আমাদের ধারণা, শুধু বড়দেরই গ্লুকোমা হয়। কিন্তু শিশুদেরও জন্মগতভাবে গ্লুকোমা হতে পারে। আর সচেতন না হলে এটি থেকে শিশুদের অন্ধত্বও হতে পারে। তাই শিশুদের গ্লুকোমা বিষয়েও সতর্ক হওয়া জরুরি।
বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ ১০ থেকে ১৬ মার্চ। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আসুন, একসাথে হাত ধরি, গ্লুকোমামুক্ত পৃথিবী গড়ি’।
চোখের ভেতরকার প্রেশার বা চাপ বাড়লে সে অবস্থাকে গ্লুকোমা বলে। শিশুর গ্লুকোমা হলে দেরি না করে তখনই অস্ত্রোপচার করলে স্থায়ীভাবে দৃষ্টিহীন হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
শিশুদের কেন গ্লুকোমা হয়
মায়ের গর্ভে থাকাকালীন শিশুর চোখের যে বৃদ্ধি হওয়ার কথা, যদি কোনো কারণে তা না হয়; কোনো কারণে চোখের পানির যদি যথার্থ পরিবহন না হয়, অর্থাৎ পানি যদি বেরিয়ে যেতে না পারে, তখন সেটি জমা থাকলে প্রেশার বৃদ্ধি পাবে।
লক্ষণ
শিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়ে, সরাসরি আলোর দিকে তাকাতে পারে না। চোখের মণি ঘোলা হয়ে যায়। শুরুতে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
সমস্যা বাড়তে থাকলে অনেক সময় দেখা যায়, চোখের মণি বড় হয়ে গেছে, চোখ অনেক বড় হয়ে গেছে। চোখের যখন প্রেশার বাড়ে, চোখের যে নালিটা মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযুক্ত, সেটিতে চাপ পড়ে। তখন সেটি নষ্ট হয়ে যায়। নষ্ট হলে স্থায়ীভাবে অন্ধত্বের দিকে চলে যায়।
করণীয়
অস্ত্রোপচারের আগে শিশুর কর্নিয়ার ডায়েমিটারটা চেক করা হয়। তারপর আবার চোখের প্রেশার মেপে দেখা হয়। প্রেশার মেপে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হয়। এ ধরনের সমস্যার একমাত্র চিকিৎসাই হলো অস্ত্রোপচার। অস্ত্রোপচার করলে ভয়ের কিছু নেই। যখন অস্ত্রোপচার করা হয়, পানি যখন বের করে দেওয়া হয়, সঙ্গে সঙ্গে মণিটা স্বচ্ছ হয়ে যায়।
এরপর অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। তবে নিয়মিত ফলোআপ প্রয়োজন; যাতে দৃষ্টির কোনো সমস্যা না হয়। অস্ত্রোপচারের এক সপ্তাহ, এক মাস, তিন মাস পর ফলোআপ দরকার হয়। প্রতি ফলোআপেই চোখের প্রেশার মাপা ও কর্নিয়াল ডায়েমিটার চেক করতে হয়।
অস্ত্রোপচার কেন জরুরি
প্রেশার বেশি থাকায় কালো মণিটা ঘোলা হয়ে যায়। যদি সঠিক সময় প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, অস্ত্রোপচার না করা হয়, তখন মণিতে সমস্যা হয়। এতে আলো ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। চোখ বড় হয়ে গিয়ে এর পাওয়ার মাইনাস হয়ে যাবে; মায়োপিয়া হয়ে যাবে। এরপর চোখের লেন্স ও রেটিনাতে সমস্যা দেখা দেবে। স্নায়ুও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই অকারণে আতঙ্কিত না হয়ে অভিজ্ঞ চক্ষু সার্জনের পরামর্শে অস্ত্রোপচার করতে হবে।
ডা. ইফতেখার মো. মুনির, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ আই হসপিটাল, মালিবাগ, ঢাকা