বিবর্ণ দাঁত কীভাবে সুন্দর করা যায়

আপনি যতই সুন্দর হোন না কেন, দাঁত সুন্দর না হলে সব ম্লান। কারও কারও দাঁত খুবই বিবর্ণ, বাদামি বা কালচে। এমন দাঁতের প্রধান কারণ চারটি। আসুন, এসব কারণ ও কীভাবেই–বা বিবর্ণ দাঁত সুন্দর করা যায়, এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক—

  • প্রথম কারণ, দাঁতের পৃষ্ঠে লেগে থাকা অবাঞ্ছিত পদার্থ। এগুলো কয়েক ধরনের। যেমন ১. ডেন্টাল প্লাক: সঠিকভাবে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করলে সহজেই মুখের লালা, জীবাণু ও খাদ্যকণা মিলে সাদা বা হলুদভাব স্তর হিসেবে দাঁতের পৃষ্ঠে জমতে থাকে। ২. পাথর: ডেন্টাল প্লাকের মধ্যে লালা থেকে আসা অজৈব পদার্থ এসে শক্ত পাথরে পরিণত হয়ে ক্যালকুলাস বা পাথর তৈরি করে। তখন দাঁত ও মাড়ির সংযোগ স্থান থেকে ধূসর বা কালো দাগ চোখে পড়ে। ৩. তামাক: ধূমপান, সাদাপাতা, গুল বা যেকোনো তামাকের ব্যবহার দাঁতের রং নষ্ট করার পাশাপাশি মুখের ক্যানসারসহ নানা অপূরণীয় ক্ষতির কারণ। ৪. কিছু খাবার, চা–কফি, অ্যালকোহল, কোমল পানীয় থেকেও দাঁত বিবর্ণ দেখাতে পারে।

দাঁতে আঘাত লাগলে অনেক সময় এর মধ্যে রক্তপাত হয় অথবা দাঁত মরেও যেতে পারে। সেখান থেকে দাঁত ধীরে ধীরে কালচে বা বাদামি হয়ে যায়।

এসব অবাঞ্ছিত দাগ ডেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শে স্কেলিং ও পলিশিং করিয়ে নিলে দাঁত আবার ঝকঝকে হয়ে যায়।

  • দ্বিতীয় কারণ দাঁতের ক্ষয়। ডেন্টাল ক্যারিজ হলে দাঁতের মধ্যে কালচে রং হতে শুরু করে, পরে বড় কালো গর্ত হয়ে যায়, জোরে জোরে দাঁত ব্রাশ, কয়লা–ছাই ব্যবহার, গ্যাস্ট্রিক হাইপার অ্যাসিডিটি, দাঁতে দাঁত ঘষার অভ্যাস থেকেও সাদা আবরণ ক্ষয়ে হলুদ স্তর বেরিয়ে আসে। অনেক সময় দাঁতের গঠনগত দুর্বলতা থেকে বিভিন্ন রং দেখা যায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দাঁতের সাদা স্তর এমনিতেই ক্ষয়ে হলুদ হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় দ্রুত ফিলিং করিয়ে নিলে সহজ সমাধান পাওয়া যায়।

  • তৃতীয় কারণ, গাত্রবর্ণ। অনেক ক্ষেত্রে যাঁরা কালো, তাঁদের দাঁত এমনিতেই সাদা হয় আর যাঁরা ফরসা, তাঁদের দাঁত হলুদ হয়ে থাকে।

  • চতুর্থ কারণ, দাঁতের নিজস্ব রং পরিবর্তন, যেমন ১. আঘাতজনিত: দাঁতে আঘাত লাগলে অনেক সময় এর মধ্যে রক্তপাত হয় অথবা দাঁত মরেও যেতে পারে। সেখান থেকে দাঁত ধীরে ধীরে কালচে বা বাদামি হয়ে যায়। ২. কিছু ওষুধ, যেমন কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, মাউথওয়াশ, অ্যান্টিহিস্টামিন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক, কেমোথেরাপিতে দাঁত বিবর্ণ হতে পারে। যকৃৎ বা রক্তের কোনো রোগেও দাঁত উজ্জ্বলতা হারায়। ৩. অপুষ্টি: বিশেষ করে ভিটামিন বি১২, ক্যালসিয়াম, ফসফরাসের ঘাটতিতে দাঁতে চিকন ফাটলের মতো পড়ে।

এসব ক্ষেত্রে টুথহোয়াটেনিং নিরাপদ চিকিৎসাব্যবস্থা। ক্ষেত্রবিশেষে ভিনিয়ার, লামিনেশন, এমনকি কাপ করে দাঁতের অবাঞ্ছিত দাগ ঢেকে দেওয়া হয়।

সতর্কতা

পাথর বা প্লাক থেকে বিবর্ণ হয়ে দাঁতে গর্ত ও মাড়ি রোগের সূত্রপাত হয়। সঠিক সময় চিকিৎসা না পেলে মুখের স্বাস্থ্য বিনষ্ট করে। আঘাতজনিত লালচে দাঁত পরীক্ষা না করালে দাঁতের গোড়ায় সিস্ট বা বড় ধরনের জটিলতা খুব বেশি দেখা যায়। দাঁত ও মাড়ির সংযোগে হলুদ ক্ষয় দাঁতকে দুর্বল করে শিরশির অনুভূতি দেয় ও পরে জটিলতা বাড়ায়, গঠনগত দুর্বল হয়েও ভেঙে যেতে পারে।

  • ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ: রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা