উপকারী হলেও কলিজা কাদের জন্য খাওয়া নিষেধ
রক্তের প্রধান উপাদান হলো আয়রন। আয়রন আমাদের রক্তের রোগজীবাণু দূর করতে সাহায্য করে, বাড়িয়ে তোলে রোগ প্রতিরোধশক্তি। মস্তিষ্ককে সুষ্ঠুভাবে কাজ করার জন্য আয়রনের ভূমিকা অপরিহার্য। আয়রন বাড়ায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা। রক্তে আয়রনের মাত্রা বাড়ায় কলিজা। গরু, ছাগল, মুরগি—তিন ধরনের প্রাণীর কলিজায়ই রয়েছে উচ্চমাত্রার আয়রন। তবে যাঁদের অ্যালার্জি বা চুলকানির সমস্যা, তাঁরা গরুর কলিজার পরিবর্তে মুরগি বা খাসির কলিজা খাবেন। দীর্ঘদিন ফ্রিজে সংরক্ষণের পরিবর্তে কলিজা টাটকা খাওয়াই উত্তম।
বাড়ন্ত শিশু-কিশোর, গর্ভবতী নারী, জটিল কোনো অস্ত্রোপচারের রোগী, মাতৃদুগ্ধ দানকারী মায়ের আয়রনের চাহিদা হয়ে ওঠে প্রায় দ্বিগুণ। কলিজা এই সময়ে পালন করবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। শিশু-কিশোর, খেলোয়াড়, ব্যায়ামবিদ ও নৃত্যশিল্পী, অতিমাত্রায় কায়িক বা দৈহিক পরিশ্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের জন্য কলিজা ভীষণ উপকারী। শীতকালীন সর্দি, হাঁচি, কাশি বা টনসিলের সংক্রমণ, চোখ ওঠা, ঝিমুনি ভাব, স্নায়বিক দুর্বলতার বিরুদ্ধে কাজ করে কলিজা।
কলিজায় রয়েছে উচ্চমাত্রার আমিষ, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, জিংক। ভিটামিন এ সব বয়সের মানুষের ত্বক ও চোখের জন্য ভীষণ উপকারী। ভিটামিন বি বেরিবেরি রোগ, ঠোঁটের কোণে ঘা, হাতে-পায়ে অবশ ভাব এবং ঝিঁঝিঁ লাগা, মাংসপেশিতে টান লাগা, দুর্বলতা দূর করে। জিংক আমাদের খাবারের রুচি বাড়িয়ে তোলে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে করে আরও বেশি শক্তিশালী।
এ ছাড়া কলিজায় রয়েছে কোলাজেন ও ইলাস্টিন নামের একধরনের খাদ্য উপাদান। ত্বকের মসৃণ ভাব বজায় রাখা, বলিরেখা দূর করা, সর্বোপরি ত্বকের পুষ্টির জন্য কাজ করে কোলাজেন। আর ইলাস্টিন আমাদের শিরা-উপশিরাকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে। কলিজায় রয়েছে সেলেনিয়াম। সেলেনিয়াম জরুরি একটি উপাদান, যা হ্রাস করে কোলন ক্যানসারের পরিমাণ, পাকস্থলীর রোগজীবাণু।
জেনে রাখা ভালো
যাঁদের শিরা-উপশিরায় ব্লকেজ ধরা পড়েছে, তাঁদের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে কলিজা। রক্তে চর্বি বা ফ্যাটের মাত্রা অনেক বেশি, কিডনিতে ডায়ালাইসিস চলছে, হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিরা কলিজা বাদ দেবেন। বড় কোনো অস্ত্রোপচার বা গর্ভবতী নারীরা চিকিৎসকের পরামর্শমতো কলিজা খাবেন। কারণ, সবার হজমশক্তি সমান নয়। তবে উচ্চ রক্তচাপ, অতিমাত্রায় অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরল, হৃৎপিণ্ড ও পাকস্থলীর জটিল কোনো অপারেশনের পরে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কলিজা খাওয়া উচিত নয়।
ডা. ফারহানা মোবিন: মেডিকেল অফিসার, স্ত্রী প্রসূতিবিদ্যা ও বন্ধ্যত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল, ঢাকা