রক্ত দিলে কি শরীরের রক্ত কমে যায়
রক্তস্বল্পতা হয়—এমন কিছু পরিস্থিতিতে (যেমন থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, দুর্ঘটনা, অস্ত্রোপচার, প্রসবপরবর্তী রক্তক্ষরণ) রোগীর শরীরে জরুরি ভিত্তিতে রক্ত দেওয়া লাগে। আমাদের দেশে স্বেচ্ছায় অনেকেই রক্ত দান করেন, যা বিভিন্ন ব্লাডব্যাংকে জমা থাকে এবং সেখান থেকে এই রক্ত রোগীদের জন্য সংগ্রহ করা হয়। রক্তদান একটি মহৎ কাজ। কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, অন্যকে দিলে কি নিজের শরীরে রক্ত কমে যায়? কিংবা রক্ত দেওয়ার পরে রক্তদাতার কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়?
রক্ত মানবদেহের একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। প্রতিটি সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে প্রায় ৫ লিটার রক্ত থাকে। রক্তের মধ্যে ৫৫ শতাংশ তরল প্লাজমা থাকে, বাকি ৪৫ শতাংশ রক্তকোষ। রক্তে তিন প্রকার রক্তকোষ থাকে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকে লোহিত রক্তকণিকা। এই লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হয় অস্থিমজ্জা থেকে। এর জীবনকাল মাত্র ৪ মাস বা ১২০ দিন। অর্থাৎ ১২০ দিন পরপর আমাদের শরীরে অস্থিমজ্জা থেকে নতুন নতুন লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হচ্ছে।
রক্তদানের সময় যে ব্যাগে রক্ত সংগ্রহ করা হয়, তার আয়তন ৪৫০ মিলিলিটার। অর্থাৎ প্রতিবার রক্ত দেওয়ার সময় রক্তদাতার ৪৫০ মিলিলিটার রক্ত নেওয়া হয়, যা শরীরের মোট রক্তের শতকরা ৮ ভাগ মাত্র। যেহেতু ১২০ দিন পরপর আমাদের শরীরে নতুন লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হচ্ছে, তাই তিন থেকে চার মাস পরপর রক্ত দিলে প্রকৃতপক্ষে শরীরের রক্ত কমে না।
রক্ত দেওয়ার আগে
নিয়মিত রক্তদানের জন্য আয়রন, ভিটামিন সি এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। রক্ত দেওয়ার আগের দিন ১০ গ্লাস পানি বা তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে। চা, কফি, অ্যালকোহল, দুধ, দই, আইসক্রিম, চকলেট, ভাজা খাবার সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে। আগের রাতে ভালো ঘুম দরকার। রক্তদানের কমপক্ষে দু–তিন ঘণ্টা আগেই পেট ভরে খাবার খেতে হবে এবং কমপক্ষে আধা লিটার পানি বা তরল পানীয় পান করতে হবে। খালি পেটে রক্ত দেওয়া যাবে না।
রক্ত দেওয়ার পরে
রক্তদানের পরে ১৫ মিনিট বিশ্রাম ও পর্যবেক্ষণে থাকা উচিত। এ সময়ে স্ন্যাকস ও পানিস্বল্পতা পূরণের জন্য তরল খাবার, যেমন প্রচুর পানি, ফলের জুস, হারবাল চা পান করা উচিত। প্রথম তিন ঘণ্টায় তিন গ্লাস তরল পান করা উচিত। ভুলেও মদ বা অ্যালকোহল গ্রহণ করা যাবে না। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা ব্যায়াম কিংবা অন্য কোনো ভারী কাজ করা যাবে না। গরম পানি দিয়ে গোসল করা যাবে না। এ ছাড়া রক্তদানের পর সামান্য যে ঘাটতি হয়, তা পূরণের জন্য আয়রনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন কলা, কচুশাক, অন্যান্য পাতাযুক্ত সবুজ শাক, খেজুর, টমেটো, তরমুজ, ছোলা, বাদাম, কলিজা, লাল মাংস ইত্যাদি এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন মুরগির মাংস, মাছ, ডিম, শিম, বরবটি, মসুর ডাল, দুগ্ধজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। ভিটামিন সি–জাতীয় খাবার, যেমন কমলা, লেবু, স্ট্রবেরি, টমেটো ইত্যাদি শরীরে আয়রন হজমে সাহায্য করে। তাই এগুলোও নিয়মিত খেতে হবে।
ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন, প্রভাষক, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ