কোলোরেক্টাল ক্যানসারের কোন কোন লক্ষণে সতর্ক হওয়া উচিত
মার্চ মাসকে বিশ্বব্যাপী কোলোরেক্টাল ক্যানসার সচেতনতা মাস হিসেবে পালন করা হয়। কোলোরেক্টাল ক্যানসার মানে হলো বৃহদন্ত্র ও রেকটামের ক্যানসার। এটি বিশ্বের প্রাণঘাতী ক্যানসারগুলোর একটি। বাংলাদেশেও এই রোগের হার দিন দিন বাড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ছয় হাজার মানুষ নতুন করে কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হন, এর মধ্যে সাড়ে তিন হাজার মৃত্যুবরণ করেন।
কোন কোন লক্ষণে সতর্ক হওয়া উচিত
এই ক্যানসার শুরুতে নীরব ঘাতক হতে পারে, মানে অনেক সময় উপসর্গহীন থাকতে পারে। তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।
নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন
মলে রক্ত আসা বা মল কালো রঙের হওয়া
পেটের নিচের অংশে দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা, গ্যাস বা ফুলে থাকা
হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া
ক্ষুধামান্দ্য বা ক্লান্তিভাব
এসব লক্ষণ অন্যান্য সাধারণ রোগের সঙ্গেও মিলে যেতে পারে, তবে অবহেলা করলে বিপদ বাড়বে।
স্ক্রিনিং কেন গুরুত্বপূর্ণ
বেশির ভাগ কোলোরেক্টাল ক্যানসার শুরু হয় ছোট পলিপ (মাশরুমের মতো ছোট টিস্যু) দিয়ে, যা প্রাথমিক অবস্থায় কোনো লক্ষণ প্রদর্শন করে না। নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে এই পলিপ আগেভাগে শনাক্ত ও অপসারণ করা গেলে ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। ৫০ বছর বয়সের পর প্রত্যেকের নিয়মিত স্ক্রিনিং করা উচিত।
তবে যদি পরিবারের কারও আগে কোলোরেক্টাল ক্যানসার থাকে, তাহলে ৪০ বছর বা তারও আগে স্ক্রিনিং শুরু করা দরকার। স্ক্রিনিংয়ের পদ্ধতি হিসেবে রয়েছে মলে রক্ত পরীক্ষা, ফ্লেক্সিবল সিগমায়েডোস্কোপি ও কোলোনোস্কপি।
চিকিৎসা কী
ক্যানসারের ধাপ অনুযায়ী চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়।
১. সার্জারি: ক্যানসার অপসারণ
২. কেমোথেরাপি: ওষুধ দিয়ে ক্যানসার কোষ ধ্বংস
৩. রেডিওথেরাপি: রেডিয়েশন দিয়ে ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ
৪. টার্গেটেড থেরাপি ও ইমিউনোথেরাপি
কোনো কোনো ক্ষেত্রে একসঙ্গে একাধিক চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়। যেমন সার্জারির পর কেমোথেরাপি বা টার্গেটেড থেরাপি দিতে হয়।
প্রতিরোধেই মুক্তি
সুষম ও আঁশযুক্ত খাবার, পর্যাপ্ত পানি খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার—এসব কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ফাস্ট ফুড বা বাইরের খাবার কোলোরেক্টাল ক্যানসারের অন্যতম রিস্ক ফ্যাক্টর। সচেতনতা, আগাম পরীক্ষা ও সময়মতো চিকিৎসা—এ সবই কোলোরেক্টাল ক্যানসারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হিসেবে কাজ করে।
ডা. আরুনাংশু দাস, কনসালট্যান্ট, অনকোলজি, স্কয়ার হসপিটাল লিমিটেড, ঢাকা