মাঝেমধ্যে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ব্ল্যাকআউট কেন হয়?
চোখের সামনে হঠাৎ সব অন্ধকার দেখাকেই বলে ব্ল্যাকআউট। আরও সহজভাবে বললে, কয়েক মুহূর্তের জন্য অজ্ঞান হয়ে যাওয়া মানেই ব্ল্যাকআউট। সময়টা কয়েক মিলি সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তারপর হয়তো নিজে থেকেই আবার ঠিক হয়ে যায় সব। কিন্তু এমন কেন হয়? এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার উপায় আছে কী?
ব্ল্যাকআউট নিজে কোনো রোগ না হলেও একে বলা যায় ‘বড় বিপদের পূর্বলক্ষণ’। তাই এমনটা ঘটলে সতর্ক হওয়া জরুরি। এর কারণ খুঁজে বের করে চিকিৎসা নিতে হবে দ্রুত।
ব্ল্যাকআউটের লক্ষণ কী কী
১. হঠাৎ ভীষণ দুর্বল লাগা, দাঁড়ানো অবস্থা থেকে হঠাৎ পড়ে যাওয়া।
২. কথা বলতে সমস্যা হওয়া বা কথা জড়িয়ে যাওয়া।
৩. হাঁটতে বা দাঁড়াতে ভারসাম্যহীনতা বোধ করা।
৪. চোখে ঝাপসা দেখা।
৫. মাথা ঘোরা।
৬. অকারণে অনেক ঘাম হওয়া।
ব্ল্যাকআউটের কারণ কী
১. মস্তিষ্কে অল্প সময়ের জন্য রক্ত চলাচল কমে গেলে হঠাৎ ব্ল্যাকআউট হতে পারে। মেডিকেলের ভাষায় একে বলে সিনকোপাল অ্যাটাক।
২. রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে দুই তৃতীয়াংশ নিচে নেমে গেল এমনটা হতে পারে।
৩. রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে গেলে এমনটা হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া। সাধারণত ডায়াবেটিসের রোগীরা দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে বা অতিরিক্ত ডোজ ইনসুলিন বা ওষুধ নিলে এমন হতে পারে।
৪. যাঁদের খিঁচুনি রোগ বা এপিলেপসি আছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও হতে পারে।
৫. রক্তে খারাপ চর্বি যেমন কোলেস্টেরল, এলডিএল, ট্রাইগ্লিসারয়েডের পরিমাণ বেড়ে গেলে, রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে এই সমস্যা হতে পারে।
৬. অতিরিক্ত মদ্যপান বা ধূমপানের কারণেও হতে পারে।
৭. কর্মক্ষেত্রে বা পারিবারিকভাবে চাপ (স্ট্রেস) বেশি হলেও এমন হওয়ার আশঙ্কা অনেক।
৮. কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও এমন হতে পারে।
ব্ল্যাকআউট প্রতিরোধে কী করবেন
১. কর্মক্ষেত্র এবং পারিবারিক জীবন স্ট্রেসমুক্ত রাখার চেষ্টা করা, প্রয়োজনে কাজের চাপ সবার মধ্যে ভাগ করে নেওয়া।
২. সারা দিন টানা কাজ না করে মাঝেমধ্যে বিরতি নেওয়া।
৩. নিয়মমাফিক রুটিন মেনে চলা। যেমন পড়াশোনার রুটিন, কাজের রুটিন, খাওয়াদাওয়ার রুটিন ঠিক রাখা।
৪. সব নেশাজাতীয় বদভ্যাস থেকে দূরে থাকা।
৫. সারা দিনে একান্ত নিজের জন্য কিছুটা সময় রাখা। যখন চাইলে আপনি যোগব্যায়াম, মেডিটেশন করতে পারেন।
৬. ডায়বেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে প্রতিবার ইনসুলিন নেওয়ার পূর্বে ব্লাড সুগার চেক করে নেওয়া।
আর যদি একবারও এমন ব্ল্যাকআউট হয়, তাহলে অতি দ্রুত একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কিছু হয়নি ভেবে ছেড়ে দেওয়াটা হতে পারে আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। কারণ, এটি হতে পারে কোনো গুরুতর রোগের পূর্বলক্ষণ।
ডা. হিমেল বিশ্বাস, রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার, নিউরোমেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা