পিংক সল্ট নাকি সাধারণ লবণ

পিংক সল্ট নাম শুনেই খাওয়ার আগ্রহ জন্মায়। এখন সবাই জানেন, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া ভালো নয়। তবে অনেকের ধারণা, পিংক সল্টে ততটা ক্ষতি নেই। কয়েক বছর আগে থেকে পিংক সল্ট বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

সাধারণ লবণের মূল উপাদান সোডিয়াম ক্লোরাইড। এখান থেকে আমরা শুধু সোডিয়াম ক্লোরাইডই পেয়ে থাকি। কিন্তু পিংক সল্টে সোডিয়াম ক্লোরাইডের পাশাপাশি অনেক ম্যাক্রো-মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট পাওয়া যায়।

যেমন সোডিয়াম ক্লোরাইডের পাশাপাশি আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ক্রোমিয়াম, সালফেট, জিংকসহ অনেক নিউট্রিয়েন্ট পাওয়া যায়। সাধারণ ও পিংক সল্টে এটাই হলো মূল পার্থক্য।

এত গুণ থাকা সত্ত্বেও পিংক সল্ট খাওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু কেন?

প্রথমত, আমরা লবণ খাই শুধু সোডিয়াম ক্লোরাইডের জন্য। সাধারণ লবণে ৯৯ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড থাকে। অন্যদিকে পিংক সল্টেও ৯৬-৯৭ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড থাকে।

কিন্তু পিংক সল্ট সাধারণ লবণের চেয়ে বেশি দামি। তাই এত ব্যয় করে সোডিয়াম ক্লোরাইড পেতে পিংক সল্ট কেনার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটা ঠিক, পিংক সল্টে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে, যেমন: ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্রোমিয়াম, জিংক ইত্যাদি নিউট্রিয়েন্ট। তবে এসব উপাদান আমরা সারা দিনের স্বাভাবিক খাবার থেকেই পাই।

দ্বিতীয়ত, সাধারণ লবণের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হচ্ছে আয়োডিন। সাধারণ লবণে আয়োডিন ফর্টিফাইড করা থাকে, যা পিংক সল্টে থাকে না। আমাদের শরীরে প্রতিদিনের আয়োডিনের চাহিদার বড় অংশ পূরণ হয়ে থাকে সাধারণ লবণে। আমাদের দৈনন্দিন খাবারে আয়োডিনের পরিমাণ খুব কম থাকে। এর পরিমাণ অঞ্চলভেদে বিভিন্ন। যেমন: চট্টগ্রাম অঞ্চলের খাবারে বেশ কিছুটা আয়োডিন থাকলেও রংপুর অঞ্চলে এর পরিমাণ খুবই কম।

সে ক্ষেত্রে আয়োডিনের চাহিদা পূরণে সাধারণ লবণের ওপরে নির্ভর করতে হবে। দীর্ঘদিন পিংক সল্ট খেলে শরীরে আয়োডিনের অভাব হতে পারে। আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ যেমন গলগণ্ড, থাইরয়েড গ্রন্থির বিভিন্ন রোগ হতে পারে।

একসময় এসব রোগ ব্যাপক হারে ছিল। শুধু ফর্টিফাইড করা আয়োডিনযুক্ত লবণ খেয়ে ধনী, গরিব এবং মধ্যবিত্ত—সব শ্রেণির মানুষ আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিহত করেছে।

আবার পিংক সল্টে কিছুটা পটাশিয়াম থাকায় এটা কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। তাই না বুঝে শুধু হুজুগে পিংক সল্ট খাওয়ার প্রয়োজন নেই, সাধারণ লবণেই ভরসা রাখুন।

  • মো. ইকবাল হোসেন, জে্যষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল