রোজ চা খাওয়া ভালো না খারাপ
চা পছন্দ করেন না, এমন মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম; বরং রোজ অন্তত এক কাপ চা না খেলে যাঁদের চলে না, তাঁদের সংখ্যাই হয়তো বেশি। অনেকে আবার একাধিক কাপ চা-ও খান সারা দিনে। কারও আবার চায়ের প্রতি ভালোবাসাটা ‘নেশা’র পর্যায়ে চলে যায়। নিঃসন্দেহে চা একটি সুপেয় পানীয়। তবে রোজ চা খাওয়ার এই অভ্যাস কি আদতে ভালো? না কি এতে কোনো ক্ষতি হতে পারে?
চা খেলে হয়তো আপনি সতেজ অনুভব করেন। ক্লান্তি দূর করতে চা এক দারুণ সমাধান। কাজের চাপে মাথাটা যখন ‘হ্যাং’ হওয়ার জোগাড়, তখন উষ্ণ চায়ের কাপ থেকে কয়েক চুমুক নিলে মাথা ‘পরিষ্কার’ হয়ে যায় অনেকেরই। ঠিকঠাক চিন্তা করার ক্ষমতা যেন ফিরে আসে নতুন করে। সতেজতার ‘টনিক’ হিসেবে চাকে স্বীকৃতি দেবেন অনেকেই। চায়ে এমন কিছু উপকরণও রয়েছে, যা থেকে শারীরিক উপকার মেলে। আবার মাত্রাতিরিক্ত চা খাওয়ার কারণে কিংবা ভুল সময়ে চা খাওয়ার কারণে মুশকিলেও পড়তে পারেন। চায়ের স্বাস্থ্যগত নানা দিক সম্পর্কে বলছিলেন ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান।
রোজ চা খাচ্ছেন?
রোজ চা খেলে কিন্তু ক্ষতি নেই, তবে পরিমাণটা সীমিত থাকা চাই। না হলে অতিরিক্ত ক্যাফেইনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন আপনি। চায়ের কাপে চুমুকে আড্ডা জমুক না রোজ! কিন্তু খেয়াল রাখবেন, ভুল সময়ে চা খাবেন না যেন। তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন। আরও মনে রাখবেন, চায়ে মিষ্টতা আনবে এমন, যেকোনো কিছুর জন্যই কিন্তু সাদামাটা, নিরাপদ চা–টুকু আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠতে পারে।
যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
রোজকার চায়ের পরিমাণ এক-দুই কাপের মধ্যেই সীমিত রাখা ভালো, বড়জোর তিন কি চার কাপ। যদিও কফির চেয়ে চায়ে ক্যাফেইনের মাত্রা কম, তবু বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, চায়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে ক্যাফেইনের মাত্রাও বেড়ে যাবে স্বাভাবিকভাবেই। আর তাতে বুক ধড়ফড়, অস্থিরতা, তিরিক্ষি মেজাজ, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, ঘুমের সমস্যার মতো মুশকিলে পড়তে পারেন আপনি। অতিরিক্ত ক্যাফেইনের কারণে বুকে ব্যথা, দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, অত্যধিক তৃষ্ণা, এমনকি বমি বা পাতলা পায়খানাও হতে পারে।
খালি পেটে চা খাবেন না। ‘বেড টি’ সংস্কৃতি খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়। এর কারণ হলো, খালি পেটে চা খেলে অ্যাসিডিটির ঝুঁকি বাড়ে।
চা ও খাবার খাওয়ার মধ্যে ন্যূনতম দেড় ঘণ্টার ব্যবধান রাখুন। কারণ, চায়ে ট্যানিন নামক একটি উপকরণ রয়েছে, যার কারণে আমাদের দেহে আয়রন শোষণ হতে বাধা পায়। খাবারের আয়রন সঠিকভাবে শোষিত না হলে আপনি কিন্তু আয়রনের অভাবজনিত জটিলতায় ভুগতে পারেন।
চায়ে চিনি দেবেন না। মধু কিংবা গুড়কেও চিনির বিকল্প হিসেবে ধরে নেবেন না। মিষ্টতা আনার যেকোনো উপকরণই শরীরের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই যেমন বাড়তি ওজন। তাই চায়ে চিনি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে একটু একটু করে তা কমিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করুন আজ থেকেই।
চায়ের সঙ্গে বিস্কুট, পুরি-শিঙারা কিংবা এ–জাতীয় খাবার খেলেও কিন্তু বাঁধবে বিপত্তি। চায়ে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম, কিন্তু এগুলো সবই বাড়তি ক্যালরির উৎস। তাই ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকে; বরং সারা দিনের ক্যালরির একটা হিসাব করে নাশতাসহ সব খাবার গ্রহণ করা ভালো অভ্যাস।
বিকেলের পর চা না খাওয়াই ভালো। তাতে ঘুম আসতে দেরি হতে পারে। সুস্থ থাকতে রাতের ঘুম ভীষণ জরুরি।
মাইগ্রেনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ক্যাফেইন গ্রহণে মাথাব্যথা হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে চা-কফি এড়িয়ে চলাই সমাধান। তবে অল্প পরিমাণ চা খেলে যদি তাঁর কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে অবশ্য অল্প পরিমাণে রোজ খেলেও ক্ষতি নেই।
চায়ের আছে চমৎকারি দিক
চায়ের পুষ্টি উপাদানের অধিকাংশই চা বানানোর সময় উত্তাপে নষ্ট হয়ে যায়, তবে রয়ে যায় কিছুটা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান। দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ঠিক রাখতে এবং বয়সজনিত পরিবর্তন ঠেকাতে এসব উপাদান খানিকটা ভূমিকা রাখতে পারে। অবশ্য এই ভূমিকা আদতে খুব বড় কোনো ব্যাপার নয়। এসব উপকারের চেয়ে বরং আপনি সতেজতার খোঁজেই চা খেতে পারেন।