১ মাস প্রতিদিন ১ গ্যালন পানি খাওয়ার পর তাঁর কী হলো

কানাডার সুফিয়ান মান উদ্যোক্তা, প্রকৌশলী, লেখক ও কনসালট্যান্ট। অর্থবিত্ত, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, সাধারণ জীবনদর্শন ইত্যাদি নিয়ে দারুণ সব লেখা লিখে হয়ে উঠেছেন পরিচিত মুখ। সুফিয়ান ৩০ দিনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে লিখতে ভালোবাসেন। এসব অনুপ্রেরণাদায়ী লেখা পড়তে পারেন সুফিয়ান মান ডটকমে ঢুকে। তো এরই ধারাবাহিকতায় সুফিয়ান প্রতিদিন ৩ দশমিক ৭৮ লিটার বা ১ গ্যালন পানি খাওয়ার চ্যালেঞ্জটা নিয়ে সম্পন্নও করেছেন। কিন্তু এরপর কী হলো?

কানাডার সুফিয়ান মান একজন উদ্যোক্তা, প্রকৌশলী, লেখক ও কনসালট্যান্ট
ছবি: সংগৃহীত

কেন ১ গ্যালন পানি

ইউএস ন্যাশনাল একাডেমিস অব সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিনের মতে, একজন পুরুষ প্রতিদিন ৩ দশমিক ৭ লিটার এবং একজন নারী ২ দশমিক ৭ লিটার পানি খেতে পারবেন। কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এর চেয়ে কম পরিমাণ পানি খেতেও বেশ বেগ পেতে হয়। সুফিয়ান মান প্রতিদিন ১ গ্যালন পানি খাওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন শুধু হাইড্রেশনের জন্যই নয়, এর মাধ্যমে এমন একটি অভ্যাসকে তিনি আয়ত্তে আনতে চেয়েছিলেন, যেটা তাঁর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।

শুরুর প্রস্তুতি

সুফিয়ান পানির পরিমাণটা ঠিক রাখার জন্য ১ গ্যালনের একটি পানির বোতল কিনে নেন। এরপর এটিকে নিজের দৈনন্দিন চলাফেরায় এমনভাবে কাছে রাখেন, যাতে বোতলটার দিকে চোখ পড়লেই যেন মনে পড়ে যায় নিজের চ্যালেঞ্জের কথা।

সপ্তাহ ১: সংগ্রাম শুরু

প্রথম সপ্তাহকে সুফিয়ানের কাছে মনে হয়েছে, তাঁর ওপর যেন রোলারকোস্টার চলছে। কারণ, ১ গ্যালন পানি খাওয়া ছিল তাঁর ধারণারও বাইরে। এ সময় তাঁর ভেতরে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। তা হলো—

শারীরিক: বেশির ভাগ সময় কেটেছে তন্দ্রাচ্ছন্নতায়। সেই সঙ্গে একটু পরপর তন্দ্রা ভেঙে যাওয়ার ব্যাপারটা বেশ বিড়ম্বনা হয়ে হাজির হয়েছিল।

মানসিক: দৈনন্দিন অভ্যাসের চেয়ে বেশি পানি খেলে স্বাভাবিকভাবেই ঘন ঘন টয়লেটে যেতে হবে। এ সময় মানিয়ে নিতে সুফিয়ানকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। বারবার এটাই ভেবেছেন, বেশি পানি খাওয়ার ফলে তাঁর কিডনি পরিস্রুত হচ্ছে।

হাইড্রেশনের লক্ষ্যপূরণ: শুরুতেই ১ গ্যালন পানি খাওয়া সুফিয়ানের জন্য মোটেই সম্ভব হয়নি। প্রথম কয়েক দিন ৩ লিটার পানি খেয়েছেন। পুরো ১ গ্যালন পানি খেতে পেরেছেন সপ্তম দিনে।

সপ্তাহ ২: মানিয়ে নেওয়া

দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে সুফিয়ানের শরীর মানিয়ে নিতে শুরু করে। এই সপ্তাহে এসে ১ গ্যালন পানি খাওয়ার ধারাবাহিকতায় বেশ উন্নতি করেন। এ সময় চার দিন ১ গ্যালন পানি খেয়েছেন আর তাঁর ত্বক আরও হাইড্রেটেড হয়ে ওঠে আর কম সময়ই তাঁর তৃষ্ণা পেয়েছিল।

সপ্তাহ ৩: হাইড্রেশন

তৃতীয় সপ্তাহটা ছিল সুফিয়ানের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। ১ গ্যালন পানি খাওয়া এ সময় নিয়মিত অভ্যাস হয়ে ওঠে। নিজেকে বারবার মনে করিয়ে দেওয়ার কোনো প্রয়োজনই হয়নি। নিজের কাজকর্মে একধরনের গতির দেখা পান। কারণ, এ সময় তাঁর ভেতরে একধরনের বাড়তি শক্তি কাজ করতে থাকে। পাশাপাশি সারা দিন নিজেকে বেশ প্রফুল্ল মনে হয়েছে। এটা সম্ভবত যথাযথ হাইড্রেশনের জন্য ঘটেছে। কারণ, হাইড্রেশনের সঙ্গে বুদ্ধিবৃত্তিক ক্রিয়াকলাপ ও মেজাজের সম্পর্ক আছে।

সপ্তাহ ৪: নতুন অভ্যাসের আবির্ভাব

৩০ দিনের চ্যালেঞ্জের শেষ সপ্তাহে এসে ১ গ্যালন পানি খাওয়ার ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করতে থাকেন সুফিয়ান। এ সময়ে এসে নিজের মধ্যে নতুন অভ্যাস লক্ষ করেন। অভ্যাসটা হলো নিজের ডেস্কে কিংবা মিটিংয়ের টেবিলে পানির বোতল রাখতে থাকেন এবং নিয়মিত তাতে চুমুকও দেন। এতে একসময় সুফিয়ানের ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল, নিজেকে আরও সতেজ অনুভব করতে থাকেন তিনি।

যেসব উপকার পেয়েছেন

সুফিয়ান ৩০ দিনই ১ গ্যালন পানি খেতে পেরেছেন, ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়। ১৮ দিন ১ গ্যালন এবং বাকি দিনগুলোতে ৩ লিটার পানি খেয়েছেন। এ সময় তিনি কী কী উপকার পেয়েছেন, তা জানিয়েছেন আমাদের—

১. দুপুরের অবসন্নতা কাটাতে সাহায্য করেছে এবং বিকল্প ক্যাফেইনের মতো কাজ করেছে।

২. কাজের সময়ে কখনো ক্লান্ত বা ডিহাইড্রেটেড মনে হয়নি। ফলে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়নি।

৩. ৩০ দিনের চ্যালেঞ্জ শেষে দেখা গেছে, সুফিয়ানকে বিরতি নিতে হয়েছে কম এবং কাজে পড়েছে ইতিবাচক প্রভাব।

৪. নিয়মিত পানি খাওয়ার অভ্যাসের কারণে হজমে উন্নতি ঘটেছে এবং শরীরের ফোলা ভাব কমেছে।

চ্যালেঞ্জ ও সমন্বয়

৩০ দিনের এই চ্যালেঞ্জ উতরে যাওয়ার সময় বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে সুফিয়ান মানকে। তা হলো—

১. শুরুতে ঘন ঘন টয়লেটে যেতে হলেও শরীর মানিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমে এসেছে।

২. শুরুর দিকে মানিয়ে নিতে অ্যালার্ম সেট করে রাখতে হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সব সময় নিজের কাছে একটি পানির বোতল রাখার অভ্যাস করতে হয়েছে।

৩. ঘুমানোর দুই ঘণ্টা আগে পানি খাওয়া বন্ধ করার অভ্যাসও গড়ে তুলতে হয়েছে। ফলে অবশ্য মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে টয়লেটে যাওয়ার প্রবণতাটা কমেছে।

আরও পড়ুন

শেখার যা আছে

১. রাতারাতি শূন্য থেকে ১ গ্যালন পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার কোনো প্রয়োজন নেই। সুফিয়ান লক্ষ্য ঠিক রেখে ধীরে ধীরে এগোনোকেই ভালো মনে করেন।

২. পানির গুণমানের বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। সুফিয়ান যেকোনো ধরনের দূষণ এড়াতে ফিল্টার করা পানি খেতে শুরু করেন।

৩. শরীরের কথা শুনতে হবে। কারণ, হাইড্রেশন অপরিহার্য, কিন্তু ওভারহাইড্রেশন ক্ষতিকর। তাই শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।

পরামর্শ

৩০ দিনের এই চ্যালেঞ্জ শেষে সুফিয়ান মান সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য হাইড্রেশন কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তবে আমাকে-আপনাকে প্রতিদিন ১ গ্যালন পানি খেতে হবে, ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয়। তবে নিজেদের স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জন্য সুফিয়ান মান দিয়েছেন চারটি পরামর্শ—

১. পরিমাপ ও সময় চিহ্নিত করা যায়, এমন একটি বোতল নির্বাচন করুন।

২. প্রতিদিন এক গ্লাস পানি বেশি খান এবং ধীরে ধীরে এর পরিমাণ বাড়ান।

৩. সকালে ঘুম ভাঙার পরই পানি খান। দিনের শুরুটা হবে দারুণ।

৪. অগ্রগতি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হাইড্রেশন অ্যাপ বা জার্নালের সাহায্য নিন।

সূত্র: মিডিয়াম ডটকম

আরও পড়ুন