পরপর দুটি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন বা তার বেশি গর্ভস্থ সন্তান (ফিটাস) যদি গর্ভাবস্থার এমন একসময়ে নষ্ট হয়, যখন সে বাইরের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার মতো উপযুক্ততা অর্জন (এজ অব ভায়াবিলিটি) করে না, তখন তাকে বলা হয় বারবার গর্ভপাত বা রিকারেন্ট প্রেগনেন্সি লস।
বিশ্বে এর হার ১-৩ শতাংশ। যদিও উন্নত দেশে ২০-২৪ সপ্তাহে ভূমিষ্ঠ শিশুও নিবিড় পরিচর্যায় বাঁচতে পারে। আমাদের দেশে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ২৮ সপ্তাহের আগে ভূমিষ্ঠ শিশুকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। তাই এর আগে যদি কোনো গর্ভস্থ শিশু নষ্ট হয়, সেটাকে গর্ভপাত বলে। গর্ভধারণের সময় অনুযায়ী গর্ভপাতের কারণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
গর্ভধারণের বয়স যত বেশি, গর্ভপাতের হারও আনুপাতিক হারে তত বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সী নারীর গর্ভপাতের ঝুঁকি ১৫ শতাংশ। বয়স ৩০-৪০ বছর হলে এই ঝুঁকি ৩০ শতাংশ।
সাধারণত যাঁরা স্থূল বা যাঁদের বিএমআই বেশি, তাঁদের গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি।
গর্ভধারণের ১২ সপ্তাহের মধ্যে যদি গর্ভপাত হয়, তবে তার ৫০-৭০ শতাংশই ঘটে ক্রোমোজোমের সংখ্যা বা গঠনগত সমস্যার কারণে।
জন্মগতভাবে জরায়ুর মধ্যকার পর্দা (সেপ্টাম), জরায়ুর উপরিভাগ যদি বিভক্ত থাকে অথবা যদি জরায়ুর ভেতর কোনো টিউমার থাকে, তবে জরায়ুর ধারণক্ষমতা কমে গিয়ে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া জরায়ুর মুখ যদি ঢিলা হয়, তবে গর্ভপাত হতে পারে।
কিছু অটোইমিউন রোগ, যেমন এসএলই, অ্যান্টি ফসফোলিপিড সিন্ড্রোম (এপিএস) ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত নারীদের গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
কোনো নারীর যদি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতা থাকে, তাঁদেরও গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকে।
রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহ যদি গর্ভফুলে বাধাগ্রস্ত হয়, সে ক্ষেত্রেও গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকে।
গর্ভকালে মায়ের খাবার, পানি বা পরিবেশদূষণের কারণেও গর্ভপাতের হার বাড়ছে।
প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও গর্ভপাতের কারণ জানা যায় না।
প্রতিকার
বারবার গর্ভপাত হলে অবশ্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঝুঁকির কারণ শনাক্ত করতে হবে। যেমন ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করা, থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসা, জরায়ুর মুখ সেলাই করা, প্রোজেস্টেরন-জাতীয় ওষুধ ও রক্ত তরলীকরণের ওষুধ ব্যবহার করা।
আশার কথা, গবেষণা বলছে, পরপর দুই বা তিনবার গর্ভপাতের পরও ৭০% ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে সুস্থ বাচ্চা জন্ম দেওয়া সম্ভব। তাই পরিবার ও পারিপার্শ্বিক সবার মানসিক সমর্থন এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
ডা. আরিফা শারমিন, কনসালট্যান্ট, ফিটোমেটারনাল মেডিসিন ইউনিট, প্রসূতি ও গাইনি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল