যে ৮ উপায়ে জাঙ্ক ফুড খাওয়া বন্ধ করবেন
আমরা কমবেশি সবাই জাঙ্ক ফুড খাই। ক্ষতিকর জানার পরও বাদ দিতে পারি না। জাঙ্ক ফুড বলতে বোঝায় অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, চকলেট, কুকিজ, আইসক্রিম, চিপস ও অন্যান্য মিষ্টি খাবার।
এগুলো হৃদ্রোগ, স্থূলতা, বিষণ্নতা, ফ্যাটি লিভার, উচ্চ রক্তচাপ এমনকি কোনো কোনো ক্যানসারেরও ঝুঁকি বাড়ায়। জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে থাকতে নিচের উপায়গুলো মেনে চলতে পারেন।
১. বাসায় রান্নার অভ্যাস করুন
জাঙ্ক ফুড বর্জন করার সহজ উপায় হলো বাসায় বেশি বেশি রান্না করা। আমরা যখন ব্যস্ত থাকি, তখন মিষ্টি, ডোনাট বা ফাস্ট ফুডের মতো সুবিধাজনক খাবার বেছে নিই। তবে বাসায় রান্নার অভ্যাস করলে এই খাবারগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা বাসায় রান্না করেন, তাঁরা বেশি শাকসবজি ও ফল খান, কম ফাস্ট ফুড খান। যার কারণে তাঁদের ওজন বাড়ার ঝুঁকিও কম থাকে। এ ছাড়াও বাসায় রান্না করলে খাবারের খরচও কম হয়।
২. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন
ডিম, বাদাম, দুধ, ডাল বা চর্বিহীন মাংস—এই ধরনের খাবার জাঙ্ক ফুডের প্রতি আকর্ষণ কমাতে সাহায্য করে। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেলে ক্ষুধা ও মিষ্টি খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমে। এ কারণে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখুন।
৩. খালি পেটে থাকবেন না
শুকনো মাটিতে পানি ঢাললে পানি যেমন দ্রুত শুষে নেয়, ঠিক সেভাবে আপনি যখন ক্যালরি বা খাবার অতিমাত্রায় কমিয়ে দেন, তখন অতিরিক্ত খাওয়ার আগ্রহ তৈরি হয়। পাশাপাশি জাঙ্ক ফুড খাওয়ার আগ্রহ বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, হুট করে কোনো খাবার বন্ধ করলে সেই খাবার খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায়। তাই খাবারের পরিমাণ কমাতে চাইলে ধীরে ধীরে কমাতে হবে । আর পেট দীর্ঘ সময় খালি না রেখে নিয়মিত বিরতিতে খাবার খান।
৪. পেট ভরা রাখে এমন খাবার খান
পেট ভরা রাখতে প্রোটিন ও ফাইবার–সমৃদ্ধ খাবার বেছে নিন। যেমন ডিম, ডাল, বাদাম, ওটস, চিনি ছাড়া কফি, ফল ইত্যাদি। এ ধরনের খাবার পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, কমায় মুখরোচক জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা।
৫. পর্যাপ্ত ঘুমান
ঘুম কম হলে ক্ষুধার হরমোন বেড়ে যায়, যার ফলে ক্যালরিযুক্ত খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দিয়েছে। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে সুস্থ রাখে এবং জাঙ্ক ফুডের প্রতি আকর্ষণ কমায়।
৬. দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন
স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা আমাদের শরীর ও মনের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে এবং খাবারের পছন্দেও প্রভাব ফেলে। দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যাস কমানো সম্ভব। দীর্ঘদিন ধরে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকলে কর্টিসল নামক হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা ক্ষুধা এবং খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ায়। যদিও স্বল্পমেয়াদি দুশ্চিন্তায় ক্ষুধা কমে যায়। তবে দীর্ঘদিন ধরে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকলে সাধারণত জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
৭. চোখের সামনে থেকে জাঙ্ক ফুড সরিয়ে ফেলুন
রান্নাঘর বা ডাইনিং টেবিলে জাঙ্ক ফুড দেখলে খাওয়ার ইচ্ছা বেড়ে যায়। এমনকি ক্ষুধা না থাকলেও। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, চকলেট, চিপস বা কুকিজের মতো খাবার চোখের সামনে থাকলে মস্তিষ্কের স্ট্রিয়াটাম নামক একটি অংশ সক্রিয় হয়ে সেগুলো খেতে উৎসাহিত করে। তাই চোখের সামনে থেকে জাঙ্ক ফুড সরিয়ে ফেলুন। বদলে টেবিলে ফলমূল বা স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স রাখুন।
৮. কঠোর ডায়েট করবেন না
হুট করে কঠোর ডায়েট স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। খুব বেশি ‘কঠোর ডায়েট’ মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি খাবারের প্রতি আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি করতে পারে। কঠোর ডায়েটের ফলে সাময়িকভাবে ওজন কমলেও পরে খাওয়ার ইচ্ছা বেড়ে যায়। যা ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়।
তথ্যসূত্র: হেলথ