যাঁরা টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের গাড়ি চালনার অনুমতি (ড্রাইভিং লাইসেন্স) দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বের অনেক দেশেই বিধিনিষেধ রয়েছে। এমনকি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের কারণে যাঁদের ইনসুলিন নিতে হয়, তাঁদের ক্ষেত্রেও কড়া নিয়ম রয়েছে। কারণ, যাঁদের ইনসুলিন নিতে হয়, তাঁদের অনেকেই ইনসুলিনসংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারেন।
যেসব জটিলতা হতে পারে
ইনসুলিনসংক্রান্ত জটিলতার একটি হাইপোগ্লাইসেমিয়া। এটা এমন এক অবস্থা, যখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৩ দশমিক ৯ মিলিমোল/লিটারের নিচে নেমে যায়। এতে রোগীর ধুকপুকুনি শুরু হয়, হাত–পা কাঁপতে থাকে, ঘাম বেড়ে যায়, মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরানো শুরু হয়। মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে ওঠে। মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা না নিলে রোগীর জ্ঞান লোপ পেতে পারে। একে বলা হয় হাইপোগ্লাইসেমিক শক।
যাঁদের ইনসুলিন নিতে হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে এ রকম ঘটতে পারে, বিশেষ করে খাবার খেতে দেরি হলে। এমন হলে তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে গ্লুকোজ খাওয়াতে হবে। এতে ধীরে ধীরে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার দশা কাটতে থাকবে। একজন চালক যদি গাড়ি চালানোর সময় এমন পরিস্থিতিতে পড়েন, তবে কী হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
এ ছাড়া ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টিশক্তিরও সমস্যা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগলে স্নায়ুতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এতে পায়ের অনুভূতিশক্তি হ্রাস পায়। স্নায়বিক ব্যথা হয়। এতে প্যাডেলে পা রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।
যেসব বিষয়ে নজর দিতে হবে
যাঁরা টাইপ-১ ডায়াবেটিস নিয়ে গাড়ি চালাবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে অবশ্যই নজরে রাখতে হবে। দূরপাল্লার বা ভারী গাড়ি চালানোর আগে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অবশ্যই জেনে নিতে হবে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৫ মিলিমোল/লিটারের ওপরে থাকলে গাড়ি চালানো যাবে।
নিয়মিত গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করার জন্য গাড়িতেই প্রয়োজনীয় গ্লুকোমিটার রাখতে হবে। গাড়িতে হালকা শর্করাজাতীয় খাবার ও যথেষ্ট পরিমাণে পানীয় মজুত রাখতে হবে। দুই ঘণ্টা নিয়মিত বিরতিতে গাড়ি থামিয়ে হালকা নাশতা খেতে হবে।
কেউ যদি হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ অনুভব করেন, তবে অবশ্যই নিরাপদ স্থানে গাড়ি থামিয়ে নেবেন। রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করবেন। ১৫ গ্রামের মতো গ্লুকোজ, মধু, চকলেট বা চিনির শরবত খেতে হবে। ফলের রস ১৫০ থেকে ২০০ এমএল, সমপরিমাণ কোমল পানীয় অথবা অন্য যেকোনো দ্রুত কার্যকরী শর্করা খেতে হবে।
১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষার পর আবার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখুন। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা তখনো নিচের দিকে থাকলে আবারও কার্বোহাইড্রেট নিন এবং ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। রক্ত গ্লুকোজের মাত্রা পাঁচের ওপরে গেলে হালকা খাবার (স্ন্যাকস) গ্রহণ করুন।
সুস্থ হওয়ার অন্তত ৪৫ মিনিট পরে আবার গাড়ি চালাতে শুরু করবেন।
ডায়াবেটিস থাকলে বছরে অন্তত এক বা দুবার চোখ পরীক্ষা করাবেন।