এই তিনটি যোগ মনকে শান্ত করে
কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ, সংসারের ভাবনা, নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ—এসব নিয়ে বেশির ভাগ মানুষই প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভোগেন। তবে শরীরের সমস্যা হলে যতটা ব্যাকুল হয়ে পড়ি আমরা, মনের যত্নে ততটাই উদাসীন। অথচ নিয়মিত বাসায় বসেই মনের যত্ন নেওয়া যায়। মন শান্ত রাখতে যোগব্যায়াম এক কার্যকর দাওয়াই। এখানে রইল তেমনই তিনটি ব্যায়াম।
বৃক্ষাসন
যেভাবে করবেন: দুই পায়ের পাতা পাশাপাশি এক জায়গায় রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ান। ডান পা তুলে বাঁ পায়ের ঊরুর ওপর এমনভাবে রাখুন যেন পায়ের পাতা নিচের দিকে ও গোড়ালি ঊরুর মূলে লেগে থাকে।
দুটো হাত শ্বাস নিতে নিতে মাথার ওপরে টান টান করে একসঙ্গে জোড় করুন। শ্বাসপ্রশ্বাস ধীরে ধীরে ও নিয়ন্ত্রণ রেখে ছাড়বেন এবং টানবেন। দৃষ্টি স্থির রাখার জন্য আই লেভেল বরাবর যেকোনো একটা বিন্দুতে তাকান। পুরো শরীর স্থির-নিশ্চল রাখার চেষ্টা করুন। দৃষ্টি সামনের দিকে থাকলেও মনোযোগ শ্বাসপ্রশ্বাসের দিকে ও মাটিতে রাখা ডান পায়ের পাতায় দিন। আসন থেকে নামার সময় শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ধীরে ধীরে হাত ও পা নামিয়ে ফেলুন। এরপর বাঁ পা তুলে ডান পা মাটিতে রেখে একইভাবে করুন।
সময়: ৩০ সেকেন্ড দিয়ে শুরু করে সাধ্য অনুযায়ী সময় বাড়ান। একটানা ৩ থেকে ৫ মিনিট থাকার চেষ্টা করুন।
সতর্কতা: একা এক ঘরে বা খোলা জায়গায় করুন। মনোযোগ ঠিক রাখতে আশপাশে যেন কেউ না আসে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
ভ্রামরী প্রাণায়াম
যেভাবে করবেন: সুখাসন বা সিদ্ধাসনে মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে দুই কান বন্ধ করুন। বাকি চারটা আঙুল দিয়ে চোখের পাতা এমনভাবে ঢাকুন যেন চোখের পাতায় আঙুলের স্পর্শ না লাগে।
ফুসফুস ভরে শ্বাস টেনে নিন। ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে শ্বাস ছাড়ার সময় মুখ বন্ধ রেখে কণ্ঠযন্ত্র থেকে ভ্রমরের মতো নিরবচ্ছিন্নভাবে শব্দ করতে থাকুন। এটা করার সময় মনোযোগ ভ্রুর মাঝে রাখুন। ভালো হয় রাতে ঠিক ঘুমাতে যাওয়ার আগে অথবা ঘুম থেকে ওঠার পরপরই করলে। এ ছাড়া যখনই মানসিক চাপ অনুভব করবেন, একটু মনোযোগ দিয়ে নিয়ম মেনে করলেই দেখবেন মন হালকা হবে।
সময়: যখনই করবেন, ১১ থেকে ২১ বার করুন।
উপকারিতা: মানসিক চাপ কমায়। নিয়মিত অভ্যাসে হতাশা দূর হয়। ঘুম গাঢ় হবে। রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
অনুলোম-বিলোম প্রাণায়াম
যেভাবে করবেন: সুখাসনে বা সিদ্ধাসনে সোজা হয়ে বসুন। বাঁ হাত কোলের ওপর খুব আরামদায়কভাবে রাখুন। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাকের ডান ছিদ্র চাপার জন্য ও মধ্যমা–অনামিকা নাকের বাঁ ছিদ্র চেপে বন্ধ করার জন্য ব্যবহার করবেন।
প্রথমে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে নাকের ডান ছিদ্র বন্ধ করে বাঁ ছিদ্র দিয়ে ধীরে ধীরে নিঃশব্দে শ্বাস টেনে নিন। ফুসফুস সম্পূর্ণ ভরে গেলে মধ্যমা ও অনামিকা দিয়ে নাকের বাঁ ছিদ্র বন্ধ করে বৃদ্ধাঙ্গুল সরিয়ে ডান ছিদ্র দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। আবার ডান ছিদ্র দিয়ে শ্বাস টেনে নিয়ে যান, ছিদ্র বন্ধ করে বাঁ ছিদ্র দিয়ে ধীরে ধীরে নিঃশব্দে শ্বাস ছাড়ুন। আবার বাঁ ছিদ্র দিয়েই শ্বাস ভরে নিন। এভাবে চক্রটি বারবার চলতে থাকবে। যখনই দম নেবেন, তখনই শুধু আঙুল পরিবর্তন ঘটবে। এটা মনে রাখলে আঙুল নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে না।
সময়: প্রতিদিন ঘুমানোর আগে শান্ত পরিবেশে কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ মিনিট অভ্যাস করুন।
উপকারিতা: যদি কখনো মানসিকভাবে খুব অস্থির লাগে বা মন খারাপ লাগে, তখন ধীরস্থিরভাবে বসে মনোযোগ শ্বাসপ্রশ্বাসের দিকে দিয়ে নিঃশব্দে অনুলোম-বিলোম করলে কিছুক্ষণ পরই মানসিকভাবে হালকা লাগবে। প্রশান্তির জন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে অনুশীলন করা জরুরি।
লেখক: যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক