প্রবীণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা

আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত হলো ১ অক্টোবর। ৬৫ বা এর বেশি বছর বয়সী মানুষকে প্রবীণ জনগোষ্ঠী বলা হয়। গড় আয়ু বাড়ার কারণে বিশ্বের সব দেশে প্রবীণ জনসংখ্যা বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৫০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ হবেন প্রবীণেরা। এই বিপুলসংখ্যক প্রবীণের স্বাস্থ্য সমস্যা ও যত্ন নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।

প্রবীণেরা যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকিতে

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা রকম রোগবালাইয়ের ঝুঁকি বাড়ে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক ইত্যাদি। তাই প্রবীণ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ এসব অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়। এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে দেখা দেয় নানা জটিলতা; যেমন কিডনি রোগ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, দৃষ্টির সমস্যা, হার্ট ফেইলিউর ইত্যাদি।

শুধু অসংক্রামক নয়, বিভিন্ন সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রেও প্রবীণদের জন্য রয়েছে বিশেষ ঝুঁকি। ফ্লু, নিউমোনিয়া, প্রস্রাবের সংক্রমণসহ যেকোনো সংক্রমণ প্রবীণদের জন্য মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। এর বাইরে বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা প্রবীণদের নাজুক পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। এর মধ্যে রয়েছে শ্রবণশক্তি হ্রাস, খেতে না পারা বা খেতে সমস্যা, ঘুমের সমস্যা, মাথা ঘোরা বা ভারসাম্যের অভাব, দুর্বল–ভঙ্গুর হাড়, হাড়ের ফ্র্যাকচার, প্রস্রাব–পায়খানা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা, স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়া।

প্রবীণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এসব বিষয় মনে রাখতে হবে। একই সঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এ বয়সে অনেকেই একাকিত্ব, অসহায়ত্ব ও বিষণ্নতায় ভোগেন। শারীরিক নানা জটিলতার কারণে মনের ওপর এর প্রভাব পড়ে। তাই তাঁদের সমস্যাগুলো সহৃদয় দেখতে হবে।

পুষ্টি

দাঁত না–থাকা বা এর নানা সমস্যায় অনেক প্রবীণ ব্যক্তির খাবার খেতে সমস্যা হয়। এ বয়সে রুচিও কমে যায়। তাই প্রায়ই পুষ্টির ঘাটতি হয়। এ জন্য বিশেষ ধরনের খাদ্য দরকার হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সুষম পুষ্টি বজায় আছে কি না, খেয়াল রাখতে হবে। সব ধরনের উপাদান; যেমন শর্করা, আমিষ, ভালো চর্বি, ভিটামিন ও খনিজ থাকতে হবে খাবারে।

ভারসাম্যহীনতা

প্রবীণ ব্যক্তিরা সব সময় পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। পড়ে গেলে হাড় ফ্র্যাকচার হওয়া বা মাথায় আঘাত পাওয়ার ঝুঁকিও থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পোসচারাল হাইপোটেনশন বা পজিশন পরিবর্তনের সঙ্গে হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া, হাইপোগ্লাইসেমিয়া, ভার্টিগো পড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী। এ জন্য নিয়মিত সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ, বসা থেকে দাঁড়ানো বা শোয়া থেকে বসার সময় ধীরগতি অবলম্বন, দরকার হলে লাঠি ব্যবহারের অভ্যাস ভালো। দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য বাথরুমের সামনে রাতেও খানিকটা আলোর ব্যবস্থা রাখা, পাতলা পাপোশ বা ম্যাট এড়িয়ে চলা, বাথরুম রেলিংয়ের ব্যবহার, সিঁড়িতে বাড়তি সতর্কতার দরকার।

স্মৃতিভ্রংশতা

বেশির ভাগ প্রবীণ ব্যক্তিই ভুলে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন। ওষুধ খেতে ভুলে যান বা দুবার একই ওষুধ খেয়ে ফেলেন। তাই এদিকে নজর দিতে হবে। ভুলে যাওয়া নিয়ে তাঁদের দায়ী করা বা রাগ করা যাবে না।

মানসিক স্বাস্থ্য

অনেক বয়স্ক ব্যক্তি খিটখিটে মেজাজ বা বিষণ্নতায় ভুগতে পারেন। আক্রমণাত্মকও হয়ে পড়তে পারেন। ভুগতে পারেন প্রস্রাব–পায়খানার নিয়ন্ত্রণ হারানো বা দৈনন্দিন কাজে অক্ষমতার জন্য লজ্জায়। সমস্যাগুলো পরিবারের সবাই ও কেয়ারগিভার যেন সহৃদয় দেখেন।

  • অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ