বসন্তে এই রোগবালাইগুলোর বিষয়ে সাবধান

এ সময়ের একেবারে সাধারণ এক সমস্যা হলো ভাইরাসজনিত জ্বর
ছবি: প্রথম আলো

প্রকৃতিতে এখন বসন্তকাল। শীতের শেষ আর গরমের শুরুর মাঝামাঝি সময়টায় আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের শরীরকে নানাভাবে মানিয়ে নিতে হয়। বড়রা এটা যত সহজে পারে, শিশুরা অত সহজে পারে না। তখনই কারও সর্দি-কাশি কিংবা কারও অন্য অসুস্থতা দেখা দেয়।

সাধারণ সমস্যা

এ সময়ের একেবারে সাধারণ এক সমস্যা হলো ভাইরাসজনিত জ্বর। নাক থেকে পানি পড়া, জ্বর—এসব উপসর্গ তো থাকেই। সারা শরীর ম্যাজম্যাজ করে। গায়ে ব্যথা হয়। অনেক সময় বমি আর পাতলা পায়খানাও হয়। এর চিকিৎসা করা হয় মূলত উপসর্গ অনুযায়ী। ভাইরাসজনিত জ্বরে অবশ্যই প্রচুর তরল জিনিস পান করতে হবে। জ্বর বেশি হলে হালকা গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে গা মুছিয়ে দিন। প্রয়োজনে জ্বরের ওষুধ দিন। শিশুদের প্যারাসিটামলও দিতে হয় ওজন অনুযায়ী। খেয়াল রাখতে হবে, প্রস্রাব ঠিকঠাক হচ্ছে কি না। বমি হলে অল্প অল্প করে খাওয়ানোর চেষ্টা করতে পারেন। বেশি অসুস্থ হলে জ্বরের অন্য কারণও খুঁজতে হবে। ডেঙ্গুজ্বর বা করোনা সংক্রমণও দেখা দেয় কাছাকাছি ধরনের উপসর্গ নিয়ে।

হাঁপানি ও অ্যালার্জিজনিত সমস্যা

বসন্তে ধুলা ওড়ে, আবার ফুলের রেণুও বাতাসে ঘোরে। তাই হাঁপানির প্রকোপ বাড়ে। ত্বকের অ্যালার্জিও হতে পারে। ধুলাবালি থেকে শিশুদের দূরে রাখা এবং প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার জরুরি। হাঁপানি আছে, আগে থেকে জানা থাকলে এ-সংক্রান্ত উপসর্গ দেখা দিলেই ইনহেলার ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া থাকে। শিশু ইনহেলার নিতে না পারলে প্রয়োজনে স্পেসারের সাহায্য নিতে হবে।

বসন্তে বসন্ত

বসন্ত নামের রোগেরও একটা সময় হলো বসন্তকাল। জলবসন্ত হলে সাধারণত ফুসকুড়ির আগেই জ্বর দেখা দেয়। ফুসকুড়িগুলো ভাগে ভাগে আসতে থাকে। খুঁটলে কিছু কিছু পেকেও যায়। শরীর খুব ক্লান্ত লাগে। ছয়-সাত দিন পর ফুসকুড়ি শুকাতে থাকে। ফুসকুড়ি না খুঁটলে স্থায়ী কোনো কালো দাগ পড়ে না।

এ সময় প্রচুর তরল দ্রব্য খেতে হয়। চুলকানোর জন্য ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। ব্যথা ও জ্বরের ওষুধও লাগতে পারে। সুতি, ঢিলেঢালা পোশাক পরানো উচিত। পরিষ্কার পানিতে গোসল করাতে বাধা নেই, তবে সাবান-শ্যাম্পুর ব্যবহার সীমিত রাখাই ভালো। নিত্যব্যবহার্য লোশন বা পাউডারও এ সময় না লাগানোই ভালো। জ্বর শুরু হওয়ার পর অন্তত ছয় দিন (সব ফুসকুড়ি শুকিয়ে আসা অবধি) আইসোলেশন বা সঙ্গনিরোধ দরকার। অত্যন্ত জটিল ক্ষেত্রে জলবসন্তের ভাইরাসের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট (অ্যান্টিভাইরাল) ওষুধ দিতে হয়।

ডায়রিয়াও হতে পারে

নিরাপদ পানি পান করতে হবে। খাবার তৈরিতেও চাই নিরাপদ পানি। ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর অবশ্যই খাবার স্যালাইন দিন।

*অধ্যাপক ডা. মাহবুব মোতানাব্বি: শিশু বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা