প্রকৃতির সবুজ কীভাবে আপনার মানসিক চাপ কমায়, জানেন?

নাগরিক ব্যস্ততায় মন খুঁজে বেড়ায় এক খণ্ড সবুজ
ছবি: কবির হোসেন

কর্মব্যস্ত নগরজীবনে ঘরের ভেতরের কৃত্রিম আলোয় কাটে আমাদের বেশির ভাগ সময়। সারাক্ষণ কম্পিউটার, ট্যাব বা মুঠোফোনের স্ক্রিনে চোখ। এই কৃত্রিমতায় প্রায়ই হাঁপিয়ে ওঠে মন। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এমন একটা সময়ে মন খুঁজে বেড়ায় এক খণ্ড সবুজ। হোক তা অবারিত সবুজ মাঠ, দূরের কোনো ঘন বনজঙ্গল অথবা ব্যালকনির ছোট বাগান। কারণ, সবুজই আমাদের মনে আনে প্রশান্তি। আর দেহে সুস্থতা।

সবুজ প্রকৃতি মানুষের রাগ, হতাশা ও মানসিক অবসাদ কমিয়ে দেয়
ছবি: কবির হোসেন

কীভাবে সবুজ প্রকৃতি আমাদের ভালো রাখে?

১. যাঁরা পাহাড়ে ওঠেন বা মাউন্টেন ক্লাইম্বার, তাঁরা বলেন, এক ঘণ্টা ট্রেডমিলে হাঁটার চেয়ে এক ঘণ্টা পাহাড়ে ওঠা কম ক্লান্তিকর। কারণ, প্রাকৃতিক পরিবেশে চারদিকের সবুজ আর নির্মল বাতাস মানুষকে ক্লান্ত হতে দেয় না। দেহে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল নিঃসরণ কমে বলে মানুষের উদ্বেগ ও ক্লান্তিভাব কমে আসে।

২. সবুজ প্রকৃতি মানুষের রাগ, হতাশা ও মানসিক অবসাদ কমিয়ে দেয়। তাই পজিটিভ থিঙ্কিং বা ভালো চিন্তা বেশি করে, মুড ডিজঅর্ডার কম হয়।

৩. কৃত্রিম আলোয় চোখের মাংসপেশিতে স্ট্রেস বা টান বেশি পড়ে, চোখ দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ সবুজের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের মাসলগুলো রিলাক্সড হয়। মায়োপিয়া (কাছের জিনিস দেখতে না পাওয়া) থেকে বাঁচায়।

সবুজ প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থাকলে আমাদের মনোযোগ বাড়ে, বৃদ্ধি পায় সৃজনশীলতা
ছবি: কবির হোসেন

৪. সবুজ প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থাকলে আমাদের মনোযোগ বাড়ে, বৃদ্ধি পায় সৃজনশীলতা। মেমোরি বা স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। তাই যাঁরা প্রকৃতির মধ্যে বেশি সময় কাটান, তাঁদের ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়া রোগ কম হয়। সবুজ পরিবেশের সংস্পর্শে থাকলে সিজোফ্রেনিয়া, অ্যাটেনশন ডেফিশিয়েট ডিজঅর্ডার ও মুড ডিজঅর্ডারের মতো মানসিক রোগ কম হয়।

৫. ঘরের ভেতরের বদ্ধ বাতাস আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে দেয়। অ্যালার্জি ও ফুসফুসের অসুখ বাড়িয়ে মৃত্যুহারও বাড়িয়ে দেয়। প্রকৃতি ও সবুজ গাছপালা প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। বাড়িয়ে দেয় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। অনিদ্রা দূর করে এবং কর্মক্ষমতাকে বাড়ায়।

৬. পার্কে অনেক মানুষ একসঙ্গে হাঁটছে, গল্প করছে। এতে নিজেদের মধ্যে যেমন একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে, তেমনি হার্টের অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের বৃদ্ধি ও স্থূলতা এগুলোও কমে আসছে।

সবুজ গাছপালা ও নির্মল বাতাস শুধু আমাদের পরিবেশের জন্যই প্রয়োজনীয় নয়, আমাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্যও দরকারি
ছবি: কবির হোসেন

কীভাবে থাকবেন সবুজের সংস্পর্শে?

সবুজ গাছপালা ও নির্মল বাতাস শুধু আমাদের পরিবেশের জন্যই প্রয়োজনীয় নয়, আমাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্যও দরকারি। যাঁরা পাথরে বিশ্বাস করেন, তাঁরা এমারেল্ড বা সবুজ পান্নাকে হিলিং স্টোন মনে করেন। আমরা আমাদের প্রতিদিনের রুটিন কিছুটা পরিবর্তন করেই সবুজের সংস্পর্শে থাকতে পারি।

১. সপ্তাহের ছুটির দিনে প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া যেতে পারে। ঘুরে আসা যেতে পারে কাছাকাছি কোনো নদীর তীর, বাচ্চাদের নিয়ে বড় কোনো সবুজ মাঠ বা ছুটি নিয়ে পাহাড়ে।

২. বাসার পাশে বা ছাদে অথবা ছোট্ট বারান্দায় বাগান করাই যায়। সময়ও কাটবে, সঙ্গে স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। ঘরের কোণে, জানালার পাশে ছোট্ট ইনডোর প্ল্যান্ট রাখা যায়। ঘরটাই সবুজ হয়ে উঠবে।

৩. কর্মস্থলে নিজেদের বসার জায়গাগুলোতে ছোট্ট সবুজ গাছ রাখা যেতে পারে। ডেস্কটা জানালার পাশে সেট করা যায়। যেন কাজের চাপে চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়লে কিছু সময়ের জন্য জানালা দিয়ে বাইরে তাকানো যায়।

৪. বন্ধুদের সঙ্গে আউটিং রেস্টুরেন্টে না করে কোনো খোলা জায়গায় বা সবুজ পার্কে করা যেতে পারে। ক্লান্তি কাটিয়ে সতেজ হতে সাহায্য করবে।


ডা. আফলাতুন আক্তার জাহান, স্পেশালিস্ট (ইন্টারনাল মেডিসিন), স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা।