গর্ভপাতের কত দিন পর গর্ভধারণ করা ভালো
পরম মমতায় নিজের গর্ভে নতুন একটি প্রাণকে ধারণ করেন একজন নারী। নানা শারীরিক পরিবর্তন ও অসুবিধা মোকাবিলা করেই এগিয়ে চলে মাতৃত্বের একেকটি মধুর গল্প। কিন্তু আকস্মিক গর্ভপাত হলে সন্তানকে ঘিরে বুনে চলা সব স্বপ্নেরই মৃত্যু হয়। গর্ভপাত হলে একজন নারীর দেহ ও মনে তার প্রভাব পড়ে।
নতুন করে আবার সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করার আগে তাই একজন নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাচ্ছন্দ্যের দিকগুলো খেয়াল রাখা প্রয়োজন, এমনটাই বলছিলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. ফারজানা রশীদ।
ভাবনার দোলাচলে
গর্ভপাতের পর একজন নারী বিষণ্ন হয়ে পড়তে পারেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কেন তাঁর সঙ্গে এমনটা ঘটল, এ ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে যান। অনেকেই আবার গর্ভে সন্তান আসবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগতে থাকেন। এমনকি আবার গর্ভপাত হবে, এমন আশঙ্কাও থাকে অনেক মায়ের মনে। তাই গর্ভপাতের পর আবার সন্তানধারণ করতে চাইলে হবু মায়ের মানসিক স্থিরতার প্রয়োজন।
ন্যূনতম যে সময় প্রয়োজন
যদি কারও বয়স ৩০ পেরোনোর পর গর্ভপাত হয়, তাহলে ন্যূনতম তিন মাস পর আবার গর্ভধারণের পরিকল্পনা করতে হবে। বয়স ৩০–এর কম হলে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করা ভালো। এ সময়ের মধ্যে নতুন মায়ের পুষ্টি, বিশ্রাম ও মানসিক প্রশান্তির দিকে পরিবারের সদস্যদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। তবে গর্ভপাতের পর প্রথম দুই সপ্তাহ সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে। সন্তানধারণের পর নারীর দেহে বেশ কিছু হরমোনের পরিবর্তন ঘটে।
গর্ভপাত হলে জরায়ুতেও পরিবর্তন হয়। দেহকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার জন্য তাই পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। একটি প্রাণ একজন নারীর গর্ভে অল্প সময় থাকলেও মায়ের দেহের পুষ্টি নিয়েই সে বেড়ে ওঠে। গর্ভপাতের পর আবার সন্তান নেওয়ার আগে মায়ের শরীরের পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে হবে।
অমূলক আশঙ্কা নয়
এক বা একাধিকবার গর্ভপাত হয়ে যাওয়ার পরও একজন নারী স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ করতে পারেন। সুস্থ ও স্বাভাবিক একটি শিশুর জন্ম দিতে পারেন। তাই গর্ভপাত হলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন না। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের প্রতি গুরুত্ব দিন। টাটকা ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
গর্ভপাতের পর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শরীরচর্চা শুরু করুন। আপনার উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত, তা জেনে নিন। সেই ওজনের কাছাকাছি পৌঁছাতে চেষ্টা করুন। গর্ভধারণের পর তো বটেই, গর্ভধারণের পরিকল্পনার সময় থেকেই একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকুন। গর্ভধারণের অন্তত তিন মাস আগে থেকেই ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করুন।
ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। গর্ভবতী নারীর আশপাশে যেন কেউ ধূমপান না করেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে কোনো নারী যদি গর্ভপাতের পর মানসিকভাবে খুব বেশি ভেঙে পড়েন, তাঁর জন্য আবার গর্ভধারণের আগেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি।