রক্তে লবণ কমে যায় কেন? আর কমে গেলে কী বিপদ
শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখার জন্য রক্তে বিভিন্ন উপাদানের ভারসাম্য ও পরিমাণ বজায় থাকতে হয়। আমাদের রক্তে রক্তকণিকা ছাড়া যে তরল অংশ থাকে, তাকে প্লাজমা বা সিরাম বলে। এই প্লাজমাতে যেমন বিভিন্ন প্রোটিন, গ্লুকোজ ও ফ্যাট বা কোলেস্টেরল থাকে, তেমনি কিছু লবণ, ভিটামিন ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট থাকে। রক্তে যেসব লবণ থাকে, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড, বাইকার্বনেট, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম।
বিভিন্ন কারণে রক্তে এগুলোর পরিমাণ কমে যেতে পারে। বেশির ভাগ সময় এ লবণগুলো কমে যাওয়ার কারণ বারবার বমি, পাতলা পায়খানা ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। কখনো কখনো ইনফেকশন, যেমন নিউমোনিয়াতেও লবণ কমে যেতে পারে। কিছু কিছু ওষুধ, যেমন ডাইরেক্টএক্স রক্তে লবণের স্বল্পতা করতে পারে। হার্ট বা কিডনির সমস্যায় বা পায়ে পানি এলে রোগীকে অনেক সময় এ–জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। কিছু কিছু মানসিক রোগের ওষুধ থেকেও রক্তে লবণের সমস্যা হতে পারে। রক্তে থাইরয়েড বা করটিসল হরমোনের অভাবেও লবণের ঘাটতি হতে পারে।
রক্তে লবণের স্বল্পতা হলে বিভিন্ন উপসর্গ হতে পারে। যেমন ক্ষুধামান্দ্য, দুর্বলতা, বমিভাব ও জ্ঞানের মাত্রা কমে যাওয়া। লবণের পরিমাণ অনেক বেশি কমে গেলে খিঁচুনি কিংবা হার্টের সমস্যাও হতে পারে।
কারও যদি বারবার রক্তে লবণ কমে যাওয়া সমস্যা হয়, তবে তাঁর একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় উনি কী কী ওষুধ বাসায় সেবন করছেন, তা কাগজে লিখে কিংবা ওষুধ সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে। রক্তে সোডিয়াম বা পটাশিয়াম বা অন্যান্য খনিজ কমার ওপর ভিত্তি করে রোগীকে রক্ত বা প্রস্রাবের কিছু পরীক্ষা করতে দিতে পারেন চিকিৎসক।
রক্তে লবণের পরিমাণ অত্যধিক কমে গেলে অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে শিরাপথে স্যালাইনের মাধ্যমে লবণের ঘাটতি পূরণ করা লাগতে পারে। লবণের ঘাটতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত কিছুদিন পরপর রক্ত পরীক্ষা করে দেখা লাগতে পারে যে কতটুকু ঠিক হলো।
সর্বোপরি এ ধরনের সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। প্রেসক্রিপশনের বাইরে নিজে থেকে কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না।
ডা. তাসনোভা মাহিন, অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট, মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা।