যে রোগে শরীর শক্ত হয়ে যায়
স্টিফ পারসন সিনড্রোম কোনো সাধারণ রোগ নয়। প্রতি ১০ লাখ মানুষের ভেতর মাত্র ১ জনের হয়ে থাকে এই রোগ। বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, বিশ্বখ্যাত ‘টাইটানিক’ সিনেমার ‘মাই হার্ট উইল গো অন’ গানের গায়িকা সেলিন ডিওন এই দুর্লভ রোগে আক্রান্ত।
প্রায় দুই বছর পর প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী আসরে দেখা মিলল বিশ্বসংগীতের এই তারকার। ভ্যারাইটির সর্বশেষ খবর অনুযায়ী এখন অনেকটাই ভালো আছেন ৫৬ বছর বয়সী সেলিন। জেনে নেওয়া যাক, কী এই জটিল স্নায়ুরোগ, স্টিফ পারসন সিনড্রোম।
রোগটি কাদের হতে পারে
এই রোগের সঙ্গে অন্যান্য অটো ইমিউন রোগ থাকতে পারে। যেমন টাইপ ১ ডায়াবেটিস মেলাইটাস, থাইরয়েডাইটিস, শ্বেতী বা ধবল রোগ, পারনিসিয়াস অ্যানিমিয়া ধরনের রক্তশূন্যতা ইত্যাদি।সাধারণত ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে এই রোগ শুরু হয় । নারীরা পুরুষদের চেয়ে ২ থেকে ৩ গুণ বেশি আক্রান্ত হন।
এই রোগে কী হয়
মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়, একে বলে লর্ডোসিস। মেরুদণ্ডের পেশিতে স্পাজম বা টান লাগতে পারে। বিশেষ করে হঠাৎ কোনো নাড়াচাড়া করার সময় বা কোনো শব্দে বা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লে।
রোগীর হাঁটাচলায় অস্বাভাবিকতা দেখা যেতে পারে। তবে বুদ্ধি ও চেতনার কোনো ক্ষতি হয় না।
স্টিফ পারসন সিনড্রোম তিন ধরনের হয়। ক্ল্যাসিক টাইপ ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়। আংশিক ধরনের কেবল একটা পায়ে আক্রমণ করে। এ ছাড়া পেট, বুক বা চোখের মাংসপেশির স্পাজম হতে পারে। তীব্র ব্যথা হতে পারে চোখে। কোনো কোনো ক্যানসারের সঙ্গেও প্যারানিওপ্লাস্টিক স্টিফ পারসন সিনড্রোম দেখা দিতে পারে।
মাংসপেশি বোর্ডের মতো শক্ত হয়ে যায় বলেই হাঁটাচলায় সমস্যা হয়।
অটোনমিক স্নায়ু আক্রান্ত হলে হঠাৎ ভীষণ জ্বর, ঘাম হওয়া, বুক ধড়ফড় করা, ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া, রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে। আকস্মিকভাবে অটোনমিক ডিসফাংশন হয়ে ডায়াফ্রাম স্পাজমের কারণে শ্বাসকষ্ট হয়ে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
যেসব কাজ করলে স্পাজম বাড়ে, সেগুলো করতে রোগীরা ভীত হয়ে পড়েন। যেমন রাস্তা পারাপার। এই আতঙ্কের কারণেও তাঁরা বিষণ্ন হয়ে পড়েন এবং স্পাজম আরও বেশি হয়।
চিকিৎসা কী
স্টিফ পারসন সিনড্রোম সঠিকভাবে শনাক্ত করার জন্য রক্ত ও সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড অ্যান্টিবডি শনাক্ত করা হয়। বেঞ্জোডায়াজেপিন বা ব্যাক্লফেন জাতীয় পেশি শিথিলায়ন ওষুধ দিয়ে প্রথম থেকেই চিকিৎসা শুরু করা না হলে বড় অস্থিসন্ধিতে (নিতম্ব, হাঁটু, গোড়ালি বা কাঁধ) স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
এ ছাড়া রোগের তীব্রতা কমাতে ইমিউন সাপ্রেসিভ ওষুধ, শিরায় ইমিউনো গ্লোবিউলিন, প্লাজমা এক্সচেঞ্জ জাতীয় চিকিৎসা করা হয়। কিছু কিছু ক্যানসার যেমন স্তন, ফুসফুস ক্যানসার, হজকিনস লিম্ফোমার সঙ্গে এ রোগ দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে টিউমার অপসারণের পর গ্লুকোকর্টিকয়েড দিলে কিছুটা উন্নতি হয়।
ডা. রোজানা রউফ, অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট, স্কয়ার হসপিটাল