শীত শেষেও নিউমোনিয়ার ঝুঁকি কমেনি, সতর্ক থাকবেন যেভাবে
শীত শেষ। অনেকে ভাববেন, এ সময় নিউমোনিয়ার প্রসঙ্গ কেন? কিন্তু শীতের শেষ, মানে বসন্তে বা গ্রীষ্মের শুরুতেও অনেকে নানা ধরনের শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হন। মৌসুম পরিবর্তন রোগবালাইয়ের একটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। তা ছাড়া বসন্তের এ সময় ধুলাবালু বা গরমে অতিরিক্ত ঘাম জমে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের দেখা দিতে পারে নিউমোনিয়া।
নিউমোনিয়া মানে ফুসফুসের সংক্রমণ। সাধারণত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণে নিউমোনিয়া হয়। এতে ফুসফুসের ভেতর সংক্রমণের কারণে প্রদাহ হয়।
উল্লেখযোগ্য ধরন
পরিবেশগত কারণে অর্জিত নিউমোনিয়া বা কমিউনিটি অ্যাকোয়ার্ড নিউমোনিয়া একটি ধরন। এটি পরিবেশ বা সমাজের অন্য মানুষ থেকে ছড়ায়।
হাসপাতাল থেকে অর্জিত নিউমোনিয়া বা হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড নিউমোনিয়া আরেকটি ধরন। এটি নোসোকোমিয়াল নিউমোনিয়া নামেও পরিচিত।
বসন্তের এ সময় ধুলাবালু বা গরমে অতিরিক্ত ঘাম জমে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের দেখা দিতে পারে নিউমোনিয়া।
ঝুঁকিতে কারা
৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ। ৫ বছরের নিচের শিশু। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগী। দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন যেমন কিডনি, হার্ট ফেইলিউর ইত্যাদি। ধূমপায়ী। আগে থেকেই অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিসসহ ফুসফুসের কোনো রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তি। যেসব রোগী কেমোথেরাপি নিচ্ছেন বা ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ গ্রহণ করছেন।
লক্ষণ
প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। সঙ্গে কাশি ও শ্বাসকষ্ট।
হলুদ, সবুজ বা রক্তাক্ত শ্লেষ্মা হতে পারে।
সংক্রমণ যত বাড়ে, শ্বাসকষ্টও তত বাড়ে।
গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে ব্যথা হয়।
বিভ্রান্তি বা পরিবর্তিত মানসিক অবস্থা।
শনাক্তকরণ
নিউমোনিয়া নির্ণয়ে সাধারণত রক্ত পরীক্ষা ও বুকের এক্স-রে করাই যথেষ্ট। ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, ইলেকট্রোলাইট, এবিজির মতো কিছু পরীক্ষাও করা হয়।
চিকিৎসা
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক প্রয়োগ। ১০ থেকে ১৪ দিন অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়। জ্বরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে অক্সিজেন দিতে হবে। নিউমোনিয়া হলে রোগীকে প্রয়োজনমতো পানি খাওয়ানো উচিত। নিউমোনিয়া দ্রুত নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করা উচিত।
প্রতিরোধ
ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন।
সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করুন।
হাঁচি–কাশির সময় রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করুন।
বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতিবছর ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং পাঁচ বছর পরপর নিউমোককাল ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। নইলে অন্যরাও সংক্রমিত হতে পারেন।
বাইরে থেকে ফিরে হাত ধোয়ার অভ্যাস রাখুন।
অধ্যাপক ডা. এ কে এম মূসা, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর ১০, ঢাকা