ইলেকট্রিক শক খেলে কী করবেন
আমাদের দেশে যত পোড়া রোগী দেখা যায়, তাদের একটা বড় অংশই হাসপাতালে আসেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট (ইলেকট্রিক শক) হয়ে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে কী করব, কীভাবে এর প্রতিরোধ করা যায়, চলুন জানার চেষ্টা করি।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট কীভাবে হয়
বিদ্যুতের লাইন ঠিক করার সময়। হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ক্ষেত্রে শারীরিক ক্ষতি ও মৃত্যুঝুঁকি—দুটোই বেশি।
বাসায় বাচ্চারা অনেক সময় খোলা তার মুখে দেয়, প্লাগে হাত দেয়। এগুলোর ক্ষেত্রে ভোল্টেজ কম হলেও ক্ষতির মাত্রাটা কম নয়।
বৈদ্যুতিক সংযোগগুলো নিরাপদ না হলে।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে।
ঝড়বৃষ্টিতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পানিতে বা ভেজা স্থানে পড়লে।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার উপসর্গ কী
আক্রান্ত ব্যক্তির উপসর্গ কতটা গুরুতর, বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর তা নির্ভর করে। যেমন ভোল্টেজের মাত্রা কত ছিল, কতক্ষণ সে বিদ্যুতের সংস্পর্শে ছিল, তার হৃদ্জনিত বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা আছে কি না, ইত্যাদি। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে সবচেয়ে বড় দুটি শারীরিক সমস্যা হলো পুড়ে যাওয়া ও হৃদ্যন্ত্রের ওপর চাপ সৃষ্টি হওয়া, হৃৎস্পন্দন এলোমেলো বা বন্ধ হয়ে যাওয়া।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে ত্বকে কী ধরনের ‘বার্ন’ হতে পারে
ত্বকের উপরিভাগ পোড়া বা সুপারফিশিয়াল বার্ন: এ ক্ষেত্রে শুধু ত্বকের উপরিভাগ আক্রান্ত হয়। চামড়া লাল ও শুকনো হয়ে যায়। অনেক ব্যথা থাকে। চামড়ায় ঘষা দিলে সাদা হয়ে যায়।
পারশিয়াল থিকনেস বার্ন: এখানে ত্বকের উপরিভাগের দুটি স্তর পুড়ে যায়, ফলে ফোসকা পড়ে।
ফুল থিকনেস বার্ন: ত্বকের সব স্তর পুড়ে যায়, ফলে কোনো স্পর্শ বা ব্যথা অনুভূত হয় না। এ ক্ষেত্রে চামড়া কালো হয়ে যায়।
হৃৎপিণ্ড: হৃৎস্পন্দন এলোমেলো হয়ে যায়। অনেক সময় বন্ধ হয়ে যায়, একে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বলে।
মাংসপেশি: যদি মাংসপেশি অনেক বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তখন র্যাবডোমায়োলাইসিস হয়, যা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। অনেক সময় কিছু মাংসপেশির প্রেশার বেড়ে গিয়ে কম্পার্টমেন্ট সিনড্রোম হয়ে যায়, তখন আক্রান্ত হাত অথবা পা কেটে ফেলতে হয়।
এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির স্নায়ুর ওপর চাপ তৈরি হয়। শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, আক্রান্ত স্থান অথবা পুরো শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন।
প্রাথমিক চিকিৎসা কী
কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে কোনোভাবেই তার সংস্পর্শে আসা যাবে না বা তার গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। প্রথমে বিদ্যুতের উৎস বন্ধ করতে হবে। অর্থাৎ বাসা বা কারখানার বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করতে হবে।
কাঠ বা প্লাস্টিকের লাঠিজাতীয় কিছু দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিদ্যুতের উৎস থেকে আলাদা করতে হবে। কোনোভাবেই ধাতব কিছু ব্যবহার করা যাবে না। আক্রান্ত ব্যক্তিকে জোরে আঘাত করা যাবে না।
নিরাপদ স্থানে নেওয়ার পর আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস ও পালস পরীক্ষা করতে হবে। যদি না থাকে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সিপিআর বা কৃত্রিম শ্বাস চালু করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
যদি ত্বক সামান্য পোড়া হয়, তাহলে আক্রান্ত স্থানে ঠান্ডা পানিতে ভেজানো কাপড় জড়িয়ে দিতে হবে। বরফ দেওয়া যাবে না।
ডাক্তারের পরামর্শমতো ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট লাগাতে হবে।
ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে।
মারাত্মক পোড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিবায়োটিক বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সংস্পর্শ থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখতে হবে।
বিদ্যুতের তার, সুইচ ও সংযোগের যন্ত্রপাতি নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। ত্রুটি থাকলে অবশ্যই সারিয়ে নিতে হবে বা বদলে ফেলতে হবে।
অবৈধ সংযোগ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
বাথরুম বা ভেজা স্থানে বিদ্যুতের উৎস যাতে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
অটোমেটিক সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করতে হবে। অথবা কোনো সমস্যা হলে দ্রুত বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়, এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে।
ডা. আফলাতুন আকতার জাহান, মেডিসিন স্পেশালিস্ট, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড