রয়েছে।

গত কয়েক বছরে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা ও সামাজিক গুরুত্ব; দু–ই বেড়েছে। কিছু ভালো লাগছে না—এমন কথাকে আমরা বেশ অবহেলাই করি। মন খারাপ বা কিছু ভালো না লাগাও কিন্তু মনের অসুখ। যদিও মনের অসুখকে গুরুত্ব দেওয়ার মানুষ নেহাত কমই আছে। শারীরিক যেকোনো সমস্যার সমাধান আমরা যত দ্রুত করতে চাই, মনের অসুখের ক্ষেত্রে যেন ততটাই অলসতা। যেন মন শরীরের কোনো অংশই নয়! মন ভালো রাখার বা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কাজগুলো খুব বেশি কঠিন নয়। ভালো না লাগার যে সমস্যা, তার কিছু সমাধান জেনে নেওয়া যাক।

ভালো বন্ধুর সঙ্গ

একজন ভালো বন্ধু আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করতে পারে। জানেন কি, আপনার মনের সবচেয়ে কাছে যে পাঁচ মানুষের বাস, তাঁদের গড় করলে যেমন একটা মানুষ পাওয়া যাবে, আপনি ঠিক তেমন! অর্থাৎ যে পাঁচজন মানুষের সঙ্গে আপনার খুব বেশি যোগাযোগ, তাদের দারুণ প্রভাব পড়ে আপনার ওপর। তাই যাঁদের প্রভাব আপনার ওপর পড়ছে, তাঁদের হতে হবে ইতিবাচক ও সাহায্যপ্রবণ।

একজন ভালো বন্ধু আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করতে পারে
ছবি: প্রথম আলো

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট এ্যানি বাড়ৈ এই বিষয়ে সহমত জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আসলে সুখের বা ভালো লাগার অনুভূতির মধ্য দিয়ে যেতে পছন্দ করি। তাই মন খারাপ হলে আমরা সহজে তা মেনে নিতে চাই না, বরং এড়িয়ে যাই। এমন অবস্থায় প্রথম সমাধান হলো মনের অনুভূতিগুলো মেনে নেওয়া। কষ্ট পেলে, রাগ হলে, উদাস হলে প্রথমে নিজের সেই অবস্থাকে মেনে নিতে হবে। এরপর অবশ্যই কারণ বের করতে হবে। আর তার সমাধান করতে হবে।’

মন খারাপ হলে কী করব? এই প্রশ্নের উত্তরে এই সাইকোলজিস্ট বলেন, ‘অনেক সময় আমরা মন খারাপ হলে সঙ্গে সঙ্গে অন্য কিছু করে মনকে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করি। এতে হয়তো সাময়িকভাবে আমরা ভালো থাকি। তবে খারাপ লাগা কিন্তু আমাদের মনের মধ্যেই জমে থাকে। আর এভাবে জমতে জমতে একসময় তা বড় আকার ধারণ করে। তাই কারণ বের করে প্রয়োজনে বন্ধু বা কাছের কারও সঙ্গে মন খুলে কথাও বলা যেতে পারে। তাতে মনের চাপটা কমে যায়।’  

বন্ধুত্বের বিকল্প নেই
ছবি: প্রথম আলো

নিজের প্রয়োজন বোঝা


নিজের মনকে সুস্থ রাখতে প্রথমে নিজের প্রয়োজন বুঝতে হবে। নিজের ক্ষতি করে অন্যের ভালো করার আগে ভাবতে হবে। অন্যের অনুভূতিকে আঘাত না করেও নিজেকে ভালো রাখা যায়। অন্যের পাশে দাঁড়ানোও নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। নিজেকে নিজে সময় দিন। নিজের সঙ্গ উপভোগ করুন।

নতুন নতুন অভ্যাস গড়া


গঠনমূলকভাবে নিজের মনকে ভালো রাখতে হবে। মনের চর্চা করতে হবে। নিজের সুন্দর অভ্যাস ও শখকে গুরুত্ব দিন। অন্য কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়। কেননা প্রত্যেক মানুষ আলাদা। কারও সঙ্গে কারও তুলনা হয় না। নিজের চিন্তাকে সুন্দর রাখতে নতুন কাজের সঙ্গে যুক্ত হোন।

নিজেকে সময় দেওয়া


দিনের মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজটি আপনি তখনই করেন, যখন আপনি নিজেকে সময় দেন। মন ভালো রাখতে নিজের ভালো লাগার কাজগুলো করেন এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করেন। কারণ, সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নিজেকে জানা জরুরি। নিজের মনের যত্ন নেওয়া জরুরি। নিজের সঙ্গ উপভোগ করা জরুরি।

রাতে আট ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে
ছবি: প্রথম আলো

রাতে চাই আট ঘণ্টার গভীর ঘুম


রাতের পরিপূর্ণ ঘুম আপনার মনকে ভালো রাখবে। প্রয়োজনীয় ঘুম আপনার শেখার আগ্রহ বাড়াবে। দিনের এক–তৃতীয়াংশ সময় শরীরকে রেস্ট দিতেই হবে।


সময় পেলেই করুন ব্যায়াম


কিছু ভালো লাগছে না—এমন অনুভূতি হলে ব্যায়াম করতে পারেন। একটু হেঁটে আসতে পারেন। শারীরিক পরিশ্রম করলে ‘হ্যাপি হরমোন’ নিঃসৃত হয়। তা তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের ভালো অনুভব করায়। সাইকোলজি টুডে বলে, ব্যায়ামে শরীরে এন্ডোরফিন নামের হরমোন নিঃসৃত হয়; যা মানসিক চাপ কমায় ও মানসিক অবস্থার উন্নতি করে। তাই বলা হয়, ব্যায়াম নেতিবাচক আবেগ, যেমন উদ্বেগ, চাপ এবং কষ্ট কমাতে সাহায্য করে।