স্বাস্থ্যকর জীবনধারা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে পারে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে—
১. আদর্শ দৈহিক ওজন বজায় রাখা: এই ওজন বিএমআই ১৮.৫ থেকে ২২.৯ কেজি/মি.২। ওজন বাড়লে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি বিশেষ করে পেটের চর্বি ইনসুলিনের অকার্যকারিতা বাড়ায়।
২. শারীরিকভাবে সক্রিয় জীবনযাপন: সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের মাঝারি ব্যায়াম (যেমন দ্রুত হাঁটা) বা ৭৫ মিনিট জোরালো ব্যায়াম (যেমন দৌড়ানো), পাশাপাশি সপ্তাহে দুই দিন সম্ভব হলে ব্যায়াম। কারণ, নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে ও রক্তে শর্করা কমায়।
৩. সুষম খাদ্য গ্রহণ: খাদ্যতালিকায় প্রচুর শাকসবজি (আলু বাদে), ফল, গোটা শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিন রাখতে হবে। কারণ, ফাইবার ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাদ্য রক্তে শর্করার ভালো নিয়ন্ত্রণ রাখে।
৪. যেসব খাবার পরিহার: চিনিযুক্ত পানীয়, ফলের রস এবং পরিশোধিত শর্করা বেশি পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাকস খাওয়া কমাতে হবে। কারণ, এসব খাবারে রক্তে শর্করা ও ইনসুলিনের অকার্যকারিতা বাড়াতে পারে।
৫. স্বাস্থ্যকর চর্বি: অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল, বাদাম ও চর্বিযুক্ত মাছ থেকে অসম্পৃক্ত চর্বি ব্যবহার করুন। ভালো চর্বি কোলেস্টেরল ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
৬. খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: ধীরে ধীরে খান, ছোট প্লেট ব্যবহার করুন ও ক্ষুধার সংকেতগুলোতে মনোযোগ দিন। এটি ওজন বৃদ্ধি রোধে সহায়তা করে।
৭. গোটা শস্য বেছে নিন: মিহি শস্যের পরিবর্তে বাদামি চাল, কুইনোয়া ও গোটা গমের মতো গোটা শস্য বেছে নিন। গোটা শস্যের গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে।
৮. পর্যাপ্ত জলীয়/পানীয় গ্রহণ: প্রতিদিন ৩ লিটারের মতো (৭-৮ গ্লাস) পানি পান করুন। শর্করা বা ক্যালোরিবিহীন পানি হলো সেরা।
৯. ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন: প্রতি রাতে ৭ ঘণ্টার মতো (৬-৯ ঘণ্টা) নিরবচ্ছিন্ন ঘুম। কারণ, অপর্যাপ্ত ঘুম ইনসুলিন সংবেদনশীলতা নষ্ট করে ও ওজন বাড়াতে পারে।
১০. মানসিক চাপ হ্রাস: মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম, ধ্যান, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস বা শখের অনুশীলন করুন। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং ইনসুলিনের অকার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
১১. ধূমপান বর্জন: ধূমপান ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থার উচ্চ ঝুঁকি বাড়ায়।
১২. মদ্যপান পরিহার: অতিরিক্ত অ্যালকোহল রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত ও ওজন বৃদ্ধি করতে পারে।
১৩. আঁশযুক্ত (ফাইবার) খাদ্য গ্রহণ: মটরশুঁটি, শিম, শাকসবজি, ফলমূল এবং গোটা শস্য খেতে পারেন। ফাইবার রক্তে শর্করার শোষণ নিয়ন্ত্রণ ও অন্ত্রের স্বাস্থ্যের পক্ষে সহায়ক।
১৪. নিয়মিত ব্লাড সুগার নিরীক্ষণ: ৩৫ বছরের পর রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন। কারণ, প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে প্রতিরোধ করা যায়।
১৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: ওজিটিটি, এইচবিএ১সি এবং লিপিড নিয়মিত পরীক্ষা করা। কারণ, প্রিডায়াবেটিস বা উচ্চ-ঝুঁকির অবস্থা শুরুতে শনাক্ত করা গেলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
ডা. শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়