স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যাঁদের বেশি
নারীদের শরীরে যেসব ক্যানসার বাসা বাঁধে, তার মধ্যে স্তন ক্যানসার অন্যতম। স্তন ক্যানসারে শুধু নারীরাই নন, পুরুষেরাও আক্রান্ত হতে পারেন। তবে নারীদের আক্রান্তের হার বেশি।
উপসর্গ প্রকাশের পর দ্রুত চিকিৎসা নিয়ে স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়। তবে আমাদের দেশে বেশির ভাগ নারীই স্তন ক্যানসার সম্পর্কে সচেতন নন। সামাজিক রক্ষণশীলতার কারণে স্তন শব্দটিই যেখানে ট্যাবু, সেখানে স্বভাবতই এই সম্পর্কে কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন অনেক নারী।
স্তন ক্যানসার
শরীরের ভেতরে কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে একসময় শক্ত পিণ্ড বা টিউমারে পরিণত হয়। টিউমার সাধারণত বেনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট—এই দুই ধরনের হয়ে থাকে। বেশির ভাগ স্তন টিউমারই বেনাইন বা ক্ষতিকর নয়। তবে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ টিউমার ম্যালিগন্যান্ট। এই টিউমার রক্তনালির লসিকা ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। টিউমারের ছড়িয়ে যাওয়ার এই প্রবণতাই ক্যানসার।
ঝুঁকিতে আছেন যাঁরা
নারীদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। আজকাল কমবয়সী মেয়েদের মধ্যেও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে। নারীদের কম বয়সে ঋতুস্রাব শুরু হলে এবং দেরিতে মেনোপজ হলে এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া দেরিতে সন্তান গ্রহণ, সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, চর্বিজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া, স্থূলতা, দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন বা হরমোন ইনজেকশন নিলে স্তন ক্যানসার হতে পারে। বংশগত কারণেও স্তন ক্যানসার হতে পারে।
স্তন ক্যানসারের উপসর্গ
স্তন বা বগলের আশপাশে শক্ত পিণ্ড বা চাকা দেখা দেওয়া।
স্তনের আকারে পরিবর্তন ও স্তনবৃন্ত থেকে জলীয় পদার্থ বের হওয়া।
স্তনে টোল পড়া বা স্তনের চামড়া ভেতরের দিকে চলে যাওয়া।
স্তন স্বাভাবিকের চেয়ে ভারী বোধ হওয়া।
স্তনের ওপরের অংশে দানা বা ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া।
স্তনের চামড়া বাদামি বা লালচে হয়ে আসা।
স্তন ক্যানসার নির্ণয়
বিশ বছর বয়সের পর সব নারীরই নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করা শেখা উচিত। নিজে না পারলে প্রথমে চিকিৎসকের কাছ থেকে শিখে নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। উপসর্গ দেখা না দিলেও নিয়মিত ব্রেস্ট ক্যানসার স্ক্রিনিং করে সমস্যা খুঁজে দেখা দরকার। ৩০ পার হওয়া প্রত্যেক নারীর বছরে একবার হলেও ব্রেস্ট স্ক্রিনিং করা জরুরি। এতে প্রাথমিক অবস্থাতেই ক্যানসার ধরা পড়ে। এর ফলে চিকিৎসা অনেকটা সহজ হয়ে আসে। স্তন ক্যানসারের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আলট্রাসনোগ্রাফি বা ম্যামোগ্রাম করতে হবে।
চিকিৎসা
সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয়। সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি। আক্রান্ত স্তনের যেখানে ক্যানসারের কোষ ছড়িয়ে পড়েছে, সার্জারির মাধ্যমে সেসব অংশ কেটে ফেলা হয়। কেমোথেরাপি ক্যানসার নিরাময়ের একধরনের ওষুধ। কেমোথেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয়। স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপিও দেওয়া হয়। এটি বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন একধরনের বিকিরণ রশ্মি। রেডিওথেরাপি ক্যানসার কোষকে মেরে ফেলে।
ক্যানসার কোন পর্যায়ে আছে, তার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসাপদ্ধতি। স্তন ক্যানসার যদি প্রাথমিক অবস্থাতেই শনাক্ত করা যায়, তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত ও সহজে সারিয়ে তোলা সম্ভব। তাই উপসর্গ দেখা দিলে সংকোচ দূর করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পাশাপাশি নিজে নিজে স্তন পরীক্ষার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
*ডা. মোছা. বিলকিস ফাতেমা: ব্রেস্ট, ল্যাপারোস্কোপিক ও কলোরেক্টাল সার্জন, সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।