শীতকালে অগ্নিদুর্ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। পানি গরম করতে গিয়ে, আগুন পোহাতে গিয়ে, গরম সেঁক দিতে গিয়ে বা ঘরে আগুন লেগে অনেকের ত্বক পুড়ে যায়। পোড়া হলো একধরনের ক্ষত। পোড়া ত্বকের ক্ষত সারানো অনেক সময় বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে কতটা পুড়েছে, তার ধরন নির্ধারণ করে চিকিৎসা করা হয়।
পোড়ার কারণ
হঠাৎ গরম বস্তু, আগুন বা আগুনের শিখা, ফুটন্ত পানি, তেল বা অন্যান্য উষ্ণ তরল, কেমিক্যাল বা বিদ্যুতের সংস্পর্শে এলে ত্বক পুড়ে যেতে পারে।
ত্বক কতটা পুড়েছে, তার ধরন নির্ধারণ করে চিকিৎসা করা হয়।
পুড়ে গেলে কী হয়
প্রথম পর্যায়ের পোড়া বা ফার্স্ট ডিগ্রি বার্ন অল্প মাত্রায় হয়। সে ক্ষেত্রে ত্বক অল্প ফুলে যায়, লালচেভাব দেখা দেয়, তবে তীব্র যন্ত্রণা হয়। একসময় পোড়া ত্বক খুলে যাওয়ায় ক্ষতচিহ্ন পুরোপুরি দেখা যায় না। সেরে ওঠে।
দ্বিতীয় মাত্রার পোড়া ছড়িয়ে যায় ত্বকের প্রথম স্তরে। তীব্র বেদনা ও লালভাব হয়। ত্বকের ওপর ফোসকা পড়ে। ফোসকা ফেটে পানি বেরিয়ে যায়। তখন মোটা নরম অংশ একটা কালচে আবরণের মতো থাকে। চামড়ার স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার কারণে অনেক সময় গ্রাফটিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে।
তৃতীয় পর্যায়ের পোড়ায় ক্ষত ত্বকের সব স্তরে পৌঁছায়। স্নায়ু বা নার্ভের ক্ষতি হয় ও সংবেদনশীলতা হারায়। ক্ষত স্থান দেখতে সাদা ও মোমের মতো দগ্ধ হয়। বাদামিও দেখা যেতে পারে। পোড়ার গভীরতা বেশি হলে দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।
করণীয়
পোড়ার পরিমাণ খুব বেশি হলে বার্ন হাসপাতালে রোগীকে নিতে হবে। পোড়ার কারণে রোগীর অন্য কোনো অঙ্গে ক্ষতি হয়েছে কি না, সেটা নির্ণয় করতে চিকিৎসক পরীক্ষা করতে পারেন।
প্রথম মাত্রায় পুড়লে ১০ মিনিটের মতো ঠান্ডা পানির মধ্যে জায়গাটা ভিজিয়ে রাখুন অথবা ক্রমাগত পানি ঢালুন। ব্যথা কমাতে পেইনকিলার খেতে হবে। পরে শীতল জেল বা ক্রিম লাগাতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে। জীবাণুমুক্ত গজ দিয়ে জায়গাটা বেঁধে সুরক্ষিত রাখতে হবে; যেন কোনো সংক্রমণ না ঘটে।
দ্বিতীয় মাত্রায় পুড়লে পোড়া জায়গা ঠান্ডা পানিতে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম তুলোয় লাগিয়ে আলতো করে ক্ষতস্থানে লাগান। ক্ষতের ড্রেসিং করুন। ব্যথা কমাতে পেইনকিলার খেতে পারেন।
তৃতীয় মাত্রায় পুড়লে রোগীকে জরুরি চিকিৎসা দিন, যেমন পানি ঢালা, অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম পুরো করে লাগানো। এরপর দ্রুত বার্ন হাসপাতালে নিতে হবে। শিরায় অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দিতে হতে পারে। ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করান। ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ওষুধের ব্যবহার দরকার হবে। ক্ষতস্থানের জন্য স্ক্রিন গ্রাফটিং করতে হতে পারে।
ডা. জাহেদ পারভেজ, চর্ম ও যৌন বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল, কলেজ ও হাসপাতাল