নখ একটুতেই ভেঙে ভেঙে পড়ছে? জেনে নিন করণীয়
সুস্থ স্বাভাবিক নখ সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। ত্বক যেমন কেরাটিন দিয়ে তৈরি, নখেও থাকে শক্ত কেরাটিন। স্বাভাবিক নখ হালকা গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। স্বাভাবিক নখে কোনো গর্ত, দাগ হয় না, সেটি হয় মসৃণ। অনেক সময় দেখা যায় নখ ভঙ্গুর হয়ে যায়। অল্পতেই ভেঙে ভেঙে আসে।
ভঙ্গুর নখ বলতে শুষ্ক, ভঙ্গুরপ্রবণ নখকে বোঝায়। নখ যদি হঠাৎ ভঙ্গুর হয়ে যায়, তাহলে হতে পারে সেটি কোনো সমস্যার লক্ষণ।
নখ ভঙ্গুর হওয়ার কারণ
পুষ্টির ঘাটতি
প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব (যেমন বায়োটিন, ভিটামিন এ, সি, ডি)।
খনিজ পদার্থের ঘাটতি (যেমন ক্যালসিয়াম, জিংক)।
আয়রনের অভাব। তীব্র আয়রনের অভাবে নখের মাঝখানে দেবে গিয়ে আকৃতি পাল্টে যেতে পারে।
সামগ্রিক পুষ্টিহীনতা।
অত্যধিক আর্দ্রতা
অতিরিক্ত পরিমাণে পানি দিয়ে কাজ করা অথবা যাঁদের বারবার পানিতে হাত ভেজাতে হয়। যেমন বাসন ধোয়া, কাপড় কাচা।
বয়স ও হরমোনের পরিবর্তন
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নখে আর্দ্রতা ও তেলের পরিমাণ হ্রাস পায়, যাতে করে নখ হয় ভঙ্গুর।
বিশেষ করে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে নখ।
রোগবালাই
থাইরয়েডের সমস্যা।
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।
দীর্ঘমেয়াদি কিডনি জটিলতা।
ত্বকের সমস্যা (সোরিয়াসিস, একজিমা)।
ছত্রাকের সংক্রমণ।
উচ্চমাত্রার ওষুধ খেলে (যেমন কেমোথেরাপি)।
জীবনযাত্রার ধরন
অতিমাত্রায় প্রসাধনী ব্যবহারে নখের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়।
এসিটোনসমৃদ্ধ প্রসাধনীর (যেমন নেইলপলিশ রিমুভার) মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার।
দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানো।
দীর্ঘমেয়াদি কৃত্রিম নখ এবং জেল ম্যানিকিওরের ব্যবহার।
পরিবেশগত কারণ
রাসায়নিক দ্রব্যাদি (যেমন ক্লোরিন–জাতীয় তরল, ব্লিচিং পাউডার) নখের ক্ষতি করে
অতিরিক্ত ঠান্ডা, শুষ্ক আবহাওয়া।
অতিরিক্ত তাপ বা সূর্যের এক্সপোজার।
নখ ভালো রাখতে করণীয়:
পুষ্টি
ভিটামিন এবং খনিজসমৃদ্ধ পুষ্টিকর সুষম খাদ্য প্রতিদিন গ্রহণ করুন।
মৌসুমি শাকসবজি, ফলমূল নিয়মিত গ্রহণ করুন।
নিয়মিত পানি পানের দিকে নজর দিন। নখের নমনীয়তা বজায় রাখতে সঠিক হাইড্রেশন অপরিহার্য।
খাদ্যতালিকায় রাখুন পরিমিত আমিষ, যা কেরাটিন তৈরি করে নখ এবং ত্বককে শক্ত করে।
বায়োটিন এবং ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিডের সাপ্লিমেন্ট নিয়মিত নিন।
দুধ, ডিম, পনির, সামুদ্রিক মাছ আর সূর্যের তাপে থাকে ভিটামিন ডি। রক্তে ভিটামিন ডির অভাবে নখ, চুল, হাড়, দাঁত দুর্বল হয়ে যায়। তাই নিয়ম করে রোদে থাকতে হবে।
নখের যত্ন
রাসায়নিকযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার কিংবা অত্যধিক ফাইলিং এড়িয়ে চলুন।
দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানো অভ্যাস থাকলে পরিহার করুন।
কৃত্রিম নখের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার পরিহার করুন।
পুরোনো নেলপলিশ খুটে তুলবেন না।
নখ দিয়ে টিনের বা বোতলের মুখ খোলা বা ধারালো জিনিস ঘষা ঠিক নয়।
নখ এবং ত্বকে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে মসৃণ রাখুন।
ভেঙে যাওয়া এড়াতে নিয়মিত ট্রিম করুন।
প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা
রাসায়নিক ব্যবহার বা থালাবাসন ধোয়ার সময় গ্লাভস পরিধান করুন।
কঠোর ডিটারজেন্টের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
পরামর্শ
ভঙ্গুর নখ থাকলে একজন চর্মরোগ বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা–নিরীক্ষা করিয়ে কোনো দীর্ঘমেয়াদি অসুখে ভুগছেন কি না, নিশ্চিত হয়ে নিন।
ডায়বেটিস, থাইরয়েড, ত্বক, কিডনি সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসা করুন এবং নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
ডা. নওসাবাহ্ নূর: সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন, পপুলার মেডিকেল কলেজ, ঢাকা