ইদানীং নতুন ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে, নতুন মহামারি হতে যাচ্ছে এটি। ভাইরাসটির নাম এইচএমপিভি বা হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস। আসলেই কি এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু আছে, আসুন জেনে নেওয়া যাক:
নতুন ভাইরাস
নতুন মহামারি বলে প্রচার করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি মোটেও নতুন আবিষ্কৃত ভাইরাস নয়। এটি নিউমোভ্যারিডি গোত্রের ভাইরাস, অনেকটা রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাসের মতো; যা শিশুদের আকছারই হয়। ৫০ বছর ধরেই এ ভাইরাস মানুষকে আক্রমণ করে আসছে। এর শিকার মূলত শিশুরা। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের শিকার শিশুদের প্রতি ১০ জনের একজন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। বেশির ভাগ শিশু বয়স ৬ বছর হওয়ার আগেই এ ভাইরাসে একবার আক্রান্ত হয়।
বেশি ঝুঁকিতে কারা
এইচএমপিভি মূলত শিশুদের হয়ে থাকলেও কেউ কেউ বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। যেমন নবজাতক, ৫ বছর বয়সের নিচের শিশু, ৬৫-ঊর্ধ্ব ব্যক্তি যাঁদের হাঁপানি, ক্রনিক ব্রংকাইটিস ইত্যাদি রোগ আছে, যাঁরা স্টেরয়েড গ্রহণ করেন বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল এমন রোগী।
কখন, কীভাবে ছড়ায়
ফ্লুর মতোই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ড্রপলেট দিয়ে ছড়ায় এ ভাইরাস।
আক্রান্ত ব্যক্তির হাত বা স্পর্শ লেগেছে এমন বস্তু থেকে, হ্যান্ডশেক বা ব্যবহৃত দ্রব্য ব্যবহারের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
এটি মৌসুমি ভাইরাস। সাধারণত শীতের শুরু থেকে বসন্ত পর্যন্ত ছড়ায় বেশি।
উপসর্গ
আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার তিন থেকে ছয় দিনের মাথায় উপসর্গ দেখা দেয়। উপসর্গ সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ও তেমন গুরুতর নয়, যেমন কাশি, নাক বন্ধ হওয়া, সর্দি, জ্বর, গলাব্যথা, কারও ক্ষেত্রে এর সঙ্গে বমি, অরুচি বা ডায়রিয়া হতে পারে। আর দশটা ভাইরাস জ্বরের মতো ৫-৭ দিনের মাথায় নিজে নিজেই সেরে যায়, যদি না কোনো জটিলতা দেখা দেয়।
জটিলতা
যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাঁদের অন্যান্য সংক্রমণ বা জটিলতা হতে পারে। সবচেয়ে বেশি হয় মধ্যকর্ণের সংক্রমণ। হাঁপানি রোগীর শ্বাসকষ্ট বাড়তে পারে। শিশুদের নিউমোনিয়া বা ব্রংকিওলাইটিস হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
করণীয়
সর্দি-কাশি, জ্বর যদি এইচএমপিভি দিয়েও হয়ে থাকে, তবু আতঙ্কের কিছু নেই। আলাদা করে টেস্টের এখনো প্রয়োজনীয়তা নেই। অন্য সব ভাইরাস জ্বরের মতো প্যারাসিটামল, নাক বন্ধ হলে ডিকনজেসটেন্ট, স্টেরয়েড ড্রপ, বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবারই সেরে ওঠার জন্য যথেষ্ট।
হাঁপানি বাড়লে চিকিৎসকের পরামর্শে ইনহেলারের মাত্রা বৃদ্ধি বা নেবুলাইজেশন লাগতে পারে। জ্বর ও অসুস্থতা বাড়তে থাকলে বা দুই সপ্তাহ দীর্ঘায়িত হলে বা শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।
সতর্ক থাকুন
এইচএমপিভি নিয়ে গুজব ও আতঙ্ক বাড়ছে। গবেষণা বলছে, কোভিডকালের পর সারা বিশ্বে এটিসহ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের হার বেড়েছে। তাই রোগ প্রতিরোধে নজর দিতে হবে। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। ভিড়ের মধ্যে মাস্ক পরা ভালো। বাইরে থেকে এসে ও রোগী পরিচর্যার পর ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। সর্দি-জ্বরের রোগী থেকে শিশু ও হাঁপানি রোগীদের দূরে রাখতে হবে।
এ বি এম আবদুল্লাহ, প্রফেসর ইমেরিটাস, বিএসএমএমইউ