গরম কি নারীর জন্য বেশি ক্ষতিকর

প্রাকৃতিক কারণেই একজন নারীর জীবন একজন পুরুষের চেয়ে আলাদা। স্বাভাবিক নিয়মেই একজন নারীকে জীবনজুড়ে বেশ কিছু বিশেষ সময় পেরোতে হয়। এমন বিশেষ সময়ে গরম আবহাওয়া কি নারীর জন্য বাড়তি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়?

গরমের সময়টায় নারীর শারীরবৃত্তীয় অস্বস্তি বাড়ে, দেখা দিতে পারে অসুস্থতা
ছবি: পেক্সেলস

বয়ঃসন্ধিতে শুরু হওয়া মাসিক একজন সুস্থ নারীর জীবনের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলমান থাকে। মেনোপজের পর আবার দেহমনে আসে কিছু পরিবর্তন। বয়ঃসন্ধি থেকে শুরু করে এই পুরো বিষয়টির সঙ্গেই জড়িত থাকে হরমোনের প্রভাব। গর্ভাবস্থায় আবার হরমোনের এই ব্যাপার বদলে যায়। স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় এসব বিষয়ের কোনোটিই গরম আবহাওয়ার কারণে সরাসরি বাধাগ্রস্ত হয় না। তবে গরমের সময়টায় নারীর জীবনের এই স্বাভাবিক বিষয়গুলোর প্রতি যত্নশীল হওয়া আবশ্যক। নইলে অস্বস্তি বাড়ে। দেখা দিতে পারে অসুস্থতা। এই সময়ে করণীয় সম্পর্কে বলছিলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. ফারজানা রশীদ।

মাসিকের সময়

গরমের সময় মাসিক হলে দেহে তরলের ঘাটতি হতে পারে খুব সহজেই
ছবি: পেক্সেলস

যেকোনো মৌসুমেই মাসিকের সময় পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করা আবশ্যক। নইলে রক্তক্ষরণের কারণে একজন নারী পানিশূন্যতায় ভুগতে পারেন। গরমে ঘামও হয় খুব। তার মানে, গরমের সময় মাসিক হলে দেহে তরলের ঘাটতি হতে পারে খুব সহজেই। তাই এই সময় পানি ও তরল খাবার একটু বেশিই খেতে হবে। ঘামের কারণে ব্যক্তিগত পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার দিকেও বাড়তি খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মমাফিক বদলে ফেলতে হবে স্যানিটারি ন্যাপকিন। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা না হলে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। বাড়ির কিশোরী সদস্যটিকেও এসব বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে।

মেনোপজের পর

ঘুম ভেঙে গেলে বালিশটাকে উল্টে দিয়ে আবার শোয়া যেতে পারে
ছবি: পেক্সেলস

মেনোপজের পর অনেকেরই হুট করে গরম বোধ করার সমস্যা দেখা দেয়। যেকোনো মৌসুমেই দেখা দিতে পারে এমন সমস্যা। স্বস্তির জন্য বাড়তি ফ্যান রাখা যেতে পারে মাথার কাছে। প্রয়োজনে হাত–মুখ ধুয়ে নিতে হবে কিংবা ভেজা কাপড় দিয়ে মুখ মুছে নিতে হবে। বাইরে গেলেও ব্যাটারিচালিত ছোট ফ্যান সঙ্গে নেওয়া যেতে পারে। আরামদায়ক পোশাক পরতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল খাবার অবশ্যই খেতে হবে। রাতে গরমে ঘুম ভেঙে গেলে বালিশটাকে উল্টে দিয়ে আবার শোয়া যেতে পারে। বালিশের উল্টো পাশ দেহের সংস্পর্শে থাকে না বলে অতটা গরম হয়ে ওঠে না।

গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানের সময়

গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়ের পোশাক হতে হবে আরামদায়ক ও ঢিলেঢালা
ছবি: সংগৃহীত

গরমের সময় প্রচুর ঘাম হওয়ার কারণে একজন গর্ভবতী মায়ের দেহে সহজেই পানি ও লবণের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। দু–এক বেলার পানীয়ে সামান্য লবণ মিশিয়ে নিতে পারেন, শারীরিক কোনো সমস্যার কারণে লবণ গ্রহণে কোনো নিষেধাজ্ঞা যদি না থাকে। বাইরে গেলেও নিরাপদ পানি গ্রহণ করা আবশ্যক। অনিরাপদ পানি দিয়ে তৈরি করা পানীয় খেলে পেটের পীড়া হতে পারে। খেয়াল রাখুন, খাবারে যাতে মাছি বা তেলাপোকা না বসে। বাসি খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। খাবারের মাধ্যমে অন্যান্য জীবাণুর পাশাপাশি হেপাটাইটিস ই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। গর্ভাবস্থায় এই সংক্রমণ মারাত্মক হয়ে দাঁড়াতে পারে। স্তন্যদানকারী মাকেও পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপদ পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে। যদি কারও ঠান্ডায় অ্যালার্জি না থাকে, তাহলে গর্ভাবস্থায় কিংবা স্তন্যদানের সময় ঠান্ডা পানি বা পানীয় খেতে মানা নেই। তবে অতিরিক্ত গরমের মধ্যে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি খেলে যে কারওই ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তাই পরিমিতিবোধ বজায় রাখতে হবে। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়ের পোশাক হতে হবে আরামদায়ক ও ঢিলেঢালা। যতটা সম্ভব, ছায়ায় থাকুন। ঘামে পোশাক ভিজে গেলে বদলে ফেলুন।