পায়ুপথের একটি রোগ হচ্ছে ফিস্টুলা। এ সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। কেউ মনে করেন এমনিতেই সেরে যাবে, কেউ লজ্জায় চুপচাপ থাকেন, কেউ আবার বিজ্ঞাপন দেখে নানা ধরনের অপচিকিৎসা গ্রহণ করে থাকেন। যখন সমস্যা জটিল হয়ে যায়
বা বারবার পুনরাবৃত্তি হয় তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
লক্ষণ কী কী
ফিস্টুলায় মলদ্বারের পাশে ছোট ছিদ্র তৈরি হয়, যা দিয়ে পুঁজ-পানির মতো বের হতে থাকে। মাঝেমধ্যে ছিদ্র বন্ধ হয়ে পুঁজ জমা হয়, তখন একটু ব্যথা করে। আবার পুঁজ-পানি বের হয়ে গেলে ব্যথা কমে যায়। অনেক সময় রোগীরা বলেন, মলদ্বারের পাশে ছোট্ট একটি গুটির মতো হয়েছে। সেটি চুলকায় এবং কষের মতো বের হয়। এই হচ্ছে ফিস্টুলার লক্ষণ। পায়ুপথের পাশে কারও যদি হঠাৎ ফোড়া হয় এবং ফোড়া ফেটে যায় কিংবা অস্ত্রোপচার করে ফোড়া থেকে পুঁজ বের করা হয়, তারপরও কিন্তু ফিস্টুলা হতে পারে।
কেন হয় ও করণীয়
অধিকাংশ সময় ফিস্টুলা সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। প্রায় ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায়। ফুসফুসে যেমন টিবি হয়, তেমনি মলদ্বারেও কিন্তু টিবি হতে পারে বা ক্রনস ডিজিজ হতে পারে। সেটির জটিলতা থেকে ফিস্টুলা হয়। কখনো কখনো ক্যানসারের জন্যও ফিস্টুলা হতে পারে।
অনেকের ভুল ধারণা আছে, ফিস্টুলা অস্ত্রোপচারে পুরোপুরি সারে না। অস্ত্রোপচার করলে ফিস্টুলা বারবার হয়। ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। ফিস্টুলা অস্ত্রোপচারে সফলতার হার ৯৫ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ অধিকাংশ রোগী একেবারেই ভালো হয়ে যান। তবে জটিল ফিস্টুলার একাধিক ধাপে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতি
মলদ্বারের অন্যান্য রোগ যেমন অ্যানালফিশার, পাইলস ইত্যাদি ওষুধ বা খাদ্যাভাস পরিবর্তনের মাধ্যমে ভালো হলেও ফিস্টুলার ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার আবশ্যিক। অস্ত্রোপচার না করলে এটি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
ফিস্টুলার জন্য আজকাল আধুনিক অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা আছে। যেমন লেজারের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার। ফিস্টুলা সম্পূর্ণভাবে না কেটে, বড় কাটা-ছেঁড়া ছাড়াই লিফট টেকনিকের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করা হয়। কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে ফিস্টুলা প্লাগের ব্যবহার, ফিব্রিন গ্লুর ব্যবহার এবং ফিস্টুলোটমি করা হয়ে থাকে।
যাঁদের জটিল ফিস্টুলা বা একাধিবার অস্ত্রোপচারেও ভালো হচ্ছে না, তাঁদেরও ভয়ের কিছু নেই। তবে উচিত সঠিক সময়ে এই বিষয়ে অভিজ্ঞ কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
ফিস্টুলা হলেই যে বারবার অস্ত্রোপচার করতে হবে এমন নয়। আপনি যদি সঠিক চিকিৎসা পান, এটি থেকে অবশ্যই পরিত্রাণ পাবেন।
ডা. মো. নাজমুল হক মাসুম, জেনারেল ও কলোরেক্টাল সার্জন, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল