কানপাকা রোগে করণীয়
কানপাকা আমাদের কাছে পরিচিত একটি রোগ। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এ রোগ বেশি দেখা যায়। আবার শহরের মানুষের তুলনায় গ্রামের মানুষের মধ্যে রোগটি বেশি দেখা যায়।
কানের তিনটি অংশ—বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণ। কান দিয়ে যদি পুঁজ বা পানি পড়ে, তবে বুঝতে হবে এটি মধ্যকর্ণের রোগ। সাধারণ মানুষ একেই কানপাকা রোগ বলে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, ৬ থেকে ১২ মাস ধরে মধ্যকর্ণের একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, যা অক্ষত টিম্পেনিক মেমব্রেন বা ঝিল্লির প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং এতে পরিবাহী শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। এটি দুই ধরনের: ১. ক্রনিক সাপোরেটিভ ওটাইটিস মিডিয়া (কোলেস্টিয়াটোমা ছাড়া) টিউবো টেম্পানিক টাইপ এবং ২. ক্রনিক সাপোরেটিভ ওটাইটিস মিডিয়া (কোলেস্টিয়াটোমাসহ) অ্যাটিকো-অ্যান্ট্রাল টাইপ।
কারণ
বারবার ওপরের শ্বাসনালির সংক্রমণ; তীব্র ওটাইটিস মিডিয়ার একাধিক পর্ব; ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় বসবাস; ক্রেনিও ফেসিয়াল অ্যানোমালি বা অসংগতি এবং ঠোঁট ও তালুকাটা।
ক্রনিক সাপোরেটিভ ওটাইটিস মিডিয়ার উপসর্গ
কান দিয়ে পুঁজ পড়া; বধিরতা এবং কানের পর্দায় ছিদ্র।
টিউবো টেম্পানিক টাইপ
বারবার তীব্র ওটাইটিস মিডিয়ার ইতিহাস; কানের ড্রাম ফেটে যাওয়া; বধিরতা; পুঁজ বের হতে পারে কম বা বেশি পরিমাণে; কানে শোঁ শোঁ শব্দ এবং অবস্থানগত ভার্টিগো/মাথা ঘোরানো থাকতে পারে। ব্যথা হতে পারে যদি ওটাইটিস এক্সটারনা ব্যাকটেরিয়া প্রদাহ থাকে।
রোগনির্ণয়
টিম্পেনিক মেমব্রেন শুষ্ক বা ভেজা এবং মাঝখানে ছিদ্র থাকে।
ছিদ্রের মধ্যে দেখা যেতে পারে কানের পলিপ, মধ্যকর্ণ মিউকোসা হতে পারে।
টিউনিং ফর্ক টেস্ট, রিনিস নেগেটিভ এবং ওয়েবার টেস্ট দিয়ে আক্রান্ত কানে কমবেশি শোনা যায় কি না, তা নির্দেশ করে। এগুলো কনডাকটিভ বধিরতা প্রকাশ করে।
চিকিৎসা
এ রোগের প্রধান চিকিৎসা কান শুষ্ক রাখা, পুনরায় সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং অক্ষমতা কমানো। কানের পুঁজ বা বারবার পরিষ্কার করতে হবে। এ ছাড়া—
টপিক্যাল অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার, মুখে খাওয়া অ্যান্টিবায়োটিক, নাকের ড্রপ ও অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ।
কানের পর্দার ছিদ্রের মাইক্রোসার্জারি এখন বাংলাদেশে নিয়মিত হয়। অপারেশন করে পর্দার ছিদ্র আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতিতে লাগানো হয়।
অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী, বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ধানমন্ডি, ঢাকা