কুলবরই ভালো, নাকি সাধারণ বরই
কারও পছন্দ কুলবরই, কারও–বা সাধারণ বরই। কেউ আবার খান বাউকুল বা আপেল কুল। স্বাস্থ্যের জন্য কোনটা ভালো? এত রকম বরইয়ের পুষ্টির তফাতই–বা কী? সব বরই কি সবাই খেতে পারেন? কিংবা বরইয়ের কি কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে? জেনে নিন আজ।
যেকোনো ধরনের বরইয়ে আছে ভিটামিন সি। শীতের সময়টায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ঠিক রাখতে তাই বরই খেতেই পারেন। পটাশিয়াম আর কিছুটা ক্যালসিয়ামও পাবেন, সামান্য জিঙ্ক ও কপার থাকে। খোসাসহ খাওয়া হয় বলে বরই থেকে আঁশও পাবেন, যা কোষ্টকাঠিন্য এড়াতে সাহায্য করে। আর জলীয় অংশ বা পানি তো থাকেই। বিভিন্ন জাতের বরই থেকেই আপনি এসব পুষ্টি উপাদান পাবেন। তবে বরইয়ের আকার বা জাত অনুযায়ী পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ কমবেশি হয়। আর লাল বরইয়ে এসবের পাশাপাশি পাবেন আয়রন ও বিটা ক্যারোটিন। এমনটাই জানালেন ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী।
ক্যালরির হিসাব-নিকাশ
ধরা যাক, আপনি দু-তিনটি বরই খেলেন। এই বরই থেকে আপনি ঠিক কতটা ক্যালরি পাবেন, তা নির্ভর করছে বরইয়ের আকার ও স্বাদের ওপর। স্বাভাবিকভাবেই যে বরইয়ের আকার বড় কিংবা যেটির স্বাদ মিষ্টি, সেটিতে ক্যালরির পরিমাণ কিছুটা বেশি হবে। তা সেটি যে জাতেরই বরই হোক না কেন। ১০০ গ্রাম বরই থেকে আপনি ৬০–৭০ কিলোক্যালরি পেতে পারেন।
ভালো–মন্দের তুলনায়
লাল বরইয়ে থাকা আয়রন রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে। এটি এমন এক খাবার, যাতে আপনি একই সঙ্গে পাচ্ছেন আয়রন ও ভিটামিন সি। আয়রন শোষণের জন্য ভিটামিন সি আবশ্যক। অর্থাৎ লাল বরই খেলে এর আয়রন আপনার দেহের কাজে লাগবে খুব ভালোভাবেই।
লাল বরইয়ে আরও পাবেন বিটা ক্যারোটিন। এই বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি দুটিই অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা আমাদের দেহের কোষকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
সাধারণ বরইয়ের চেয়ে কুলবরই ও বাউকুল বা আপেল কুল আকারে একটু বড় বলে এসব থেকে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান মিলবে তুলনামূলক বেশি। তবে সাধারণ বরইয়ের সংখ্যা বাড়িয়ে নিলেও কিন্তু পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ বাড়বে।
সাধারণ বরই পেকে গেলেও সুস্বাদু। কুল বরই বা বাউকুল পেকে গেলে অবশ্য সুস্বাদ থাকে না।
সাধারণ বরই শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। শুকনা বরই রান্নায়ও ব্যবহার করা যায়। রান্নার সময় ভিটামিন সি নষ্ট হলেও আপনি তা থেকে কিছু পুষ্টি উপাদান পাবেন। আর রান্নার স্বাদে আসবে ভিন্নতা। এমনকি কম স্বাদের পুষ্টিকর সবজি এভাবে রান্না করলে খাওয়ার উৎসাহও পেতে পারেন অনেকে। কুলবরই বা বাউকুল অবশ্য এভাবে রান্নার স্বাদ বাড়ায় না।
তবে টক স্বাদের সাধারণ বরই খেলে আবার কারও কারও অ্যাসিডিটি হতে পারে।
তাই একেবারে নির্দিষ্টভাবে এক জাতের বরইকে অন্য জাতের বরইয়ের চেয়ে ভালো হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুযোগ নেই।
আরও যা জেনে রাখা প্রয়োজন
অনেকেই লবণ-মরিচ মাখিয়ে বরই খান। তাতে বরই আরও সুস্বাদু হয়ে ওঠে; কিন্তু এভাবে বাড়তি লবণ গ্রহণের অভ্যাস এড়িয়ে চলাই স্বাস্থ্যকর। বাড়তি লবণের কারণে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
সকাল ১০টা–১১টার দিকে কাজের ফাঁকে কয়েকটি বরই খেতে পারেন। বিকেলের পর বরই খেলে কারও কারও অ্যাসিডিটির ঝুঁকি থাকে।
দুই বছরের কমবয়সী শিশুকে বরই দেবেন না। বরইয়ের বীজ গলায় আটকে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে শিশুর জীবন।
কিডনিতে পাথর হলে কিংবা কিডনিতে অন্য সমস্যা থাকলে বরই খাওয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ থাকতে পারে। এসব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের নির্দেশনা মেনে চলুন।