এমবাপ্পের ফিটনেসের রহস্য কোন কোন ব্যায়াম ও খাবার
যখন বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরেছিলেন, তখনো এমবাপ্পের ২০ বছর পুরো হয়নি। বনে গিয়েছিলেন বিশ্বতারকা। গত বছর প্রায় একাই ফ্রান্সকে জিতিয়ে দিচ্ছিলেন তৃতীয় শিরোপা। অতিমানব মেসির জন্য তা করতে পারেননি। তবে জিতে নিয়েছিলেন সোনার বুট। দুজনেই এখন খেলেন একই ক্লাবে। প্যারিস সেন্ট জার্মেই। সেখানেও মেসির চেয়ে যেন এমবাপ্পেই বেশি উজ্জ্বল। বিশেষ করে তার ক্ষিপ্রগতি ও দুর্দান্ত শারীরিক যোগ্যতার জন্য। জেনে নিন কীভাবে তাঁর এই ফিটনেস ধরে রাখেন এমবাপ্পে।
এমবাপ্পের শরীরচর্চা
সবার জন্যই কিছু ব্যায়ামের কথা বলে দেন ক্লাবের প্রশিক্ষক। সেগুলো দিয়েই দিন শুরু করেন এমবাপ্পে। কিন্তু তাঁর নিজেরও ট্রেইনার আছে। এরপরই শুরু হয় তার প্রেসক্রিপশন এবং তাতেও পরিস্থিতি অনুযায়ী নিয়মিতই বদল আসে। কাজেই সুনির্দিষ্ট করে এমবাপ্পের শরীরচর্চার রুটিন বলা মুশকিল। তবে মোটা দাগে তার একটা ধারণা দেওয়া সম্ভব।
সাধারণত সপ্তাহে পাঁচ দিন ওয়েট ট্রেনিং করেন এমবাপ্পে। এর মধ্যে দুই দিন করেন লেগ ওয়ার্কআউট। এক দিন হয়তো ওয়ার্ম-আপ স্ট্রেচের পর ডেডলিফট (বারবেল বা বার তোলা), স্কোয়াট (হাঁটুতে ভর দিয়ে বসা ও দাঁড়ানো), ওয়াকিং লাঞ্জ (হাঁটু মেঝে পর্যন্ত নামিয়ে হাঁটা) ও লেগ এক্সটেনশন কার্ল (হাঁটু ভাঁজ করা ও সোজা করা)। অন্যদিন বারবেল ডিপ স্কোয়াট (বারবেল ঘাড়ে নিয়ে স্কোয়াট), বুলগেরিয়ান স্কোয়াট (এক পা পিছে উঁচু কিছুতে রেখে স্কোয়াট), গ্লুট কেবল কিকব্যাক ও সাইড গ্লুট কেবল কিকব্যাক (পা কেবল বাঁধিয়ে পিছে ও পাশে পা চালানো) এবং হিপ থ্রাস্টার্স (কোমরে রেখে বারবেল তোলা) করেন।
বাকি তিন দিন করেন মূলত মাসল গ্রুপের ওয়ার্কআউট। এক দিন থাকে শোল্ডার অ্যান্ড ডেল্টস ডে। সেদিন করেন ডাম্বেল শোল্ডার প্রেস (ডাম্বেল কাঁধের ওপর তোলা), ল্যাটারাল ও ফ্রন্ট রেইজ (কাঁধের সমান্তরালে পাশে ও সামনে ডাম্বেল তোলা), বেন্ট-ওভার ডাম্বেল ল্যাটারাল রেইজ (আধবসা অবস্থায় ডাম্বেল তোলা), কেব্ল আপরাইট রো (কেব্লে ওজন বাঁধা বার ওপরে তোলা) এবং ডেল্ট ফ্লাই (শোয়া অবস্থানে থেকে কেব্ল আপরাইট রো কাঁধের সমান্তরালে পাশে তোলা)। এক দিন থাকে ব্যাক অ্যান্ড বাইসেপ ডে। সেদিন করেন পুলআপ (বার ধরে শূন্যে ওঠা), ল্যাট পুলডাউন (কেব্লে ওজন বাঁধা বার নিচে টানা), কেব্ল রো (আধশোয়া অবস্থায় ওজন বাঁধা কেব্ল সোজা টানা) ও বারবেল রো (আধবসা অবস্থায় বারবেল তোলা), ডাম্বেল কার্ল (উল্টো হাতে ডাম্বেল তোলা), হ্যামার কার্ল (সোজা হাতে ডাম্বেল তোলা) এবং রোপ বাইসেপ কার্ল (ওজন বাঁধা রোপ ওপরে টানা)। আর আরেক দিন থাকে চেস্ট অ্যান্ড ট্রাইসেপ ডে। সেদিন পুশ-আপ (বুকডন), ডাম্বেল প্রেস টু ফ্লাই (শোয়া অবস্থায় ডাম্বেল ওপরে তুলে সেখান থেকে দুই পাশে নেয়া), বেঞ্চ প্রেস (শোয়া অবস্থায় বারবেল তোলা), কেব্ল ফ্লাই (ওজন বাঁধা কেব্ল দুই পাশ দিয়ে টানা), ট্রাইসেপ পুশডাউন (কেব্লে ওজন বাঁধা বার বুকসমান উচ্চতা থেকে নিচে টানা), স্কাল ক্রাশার (শোয়া অবস্থায় উল্টো করে বারবেল তোলা) এবং ডিপ (দাঁড়ানো অবস্থানে হাতে ভর দিয়ে ওঠা) করেন।
ওয়েট ট্রেনিংয়ের পরে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন করেন অ্যাব ট্রেনিং। তার জন্য করেন ক্রাঞ্চ ও ক্রস ক্রাঞ্চ (পা ভাঁজ করে শোয়া অবস্থান থেকে হাতের সাহায্য ছাড়া ওঠা), সাইড প্লাঙ্ক (এক হাতে ভর দিয়ে এক পাশে কাত হওয়া), প্লাঙ্ক হোল্ড (কনুইয়ে ভর দিয়ে বুক ডন অবস্থান), প্লাঙ্ক বল পুশ (সুইস বলের ওপর পা রেখে বুক ডন), সিজর কিক (শোয়া অবস্থা থেকে দুই পা তুলে কাঁচির মতো চালানো) এবং হ্যাঙ্গিং বল লেগ রেইজ (দুই হাতে ভর দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দুই পা দিয়ে চেপে সুইস বল তোলা)।
এমবাপ্পের খাওয়াদাওয়া
এমবাপ্পের দুই ক্লাব সতীর্থ মেসি ও নেইমার, কিংবা আল নাসর তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, সবার পূর্ণাঙ্গ খাবারতালিকার খবরই জানা যায়। কিন্তু শরীরচর্চার রুটিনের মতো এ বাবদেও খানিকটা লুকোচুরি আছে এমবাপ্পের। তবে একেবারেই জানা যায় না, তেমন নয়।
দিনে সাধারণত ছয়বার খান এমবাপ্পে। ডিম সেদ্ধর সঙ্গে অ্যাভোকাডো দিয়ে সারেন সকালের নাশতা। কিংবা পরিজের সঙ্গে বাদামের মাখন। নাশতা আর দুপুরের খাবারের মধ্যে খান প্রোটিন বার। দুপুরে খান টুনা মাছ বা মুরগির র্যাপ। সঙ্গে সালাদ। বিকেলে প্রোটিন শেক। সঙ্গে ফল। রাতের খাবার সেরে ফেলেন তাড়াতাড়ি। পাতে থাকে লাল চালের ভাতের সঙ্গে সবজি ও মাছ বা মুরগির মাংস। তারপর বিরতি দিয়ে আরেকবার প্রোটিন শেক।
তথ্যসূত্র: স্টিল সাপলমেন্টস