নবজাতকের থাইরয়েড সমস্যা বলতে মূলত ‘কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম’ বা থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিকেই বোঝানো হয়। যদিও অল্প কিছু ক্ষেত্রে নবজাতকের হাইপারথাইরয়েডিজমও হতে পারে, যাকে ‘নিওনাটাল থাইরোটক্সিকসিস’ বলা হয়।
থাইরয়েড হরমোন শরীরের থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান, যার অভাব হলে শিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হতে পারে। পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা করেও আর লাভ হয় না।
মাতৃগর্ভে থাকতেই শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য এই হরমোন দরকার, তাই প্রত্যেক গর্ভবতী মায়ের থাইরয়েড সমস্যা আছে কি না, তা জানা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা করা আবশ্যক। কারণ, ‘কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম’ সময়মতো শনাক্ত হলে চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
কাদের পরীক্ষা জরুরি
উন্নত দেশে সব শিশুকে বাধ্যতামূলকভাবে থাইরয়েড পরীক্ষা করা হয়। কারণ, থাইরয়েডের অভাবজনিত সমস্যার লক্ষণ প্রকাশ পেতে সময় লাগে। আর যখন লক্ষণ দেখা যায়, তত দিনে শিশুর বুদ্ধিমত্তা অনেক কমে যায়। আমাদের দেশে যেখানে সবার পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না, সে ক্ষেত্রে যারা বিশেষ ঝুঁকিতে আছে, তাদের পরীক্ষা করা অতি জরুরি। যেমন—
মা যদি কোনো থাইরয়েড সমস্যার ওষুধ খান বা আয়োডিনের অভাব থাকে।
পরিবারের কারও জন্মগত থাইরয়েড সমস্যা থাকলে। জন্মের পর নবজাতক দেরিতে কালো পায়খানা করলে। শিশুর জন্ডিস ২ সপ্তাহের বেশি দীর্ঘায়িত হলে।
শিশুর ডাউন সিনড্রোম এবং শিশুর মধ্যে থাইরয়েড সমস্যার কোনো উপসর্গ দেখা গেলে।
কখন পরীক্ষা
বিভিন্ন গাইডলাইন অনুযায়ী, জন্মের সঙ্গে সঙ্গে সব শিশুর কর্ড ব্লাড বা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রক্তে টিএসএইচ পরীক্ষা করে স্ক্রিনিং করতে হবে। এ ছাড়া স্বল্প ওজন ও অতি অসুস্থ নবজাতকের ক্ষেত্রে সাত দিনের মাথায় বা কিছুটা সুস্থ হলে পুনরায় পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে।
তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ঝুঁকিতে থাকা নবজাতকের থাইরয়েড সমস্যা নির্ণয়ের জন্য তিন-চার দিনের সময় এফটিফোর ও টিএসএইচ পরীক্ষা করাই উত্তম। এ ছাড়া যেকোনো শিশুর মধ্যে থাইরয়েড সমস্যার কোনো উপসর্গ দেখা গেলে তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষা করা বাঞ্ছনীয়।
চিকিৎসা
কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম রোগ নির্ণীত হলে দেরি না করে দ্রুত লিভোথাইরক্সিন খাওয়াতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সারা জীবন ওষুধ চালিয়ে যেতে হয়। ওষুধের মাত্রা রোগীভেদে ভিন্ন, তবে প্রাথমিকভাবে ১ মাস বয়স পর্যন্ত প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১০-১৫ মাইক্রোগ্রাম হিসেবে শুরু করা যেতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজনে আরও পরীক্ষা করে সঠিক কারণ নির্ণয় করবেন এবং নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে পরীক্ষা করে ওষুধের মাত্রা ঠিক করবেন। মনে রাখতে হবে, যেকোনো ওষুধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, তাই অবশ্যই নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
ডা. রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোন রোগবিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল