কৈশোরে শরীর দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ঘটতে থাকে শরীরের কাঠামোগত পরিবর্তন। মেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধি দ্রুত হয় ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে; আর ছেলেদের ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সে। এ সময় শরীরে গ্রোথ হরমোন বেশি তৈরি হয়, যা দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধির নিয়ামক। এর সঙ্গে সেক্স হরমোনের বৃদ্ধি হয়, যা কিছু হরমোনজনিত ও শারীরিক বৃদ্ধির পেছনে কাজ করে। এ সময়ে দেহের চাহিদামতো পুষ্টিকর ও সুষম খাবার না পেলে দৈহিক বৃদ্ধি যথাযথ হয় না।
কৈশোরে শিশু তার মোট উচ্চতার ১০-২০ শতাংশ ও মোট ওজনের ২৫-৫০ শতাংশ প্রাপ্ত হয়। এ জন্য এ সময়কার পুষ্টির ওপর নির্ভর করে তাদের শারীরিক উচ্চতা ও ওজন বৃদ্ধি। এ ছাড়া পরবর্তী জীবনে নারীর গর্ভ ও প্রসবকালীন ঝুঁকি এবং কম ওজনের শিশু জন্মদান রোধে কিশোরীর পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ।
কৈশোরে অপুষ্টিজনিত সমস্যা
শক্তি বা এনার্জির অভাব।
অণুপুষ্টির অভাব, যেমন আয়রন বা লৌহের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতা।
খাদ্যাভ্যাসে সমস্যা—স্থূলকায় শরীর, হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা, অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা।
অল্প বয়সে গর্ভধারণ।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ।
লৌহের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতার কারণ
স্বল্প আহার।
নানা ধরনের সংক্রমণ; যেমন ম্যালেরিয়া, গুঁড়া কৃমির সংক্রমণ।
অতিরিক্ত রক্তস্রাব।
অতিরিক্ত বা দীর্ঘকালীন পরিশ্রম।
রক্তস্বল্পতার পরিণতি
শারীরিক পরিশ্রমের সক্ষমতা হ্রাস পাওয়া।
বোধশক্তির ঘাটতি।
গর্ভধারণে ঝুঁকি।
বিকাশ-বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া।
মেধাবিকাশে পিছিয়ে পড়া।
কৈশোরে অপুষ্টি রোধে করণীয়
সুষম খাদ্য গ্রহণ। সুষম খাদ্যে সব কটি উপাদান থাকতে হবে। খেতে হবে শর্করাজাতীয় খাবার; যেমন ভাত, রুটি, মুড়ি, গুড়, মধু, আলু, চিড়া।
আমিষজাতীয় খাবার; যেমন ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, ডাল, বাদাম, বিচি। আয়রনসমৃদ্ধ খাবার; যেমন মাংস, কলিজা ও গাঢ় সবুজ শাকসবজি। ভিটামিন এ-সমৃদ্ধ খাবার; যেমন কলিজা, পাকা পেঁপে, আম, গাজর, মিষ্টিকুমড়া, ছোট মাছ, ডিম, সবুজ শাকসবজি ও হলুদ রঙের ফলমূল। ভিটামিন সি–যুক্ত, আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার (সামুদ্রিক মাছ ও সমুদ্রতীরবর্তী এলাকার শাকসবজি) ও আয়োডিনযুক্ত লবণ গ্রহণ জরুরি।
প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান এবং গরমকালে বেশি পানি পান করা।
চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন, ফলিক অ্যাসিড বড়ি সেবন।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ছয় মাস অন্তর কৃমিনাশক বড়ি খাওয়ানো।
খাওয়ার আগে-পরে সাবান ও পরিষ্কার পানিতে হাত ধোয়ার অভ্যাস।
স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। খালি পায়ে টয়লেটে না যাওয়া।
ঋতুস্রাবের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা। এ সময় সুষম খাদ্য গ্রহণ ও সব ধরনের স্বাভাবিক কাজকর্ম করা।
অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল