হঠাৎ ছেঁকা লাগলে কী করবেন আর কী করবেন না
আগুন বা গরম বস্তু থেকে হঠাৎ ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। গরম বস্তু, গরম তরল কিংবা গরম বাষ্পের সংস্পর্শে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বাড়িতে, হতে পারে মোটরসাইকেল চালানোর সময় সাইলেন্সারের স্পর্শে, এমনকি বনভোজনের মতো আনন্দময় মুহূর্তেও। যেকোনো দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দুর্ভোগ কমানো যায় অনেকাংশে। তাই দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সেদিকে যেমন খেয়াল রাখতে হবে; তেমনি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে গেলে কী করতে হবে, তা–ও জানা থাকতে হবে। পরামর্শ দিয়েছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শরমিন সুমি।
পানিই যখন বন্ধু
ত্বকের কোনো অংশে গরম বস্তু, গরম তরল কিংবা গরম বাষ্পের স্পর্শ লেগে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত স্থানটি পানির প্রবাহে রাখতে হবে একটানা ৩০ মিনিট। কাজটি করতে হবে ধৈর্য নিয়ে। শরীরের কষ্ট উপশম হয়েছে বলে মনে হলেও পানির প্রবাহ বন্ধ করা যাবে না। কলের পানিতে রাখতে পারলে সবেচেয়ে ভালো হয়। তবে পানির প্রবাহ না পেলে বোতল বা অন্য পাত্র থেকে পানি ঢালতে হবে ৩০ মিনিট। লোকালয় থেকে দূরেও এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, যেখানে হয়তো ওই মুহূর্তে ৩০ মিনিট ধরে প্রবাহিত করার মতো পর্যাপ্ত পানি না–ও থাকতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে একটি পাত্রে অল্প পানি নিয়ে তাতে আক্রান্ত স্থান ডুবিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট।
পরবর্তী যত্ন
১ শতাংশ সিলভার সালফাডায়াজিন ক্রিম লাগিয়ে নিন আক্রান্ত স্থানে। ক্রিমের পুরু স্তর তৈরি করে ফেলতে হবে। ১২ ঘণ্টা অন্তর লাগাতে হবে, যত দিন না ক্ষত সেরে যায়। ক্রিম ধুয়ে গেলে বা মুছে গেলে আবার লাগিয়ে নিতে হবে। এই ক্রিমের পরিবর্তে অ্যান্টিসেপটিক ক্রিমও লাগাতে পারেন। ছোটখাটো ক্ষত এই চিকিৎসায় সেরে যায়। ব্যথা বা জ্বালাপোড়া থাকলে প্রয়োজনমতো প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে।
কতটা ক্ষত হলে ডাক্তারের প্রয়োজন
কিছু ক্ষত ব্যান্ডেজ করার প্রয়োজন হতে পারে। ব্যান্ডেজের ধরন অনুযায়ী ড্রেসিং বদলে দেওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে কয়েক দিন অন্তর। অ্যান্টিবায়োটিক–জাতীয় ওষুধ সেবন করার প্রয়োজনও হতে পারে। এসব ক্ষতের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কোন ধরনের ক্ষতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে, জেনে নিন—
পোড়া বা ছেঁকা লেগে সৃষ্টি হওয়া ক্ষত যদি দুই আঙুলের প্রস্থের চেয়ে বেশি জায়গাজুড়ে হয়।
আকারে ছোট হলেও ক্ষত যদি গভীর হয়। খেয়াল রাখুন, আপাতদৃষ্টে ক্ষত গভীর মনে না হলেও যদি দেখা যায় যে ক্ষত দেখতে সাদাটে এবং এর ওপর চাপ দিলেও লালচে রং ধারণ করে না, সেটা আসলে গভীর ক্ষত। ক্ষত গভীর হলে কিন্তু ব্যথা কম অনুভূত হয়।
যা করা যাবে না
ক্ষতস্থানে ঠান্ডা পানি, বরফ, লবণ, পেস্ট কিংবা ডিম প্রয়োগ করবেন না। স্যাভলন, ডেটল, হেক্সিসল কিংবা অন্য কোনো অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণও প্রয়োগ করা যাবে না।
খেয়াল রাখুন
জরুরি পরিস্থিতিতে, অর্থাৎ শ্বাসনালিতে ধোঁয়া ঢুকে গেলে কিংবা মুখ বা গলার কোনো অংশ পুড়ে গেলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
চোখ যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে ৩০ মিনিট পানির মৃদু প্রবাহ চালান এবং এর পরপরই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাতে বা পায়ে ক্ষত হলে অনেক সময় ফুলে যায়। এ ক্ষেত্রে ক্ষত শুকাতে সময় বেশি লাগে। তাই ফোলা ভাব দেখা দিলেই আক্রান্ত হাত বা পা উঁচু করে রাখতে হবে।
শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি এবং গর্ভবতী নারী দুর্ঘটনার শিকার হলে ক্ষতের আকার যেমনই হোক, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
যে কারও ক্ষেত্রেই যদি দেখা যায় কোনো লালচে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, যা চাপ দিলে সাদা হয়ে যাচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে, সেটি আসলে অগভীর ক্ষত।
বড় আকারের ক্ষত হয়ে গেলে (কিংবা তেমন বড় না হলেও ক্ষত যদি গভীর হয়) ত্বক প্রতিস্থাপন করারও প্রয়োজন পড়ে।