কেন দরকার ভিটামিন বি১২
দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ছয়টি উপকরণের অন্যতম ভিটামিন। ভিটামিনেরও আছে রকমফের। কেবল শাকসবজি, ফলমূলেই ভিটামিন সীমাবদ্ধ নয়, কিছু ভিটামিন প্রাণিজ উৎসেও পাওয়া যায়। তেমনই একটি ভিটামিন বি ১২।
ভিটামিন বি ১২–এর অভাবে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা, মাথা ঘোরা, দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতাসহ নানা কিছু হতে পারে। হতে পারে পাকস্থলীর সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য। কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ শরীর ঝিনঝিন, অবশ লাগা কিংবা বৈদ্যুতিক শকের মতো বোধ করার জন্যও দায়ী হতে পারে ভিটামিন বি ১২–এর ঘাটতি। দৃষ্টি ঘোলাটে লাগতে পারে, একটি জিনিসকে মনে হতে পারে দুটি। চুল সাদাটে হওয়া বা পড়ে যাওয়া, নখের স্বাভাবিক রং হারানো এবং ত্বকের নানা সমস্যাও দেখা দেয়। দীর্ঘদিন ভিটামিন বি ১২–এর ঘাটতি থাকলে স্নায়বিক কারণে হাঁটাচলা এবং ভারসাম্য রাখায়ও অসুবিধা হতে পারে।
আমাদের ধারণা, রক্তশূন্যতা মানেই আয়রনের অভাব। কিন্তু ভিটামিন বি ১২–এর অভাবে হওয়া রক্তশূন্যতার কথা হয়তো অনেকেরই অজানা। রক্তশূন্যতায় রোগী ম্লান হয়ে যেতে থাকেন, দুর্বল হয়ে পড়েন। অল্প শ্রমেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন, হাঁপিয়ে ওঠেন। বুক ধড়ফড়ও করতে পারে।
ঝুঁকিতে আছেন কারা?
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকি বাড়ে। অনেকে প্রায়ই গ্যাসের ওষুধ সেবন করেন, তাতে কিন্তু ভিটামিন বি ১২–এর ঘাটতি হতে পারে। নিরামিষাশী ব্যক্তির ভিটামিন বি ১২–এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি সেবনকারী নারীও আছেন এই ঝুঁকিতে। মদ্যপানে ভিটামিন বি ১২ ঘাটতির ঝুঁকি বাড়ে। পাকস্থলী ও অন্ত্রের কিছু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভিটামিন বি ১২–এর ঘাটতি হয়।
কী করবেন
চাই সুষম খাদ্যাভ্যাস। প্রাণিজ উপাদান যেমন মাংস, কলিজা, কিডনি, দুধ, ডিমে আছে ভিটামিন বি ১২। খোলসযুক্ত প্রাণী (পানির জীব) আর সামুদ্রিক মাছ (স্যামন, সারডিন) খেলেও ভিটামিন বি ১২ পাওয়া যায়। তবে মাংসই হচ্ছে ভিটামিন বি ১২–এর সবচেয়ে ভালো উৎস। কেউ যদি এসব উপাদানের কোনোটি একেবারেই গ্রহণ না করেন, তাঁর প্রয়োজন ফরটিফায়েড খাবার (উদ্ভিজ্জ খাবারে আলাদাভাবে যোগ করা হয় ভিটামিন বি-১২)।
মনে রাখুন
বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা প্রতিদিন পর্যাপ্ত ভিটামিন বি ১২ গ্রহণ করছেন কি না, খেয়াল রাখুন। গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের জন্য কিন্তু ভিটামিন বি ১২–এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
*ডা. আফসানা বেগম: সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল, ঢাকা