আমি তো ঘরের অনেক কাজ করি, তবুও ব্যায়াম করতে হবে?

ঘরের কাজ বা গৃহস্থালির কাজ কি ব্যায়ামের বিকল্প হিসেবে কাজ করে?
মডেল: লোপা, ছবি: প্রথম আলো

কথাটা অনেকেই বলে থাকেন। আসলেই ঘরের কাজ বা গৃহস্থালির কাজ কি ব্যায়ামের বিকল্প হিসেবে কাজ করে? যাঁরা বাড়িতে কাজ করেন, তাঁদের কি তাহলে হাঁটা বা আলাদা ব্যায়ামের দরকার নেই?

সত্যি বলতে কী ঘরের কাজকর্ম, যেমন বাসনকোসন ধোয়া, ঘর ঝাঁট দেওয়া বা মোছা কিংবা কাপড় ধোয়ার মতো কাজ ক্যালরি ক্ষয় করে বটে; কিন্তু তা কখনোই ব্যায়াম বা জগিংয়ের বিকল্প নয়। একে এক্সারসাইজ না বলে আপনি বলতে পারেন অ্যাকটিভিটি, মানে সচল থাকা। সুস্থ থাকার জন্য বিশেষ করে ওজনাধিক্য, ডায়াবেটিস বা উচ্চ কোলেস্টেরলের রোগীদের জন্য সচল থাকাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য যত বেশি নিজের হাতে কাজ করবেন, লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করবেন, হেঁটে গিয়ে বাজার করবেন বা নিজে বাগানে পানি দেবেন, তত বেশি উপকার পাবেন। স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য দৈনন্দিন কায়িক পরিশ্রমের হার বাড়াতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। প্রতিদিনের ঘরের কাজ আপনাকে শারীরিকভাবে সচল রাখবে। কিন্তু তাই বলে তা ব্যায়াম বা হাঁটার উপকার পুরোপুরি এনে দেবে না।

প্রতিদিনের ঘরের কাজ আপনাকে শারীরিকভাবে সচল রাখবে
ছবি: প্রথম আলো

ওজন ঠিক রাখা, রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরল কমানো, হার্ট অ্যাটাক ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মানের অ্যারোবিক ব্যায়ামের কথা বলা হয়। অ্যারোবিক ব্যায়াম হলো যে ব্যায়ামে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কাজ বাড়ে, শরীরে অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়। দ্রুত হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো, সাঁতার, অ্যারোবিকস ইত্যাদি অ্যারোবিক ব্যায়ামের উদাহরণ। অ্যারোবিক ব্যায়ামের শেষে আপনাকে টার্গেট হার্ট রেট বা কাঙ্ক্ষিত হৃৎস্পন্দনের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে হবে। আপনার লক্ষ্যমাত্রা হলো আপনার সর্বোচ্চ হৃৎস্পন্দনের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ। ২২০ থেকে আপনার বয়স বিয়োগ করলে আপনার সর্বোচ্চ হৃৎস্পন্দন পেয়ে যাবেন। যেমন আপনার বয়স যদি হয় ৪৫ বছর, তবে আপনার সর্বোচ্চ হার্ট রেট হলো ২২০-৪৫ = ১৭৫ প্রতি মিনিটে। অ্যারোবিক ব্যায়ামে আপনাকে এই সর্বোচ্চ হার্ট রেটের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ অর্জন করতে হবে, মানে প্রতি মিনিটে ১২০-এর কাছাকাছি। তবেই আপনি কাঙ্ক্ষিত উপকার পাবেন। এবার ভেবে দেখুন, গৃহস্থালির কোনো কাজে কি আপনি এমন মাত্রার হৃৎস্পন্দন আশা করেন?

আবার আমরা ভাবি যে ঘরের কঠিন কাজ করা মানে অনেকখানি ক্যালরি ক্ষয় করা। কিন্তু আদতে আপনি যদি ৩০ মিনিট ঘর মোছা বা ঝাঁট দেন, তবে এতে ১৩০ ক্যালরি ক্ষয় হয়। কিন্তু আপনি যদি ৩০ মিনিট সাইক্লিং করেন, তবে ৪০০ ক্যালরি ক্ষয় করতে পারবেন। স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে, গৃহস্থালি কাজ আর ব্যায়াম এক নয়। তবে কোনো কোনো কাজ, যেমন বাগানে ৩০ মিনিট ঘাস পরিষ্কার করা বা নিড়ানি দেওয়া ৩০ মিনিট জগিংয়ের সমপরিমাণ ক্যালরি ক্ষয় করতে পারে। কিন্তু এতটা কায়িক শ্রম কি আমরা দৈনন্দিন জীবনে করি?

বর্তমানে আমাদের গৃহস্থালি কাজকর্মও অনেকটাই প্রযুক্তি বা যন্ত্রনির্ভর। কাপড় ধোয়ার জন্য ওয়াশিং মেশিন, বাসন পরিষ্কারের জন্য ডিশ ওয়াশার বা মসলা পেষার জন্য ব্লেন্ডারের মতো যন্ত্রের ওপর আমরা নির্ভরশীল। তাই কমে এসেছে ঘরের কায়িক শ্রমও। রিকশা, গাড়ি, লিফট আমাদের কায়িক শ্রম আরও কমিয়েছে। তাই শহরে বাড়ছে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগের মতো সমস্যা। তাই বিজ্ঞানীরা বলেন, নিয়মিত কাজকর্ম করার মাধ্যমে সচল থাকাটা যেমন জরুরি, তেমনই সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করাও জরুরি। কেউ চাইলে সপ্তাহে ৭৫ মিনিট ভারী ব্যায়াম বা জিম করতে পারেন। অ্যাকটিভিটি ও এক্সারসাইজ—দুয়ের সমন্বয়ই সবচেয়ে ভালো।