কারও কারও মুখে হঠাৎ তীব্র যন্ত্রণার অনুভূতি হয়, যা কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই অবস্থা মুখের এক দিকে বা উভয় দিকে হতে পারে। সাধারণত এর কারণ ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া। এটি একটি স্নায়ুগত রোগ। এর সূচনা পঞ্চম ক্রেনিয়াল নার্ভের কোনো ক্ষতি বা অতিরিক্ত চাপ থেকে।
মস্তিষ্কের নিচের অংশে শিরা বা ধমনির সঙ্গে লেগে যদি ট্রাইজেমিনাল নার্ভের ওপর অস্বাভাবিক চাপ পড়ে, তবেই এ ব্যথা হয়। এ ছাড়া বার্ধক্য, মাল্টিপল স্কেলেরোসিস, মস্তিষ্কে টিউমার বা নার্ভের পাশে থাকা টিউমারের চাপ প্রয়োগ ও অন্য কোনো সমস্যার কারণেও এ ব্যথা হতে পারে।
ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়ায় হঠাৎ বৈদ্যুতিক শকের মতো তীব্র ব্যথা হয়। দিন, সপ্তাহ, মাসজুড়ে এ ব্যথা হতে পারে। ব্যথা কোনো কারণ ছাড়াই উঠতে পারে। সাধারণত পুরুষদের তুলনায় নারীদের এ রোগ বেশি হয়। ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে, সেগুলো হলো—
১. মুখ বা চোয়ালের এক পাশে হঠাৎ করে বৈদ্যুতিক শকের মতো তীব্র ব্যথা।
২. শেভ করার সময় বা মুখে হাত বোলালে কিংবা দাঁত ব্রাশ করার সময় ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।
৩. ব্যথা কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়, সাধারণত দুই মিনিটের কম।
৪. বারবার ব্যথা হয়, ব্যথা কয়েক দিন থেকে কয়েক মাস থাকতে পারে।
৫. দুটি এপিসোডের মাঝখানে সাধারণত ব্যথা থাকে না।
৬. ট্রাইজেমিনাল নার্ভ যেসব জায়গায় অনুভূতি সরবারহ করে যেমন গাল, চিবুক, মাড়ি, দাঁত, ঠোঁট এবং মাঝেমধ্যে চোখ ও কপালে
ব্যথা হয়।
৭. ব্যথা মুখের যেকোনো একদিকে হয় (যেদিকের স্নায়ু আক্রান্ত হয়, সেদিকে)।
৮. দিনে দিনে ব্যথার তীব্রতা ও ব্যাপকতা
বাড়তে থাকে।
রোগ নির্ণয়
রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে চিকিৎসক সাধারণত তিনটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন। এক. ব্যথার ধরন, দুই. ব্যথার উৎপত্তিস্থল এবং তিন. কী করলে ব্যথা বেড়ে যায়।
সঙ্গে কিছু নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষা করলে রোগ নির্ণয় করা সহজ হয়ে যায়। রোগের কারণ নির্ধারণের জন্য কখনো কখনো এমআরআই, ইএমজি, এনসিএস ইত্যাদি করার প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা
নিউরোলজিস্ট অথবা নিউরোসার্জনের তত্ত্বাবধানে থেকে এ রোগের চিকিৎসা করাতে হবে।
চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে
* ব্যথানাশক ওষুধ এসিটামিনোফেন, এনএসএআইডস, অ্যান্টিকনভালসেন্ট কারবামাজেপিন, অক্সকারবাজেপিন, গাবাপেনটিন, মাসল রিলাক্সেন্ট ব্যাকলোফেন।
* ফিজিক্যাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি, কগনেটিভ বিহেভিয়েরাল থেরাপি।
* ব্যায়াম, ইন্টারভেনশন ও সার্জারি।
অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়