হাঁটার পোশাকে থাকুক আরাম

কোন ধরনের পোশাক পরে হাঁটা ভালো বা স্বস্তিদায়ক? সঙ্গেই–বা তখন কী ধরনের অনুষঙ্গ রাখতে হবে?

অন্য কোনো ব্যায়াম করতে না পারলেও দৈনিক ৩০ মিনিট হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। কাজটি করার সময় অনেকে টি–শার্ট বা ট্রাউজার পরেন। অনেকে আবার জিনস প্যান্ট পরেই হাঁটতে নেমে যান। আবার কেউ কেউ হাঁটার পোশাক হিসেবে সালোয়ার-কামিজকে বেছে নেন। তবে কোন ধরনের পোশাক পরে হাঁটা ভালো বা স্বস্তিদায়ক? সঙ্গেই–বা তখন কী ধরনের অনুষঙ্গ রাখতে হবে?

হাঁটার পোশাক হতে হবে মানানসই
ছবি: নকশা

নিজেকে ফিট ও আত্মবিশ্বাসী রাখতে নিয়মিত হাঁটেন এটিএন নিউজের সাবেক প্রধান সংবাদ পাঠক, সাংবাদিক ও শিক্ষক সাবিনা স্যাবি। সময়স্বল্পতা বা কাজের ব্যস্ততার কারণে প্রতিদিন বাইরে গিয়ে হাঁটা সম্ভব না হলে ঘরেই সেরে নেন কাজটি। এই সময় তিনি পরেন লেগিংস, টি–শার্ট। কাপড়টি হয় সাধারণত মিশ্র সুতির। পোশাকটি পরেন হালকা রঙের। বাইরে গিয়ে হাঁটলে পরেন লেগিংস আর একটু ঢোলা টি-শার্ট। ঘরে হাঁটলে পালাজ্জো বা লিনেন কাপড়ের প্যান্ট। শীতের সময় লম্বা গেঞ্জির ওপরে চাপিয়ে নেন জ্যাকেট। জ্যাকেটটা অবশ্য একটু ঢোলা হয়। সঙ্গে থাকে ট্রাউজার। জুতার ক্ষেত্রে চামড়ার নরম কেডসকেই বেছে নেন তিনি।

অনুষঙ্গ হিসেবে কী কী থাকে? সাবিনা স্যাবি বলেন, ‘গান বেশ পছন্দ করি। তাই হেডফোন কানে লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে হাঁটি। সঙ্গে থাকে ঘড়ি, রুমাল, পানির বোতল। হাঁটার মাঝখানে বসে একটু বিশ্রাম নিই। তখন হয়তো একটু পানি পান করি। মুঠোফোন সঙ্গে থাকে, তবে সেটি ব্যাগেই রেখে দিই। এ সময় কথা বলা পছন্দ নয়। খুব মনোযোগ দিয়ে হাঁটতে পছন্দ করি।’

হাঁটার মাঝে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিন
ছবি: নকশা

২০২০ সালের শেষ দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে হেঁটে গিয়েছিলেন নিত্যরঞ্জন বর্মণ। পৃথিবীর প্রায় ৪২টির মতো দেশে ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন তিনি। সাঁতরেও বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছেন। বর্তমানে ইয়োগা ট্রেনার হিসেবে কাজ করছেন। হাঁটার পোশাকে তিনিও মিশ্র সুতি পছন্দ করেন। তিনি বলছিলেন, হাঁটার সময় দেহে বাতাস সহজে চলাচল করবে, এমন পোশাক পরা ভালো। পলিস্টার, সিনথেটিক ইত্যাদি কাপড় দেহের তাপ ধরে রাখে। এ ধরনের পোশাক এড়িয়ে চলা জরুরি।

হাঁটার সময় ঘাম সহজে ঝরে যাবে, এমন পোশাক পরতে হবে। এ ক্ষেত্রে ড্রাই ফিট অ্যাকটিভ ওয়্যার সবচেয়ে ভালো। নাইকি, অ্যাডিডাস ইত্যাদি ব্র্যান্ডে এ ধরনের পোশাক পাওয়া যায়, জানান রুসলানস স্টুডিওর কর্ণধার ও ফিটনেস কোচ রুসলান হোসেইন।

হাঁটার সময় ছেলেরা হাফপ্যান্ট ও হাতাকাটা গোল গলার টি–শার্ট পরতে পারেন। এতে আরাম পাবেন। তবে জগিং করতে গেলে ট্রাউজার ভালো। ট্রাউজারে ইলাস্টিসিটি থাকে। জগিংয়ে সুবিধা হয়। এ ছাড়া বেশি গরমের সময় হাতাকাটা স্যান্ডো গেঞ্জিও পরতে পারেন। শীতে ফুলহাতা টি–শার্ট, ফুলপ্যান্ট পরা যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে টাইটস, টি–শার্ট পরা যেতে পারে।

ঢিলা কুর্তাও হতে পারে হাঁটার পোশাক
ছবি: নকশা

তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী অনেকেই সালোয়ার-কামিজ পরে হাঁটতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এটিও পরা যায়। তবে পোশাকটি কিছুটা ঢিলেঢালা ও মিশ্র সুতির হওয়াই ভালো। এ ছাড়া ফতুয়া, পালাজ্জো পরেও হাঁটা যায়। ফতুয়ার সঙ্গে হয়তো একটি স্কার্ফ থাকল। সাদা, চাপা সাদা, গোলাপি, সবুজাভ ইত্যাদি রং প্রাধান্য পেতে পারে। গরম কম লাগবে। এমনটাই পরামর্শ দিলেন জয়সান ইয়োগা অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারের কর্ণধার ও ইয়োগা ট্রেনার কুশল রায়।

জুতা

হাঁটার ক্ষেত্রে জুতা নির্বাচনের বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। আরামদায়ক ও ভালো উপকরণের জুতা না হলে ত্বকে সমস্যা হতে পারে। যেমন অ্যালার্জি, র‍্যাশ; এমনকি ভালোভাবে না ধুলে জুতার কাপড় থেকে কারসিনোজেন তৈরি হয়ে ক্যানসার হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এসব কথা জানিয়ে নিত্যরঞ্জন বর্মণ বলেন, কেনার আগে জুতা পরে দেখতে হবে। এমন জুতা কিনতে হবে যেন আঙুলে চাপ না পড়ে এবং পরার পর জুতার ভেতরের কাপড়টি বাড়ে। পাশাপাশি মোজাও পরতে হবে। এটিও খুব জরুরি। খালি জুতা পরলে পা ছিলে যেতে পারে।

জুতা নির্বাচনের বিষয়ে রুসলান হোসেইন বলেন, হাঁটার জন্য রানিং শু, অল পারপাস ট্রেনিং শু, ক্রস শু ইত্যাদি বেছে নিতে পারেন। এগুলো বিশেষভাবে ব্যায়ামের জন্য তৈরি করা হয়। একটু বাজার ঘুরলেই এ ধরনের জুতা পাওয়া যাবে।

জুতা নির্বাচনটাও জরুরি
ছবি: নকশা

অনুষঙ্গ

হাঁটার ক্ষেত্রে পোশাক, জুতা, মোজা ইত্যাদির পাশাপাশি সঠিক অনুষঙ্গ নির্বাচনটাও জরুরি। এতে শক্তি পাবেন। দিনে হাঁটতে বের হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন বা সানব্লক লাগিয়ে নিন। হাঁটার সময় সঙ্গে রাখতে পারেন রোদচশমা, ছাতা। এগুলো রোদ থেকে সুরক্ষা দেবে। পানির বোতল নিতে একদমই ভুলবেন না। হাঁটার মাঝখানে একটু একটু করে পানি পান করে নিতে পারেন। এতে পানিস্বল্পতা থেকে রেহাই পাবেন। ডায়াবেটিস রোগীরা হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধে সঙ্গে একটু চকলেট রাখতে পারেন। হাঁটার আগে একটু বাদাম, দুটো খেজুর খেয়ে নিতে পারেন।

এখন অনেক ধরনের স্মার্টঘড়ি পাওয়া যায়। কত স্টেপ হাঁটছেন, দেহের তাপ কত, হার্ট রেট কত ইত্যাদি জানিয়ে দেবে স্মার্টঘড়ি। সম্ভব হলে এমন একটি ঘড়িও সঙ্গে রাখা যেতে পারে, জানান ইয়োগা ট্রেনার কুশল রায়।

হাঁটা বা যেকোনো ব্যায়াম কেবল দেহকে সুস্থ রাখে না। মানসিক প্রশান্তিও আনে। আর এই প্রশান্তিকে পূর্ণোদ্যমে উপভোগ করতে পোশাকের বিষয়টি স্বস্তিদায়ক হওয়া চাই। সঙ্গে ঠিকঠাক অনুষঙ্গ থাকলে হাঁটাটি হবে পূর্ণ তৃপ্তির।